প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেল, সারা দেশ সম্পূর্ণ লক-ডাউনে আছে। বেঁচে থাকার জন্য আমরা যারা দিন মজুরি করি, লকডাউনে তাদের উপার্জনও সম্পূর্ণ বন্ধ (লকড) হয়ে গেছে। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে খাবার বা অন্যান্য অপরিহার্য দ্রব্য খরিদ করার সামর্থ্য আর নাই আমাদের। সঞ্চয় যা ছিল তা শেষ। আমাদের খাবার থালা শূন্য এবার। কে তা পূর্ণ করবে? আমাদের ছেলেমেয়েরা না খেয়ে ঘুমোতে যাচ্ছে, কে তাদের খাওয়াবে?
লক-ডাউনের নামে এই ক্ষুধার সাম্রাজ্য আমরা মেনে নেব না। ঘাম ঝড়িয়ে আমরাই যে খাদ্যশস্য উৎপন্ন করেছিলাম তা দেশের খাদ্যভাণ্ডারগুলিতে মজুত আছে। একটা হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আমাদের প্রয়োজনের সাড়ে তিনগুণেরও বেশি খাদ্যশস্য এফসিআই গোডাউনে মজুদ আছে। এখন দেশের শ্রমজীবী জনগণ যখন অনাহারক্লিষ্ট, তখন সেই খাদ্য দেশের মানুষের মাঝে বিতরণ করা হোক।
ট্যাক্স আর ফি হিসেবে আমরা যে অর্থ দিই তা দিয়েই তো ভর্তি করা হয় রাজকোষ। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে গচ্ছিত টাকা চলে যায় পুঁজিপতিদের কাছে। তা হলে আমাদের মজুরি আর ভাতা মেটাতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে খরচ করা হবে না কেন ? সবার জন্য খাবার, সবার জন্য রেশন, সবার মজুরি আর সবার সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত কর।
আমাদের বললে থালা-ঘটি-বাটি বাজাতে, আমাদের ঘটি-বাটি তো এখন চাটি হয়ে গেল। তুমি খুব মন-কি বাত শোনালে, এখন একটু আমাদের ক্ষুধার কাতরতা শোনো। আমাদের খালি ঘটি-বাটি, খালি পেট ভরে দাও। আমাদের ভুখা পেটে অন্ন দাও। আমাদের রেশন দাও। আমাদের মজুরি আর ভাতা দাও।
ক্ষুধার্ত ভারত কোভিড-১৯ মোকাবিলা করবে কীভাবে? বুভুক্ষু মানুষের মুখে অন্ন তুলে দাও, অনাহার আটকাও, তবে না হবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই!
আগামীকাল ১২ এপ্রিল আমরা আমাদের শূন্য থালাবাটি বাজাব, যাতে এই বধির মোদী সরকারের কানে কথাগুলি পৌঁছায়। করোনা মহামারী প্রতিরোধে যেসমস্ত সতর্কতা প্রয়োজন, যেমন পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, অযথা ভিড় না করা ইত্যাদি সতর্কতা অবলম্বন করেই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচী চলবে। কোনো উৎসব পালনের আঙ্গিকে নয়, বেঁচে থাকার যন্ত্রণা তুলে ধরতেই এই প্রতিবাদ।
ধন্যবাদান্তে,
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির
পক্ষে পার্থ ঘোষ
রাজ্য সম্পাদক