চাপের মুখে ৫০,০০০ বসবাসকারীর উচ্ছেদ ঠেকানো গেল হলদোয়ানিতে
eviction of 50,000

নতুন বছরের শুরুতেই উত্তরাখন্ডের হলদোয়ানি হঠাৎ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল। ওইদিন প্রভাতী সংবাদমাধ্যমগুলো বিরাট বিরাট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানাল, উত্তর-পূর্ব রেল ঘোষণা করেছে, হলদোয়ানি রেলস্টেশনের কাছে বনভুলপুরা এলাকার এই জমিতে বসবাসরত প্রায় ৫০,০০০ মানুষকে তাঁদের “অবৈধ” বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। শুধু উচ্ছেদই নয়, এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার যাবতীয় ব্যয় বহন করতে হবে “অবৈধ” বসবাসকারীদের !

এই ঘোষণা বিরাট এলাকা জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। দ্বিপ্রহরের নামাজ পাঠের পর বিশাল সংখ্যক মানুষ, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা, হলদোওয়ানি রেল স্টেশনের চারপাশে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভ দেখাতে। রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই উচ্ছেদ শুরু হবে ৮ জানুয়ারি থেকে।

এক দীর্ঘ ও জটিল আইনি লড়াইয়ের শেষে হাই কোর্ট গত মাসে আদেশ দেয়, সমস্ত “জবর দখলকারীদের” অবিলম্বে উচ্ছদ করতে হবে। ২০১৬-১৭ তে রেল ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে নাকি এক সমীক্ষা চালানো হয়, আর সমীক্ষার শেষে জানানো হয় মোট ৪,৩৬৫টি “জবরদখল বস্তি” রয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, বংশ পরম্পরায় তাঁরা এখানে বসবাস করছেন।

প্রায় ২.২ কিলোমিটার জুড়ে ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি বস্তির পাশাপাশি রয়েছে তিনটি সরকারি স্কুল, ১১টি বেসরকারি স্কুল, দু’টি ইন্টার কলেজ, ১২ টা মাদ্রাসা, ১০ টি মসজিদ, একটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও একটি মন্দির। ১৯৭০ থেকে রয়েছে নিকাশি ব্যবস্থাও। বলাই বাহুল্য, এই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাটির বসবাসকারীদের উচ্ছেদের পেছনে রয়েছে সাম্প্রদায়িক ছক। আর, বলাই বাহুল্য, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রীতিমতো সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানো হচ্ছিল।

প্রশ্ন উঠেছে, গোটা অঞ্চলটাই যদি রেলের হয়, তবে এতোগুলো মসজিদ, সরকারি স্কুল, প্রাইভেট স্কুল (সব মিলিয়ে যেখানে রয়েছে প্রায় ২,৫০০ র বেশি ছাত্র) সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে উঠল কিভাবে? কিভাবেই বা এতোদিন ধরে সেগুলো তাদের কাজ চালিয়ে গেল? এই জমির কিছুটা সরকার লিজে দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন, জমি রেলের হলে সেটি লিজে দেওয়া যায় নাকি? এ ব্যাপারে এখনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

বসবাসকারীরা এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা ঠোকে। ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই উচ্ছেদ বন্ধ রাখতে হবে। ৫০,০০০ মানুষকে রাতারাতি উচ্ছেদ করা যাবে না। এই ঘটনাটাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার উপর সুপ্রিম কোর্টজোর দিয়েছে। আদালত আরও বলেছে, কিভাবে এই বিপুল সংখ্যক মানুষগুলোর পুনর্বাসন দেওয়া যায়, ওই অঞ্চলের নানান স্তর ও পেশার সাথে যুক্ত বাসিন্দাদের অধিকারগুলোকে ও কিভাবে রক্ষা করা যায়, সে সব নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা নিতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে। ফের এই মামলার শুনানি হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।

সরকারি জমিতে বসবাসকারী মানুষ ও রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব আমাদের মতো একটা দেশে দীর্ঘ পুরাতন। রাষ্ট্র চায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে সেই দখলি জমি পুনরুদ্ধার করতে, আর এটাকেই কেন্দ্র করেই চলে সংঘাত ও লড়াই। মূল সমস্যা হল, বিপুল সংখ্যক মানুষকে সরকার আজ পর্যন্ত আবাস, মাথার উপর নিশ্চিত পাকাপোক্ত ছাদ দিতে পারেনি। আশ্রয়ের অধিকার সরকার দেয় না। একান্ত বাধ্য হয়ে গৃহহীন, আশ্রয়চ্যুত মানুষ সরকারি জায়গায় বসবাস করতে থাকেন। দ্বন্দ্বের এই জায়গায়টা সমাধান না হলে বারবার তা মাথা তুলবে। ভারতের আদালতগুলো ও বিভিন্ন সময়ে রায় দিয়েছে যে উচ্ছেদ করার আগে বসবাসরত মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়াটা আবশ্যক।

যাই হোক, শীর্ষ আদালতের রায় অগনিত মানুষকে স্বস্থি দিয়েছে, প্রবল শীতের কামড়ে যারা উচ্ছেদের বিভীষিকায় দিন গুনছিলেন।

খণ্ড-30
সংখ্যা-2