বাম সরকার, বাম কর্মীদের অতি বাম সমর্থকদের গুলি করে মারছে! সম্প্রতি কেরলের বাম গণতান্ত্রিক সরকারের পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘থাণ্ডারবোল্ট’ সংঘর্ষের নামে ৪ জন মাওবাদীকে হত্যা করেছে। এতে সিপিআই(এম) পরিচালিত বাম গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে পার্টি নেতৃত্বের তরফে অস্বাভাবিক কিছু লাগেনি। গোল বেধেছে অন্যত্র। দলেরই সমর্থক দুই ছাত্রের মাওবাদীদের পক্ষে কোঝিকোড়ে প্রচার করার অভিযোগে পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে সরকার তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। পরন্তু বিতর্ক বেধেছে বাম গণতান্ত্রিক সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (আন ল ফুল অ্যাক্টিভিটিস প্রোটেক্টশন অ্যাক্ট) ধারা আরোপ করায়। সমস্যা হল বামপন্থীরা সরকারে থাকলে তাঁদের আচরণ বুর্জোয়া রাষ্ট্রের মতোই হয়ে যায়।
প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার, বিশেষ করে মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন যে কোনো ধরনের বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য কালাকানুনগুলিকে (ইউএপিএ সহ অন্যান্য) আরও ভয়ঙ্কর রূপ দিচ্ছেন ‘বাম গণতান্ত্রিক সরকার’ সেই কালা আইন কেরলের মতো দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যশালী বাম রাজ্যে কেন তা প্রয়োগ করছেন? এতে কি কেন্দ্রের কালা পদক্ষেপকেই বৈধতা দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না? একথা ভুললে চলবে না যে পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকার আসার আগে বামফ্রন্ট সরকার মাওবাদীদের শায়েস্তা করার নামে এরাজ্যে বেশকিছু মাওবাদী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের এমনকি গণতান্ত্রিক ব্যক্তিকেও ইউএপিএ ধারায় গ্রেপ্তার করেছিল। ছত্রধর মাহাতো সহ সেই সব নেতা কর্মীরা আজও মমতার আমলে জেলে বন্দী হয়ে আছেন, কয়েকজন জেলে বন্দী অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে মারাও গিয়েছেন। এঁরা হলেন সুদীপ চোংদার ও স্বপন দাশগুপ্ত।
কেরলের ঘটনায় দলের শীর্ষনেতৃত্ব পিনরাই বিজয়নের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তিনি এতদিন যাঁর নীরব সমর্থন পেয়ে আসছিলেন সেই প্রকাশ কারাটও কোঝিকোড়ের ঘটনা মেনে নিতে পারেননি। সম্প্রতি দলের নীতি নির্ধারক সংস্থা পলিটব্যুরোর মিটিংয়ে কোনো নেতাই পিনরাই-এর পক্ষে দাঁড়াননি। কেরলের রাজ্য সম্পাদক ও দলের পলিটব্যুরো সদস্য কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণণ এখন চিকিৎসার জন্য বাইরে থাকায় তাঁর মতামত মুখ্যমন্ত্রী ও পলিটব্যুরো সদস্য পিনরাইয়ের পক্ষে আছে কিনা জানা যায়নি। তবে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই বিষয়টি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ঝড় তুলুন বা না তুলুন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। মাওবাদী দমনে পুলিশ, প্যারামিলিটারির উপর পূর্ণক্ষমতা চাপিয়ে বা ‘থাণ্ডার বোল্টে’র মাধ্যমে মাওবাদী নিকেশ করার নীতি যে গুরুতর বিচ্যুতি ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব এটি এখনও বুঝতে না পারলে এবং সরকার চালাচ্ছেন যে সমস্ত নেতা তাঁদের এ প্রশ্নে সংযত না করলে ভবিষ্যতে এটি ব্যুমেরাং হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? বাম সরকার যদি বারংবার এরকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতেই থাকে তাহলে সবেমাত্র টিমটিম করে জ্বলে থাকা কেরল রাজ্যের ক্ষমতাও যে তাদের হাতছাড়া অচিরে হয়ে যাবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ত্রিপুরাতে বামেরা যখন ক্ষমতায় ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আমর্ড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট) রাজ্য থেকে তুলে নিয়েছিলেন। মানিক সরকারদের থেকে বিজয়নদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।