সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর দিল্লীর চারু ভবনে বৈঠকে বসে। পলিটব্যুরো শ্রদ্ধা জানায় ট্রেড ইউনিয়নের প্রবীণ নেতা এআইটিইউসি-র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও সিপিআই সাংসদ কমরেড গুরুদাস দাশগুপ্ত, পশ্চিমবাংলার নদীয়া জেলায় পার্টি গঠনের অন্যতম মূল কারিগর ও রাজ্য কমিটি সদস্য কমরেড বিমান বিশ্বাস, রাঁচি জেলা কমিটির সদস্য কমরেড বুধুয়া ওঁরাও, ভোজপুরের সামন্তি অপরাধচক্রের হাতে খুন হওয়া দুই কমরেড পরেশ যাদব ও ঝারি পাশোয়ান এবং অন্য সমস্ত কমরেডদের প্রতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ ঝুনঝুনু মিটিং-এর পর এযাবৎ যাঁদেরকে আমরা হারিয়েছি।
পলিটব্যুরো বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে এবং কলকাতা কর্মশালা ও ঝুনঝুনু কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং-র সিদ্ধান্তসমূহ কতটা কার্যকর হল তার হিসেব নিকেষ করে।
মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন ও জম্মু কাশ্মীরের বিডিসি নির্বাচন :
মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা উভয় রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হলেও এই নির্বাচনগুলিতে বিজেপি যে ভালোরকম ধাক্কা খেয়েছে তা পিবি নজরে এনেছে ও তাকে স্বাগত জানিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর বিডিসি নির্বাচন সংগঠিত হয়েছে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ রেখে। ওই এলাকার সব ধরনের রাজনৈতিক দলের প্রায় সকলেই প্রতিবাদ হিসেবে এই নির্বাচন বয়কট করে। এরপরও বিজেপিকে আটকাতে নির্বাচনে প্রার্থী হয় বিভিন্ন নির্দলীয়রা। কেবল উপত্যাকাতেই নয়, বিজেপির শক্তিশালী ঘাঁটি জম্মু এবং লাদাখেও এমনটা ঘটেছে। নির্বাচনের ফলাফল থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে কাশ্মীর বিজয়ের উল্লসিত প্রচারাভিযান, সাভারকার ও শ্যামাপ্রসাদের মতো হিন্দুত্ব প্রতিমূর্তিকে মহিমান্বিত করার প্রচেষ্টা, তিন তালাক আইন আর এনআরসি ও সিএবির মতো বিভেদকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে তীব্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা ইত্যাদি সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংকট ও বিজেপি সরকারের অকর্মণ্যতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ভাষা পেতে চেয়েছে। জনসাধারণের এই মোহভঙ্গকে এক দৃঢ় গণআন্দোলনের স্রোতে পরিণত করে সেই স্রোতকে মোদি-শাহ সরকার ও সঙ্ঘ-বিজেপি বাহিনীর ফ্যাসিস্ট এজেন্ডাকে প্রত্যাখ্যানের নির্ধারক রাজনীতির দিকে চালিত করতে হবে আমাদের।
কয়েকদিনের মধ্যেই অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা করতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। শেষ পর্যন্ত কী রায় আসে এবং তার কার্যকরী ফলাফলই বা কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আমাদের নিশ্চয় অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু যে জায়গাটির ওপরে থাকা বাবরি মসজিদকে প্রকাশ্য দিবালোকে সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ উল্লঙ্ঘন করে ধ্বংস করা হল এখন সেই জায়গাটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে বসাটাই তো গণতন্ত্র ও সুবিচারের ওপর এক আঘাত। যদি সর্বোচ্চ আদালতের রায় মসজিদের জায়গাটিকে একটি মন্দিরে রূপান্তরিত করার সুযোগ করে দেয় তাহলে তা ওইসব হামলাবাজদের শক্তি জোগাবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও অপরাধ সংগঠিত করতে উৎসাহ দেবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের অবস্থান দৃঢ়তার সাথে প্রকাশ করতে পিবি সমগ্র পার্টিকে আহ্বান জানাচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পের বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর সারা ভারত প্রতিবাদ দিবস পালন করার। আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে ইতিমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোনও রকম সুযোগসুবিধা বা অধিকার না পেয়ে শত শত মানুষ যখন এই ক্যাম্পগুলোতে পড়ে পড়ে পচছেন, তখন সরকার গোটা দেশে এরকম আরও অনেক ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার কাজে ব্যস্ত। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি আসলে হিটলারী জার্মানির কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের ভারতীয় চেহারা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা গণতন্ত্র ও মানব অধিকারের এইসব হত্যাপুরি অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলছি। ১১-১৭ নভেম্বর এক সপ্তাহ কাল আমরা ‘‘গণ জাগরণ অভিযান’’ চালাব মোদি সরকারের এই বিভেদকামী ছক ও দেশের অর্থনীতি আর গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার পদক্ষেপগুলির বিরুদ্ধে। এই অভিযান থেকে দাবি উঠবে এনআরসি ও সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল রদ করার। দাবি উঠবে সমস্ত ডিটেনশন ক্যাম্প বন্ধ করার, বেসরকারীকরণের সমস্ত পদক্ষেপ থামিয়ে সাধারণ মানুষ ও নিপীড়িত জনতাকে ক্রমশ গভীর আর্থিক মন্দার বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে আশু রিলিফ দেওয়ার।
ঝাড়খন্ড নির্বাচন : ঝাড়খন্ডে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে। বিরোধী দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত বলেই মনে হচ্ছে। যদি সমঝোতা না হয় তাহলে আমাদের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ক্ষেত্রে লড়াটাই সমীচীন হবে।