২ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদক পার্থঘোষ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, কখনও “গো-মাতার নামে”, কখনও “রামের নামে”, কখনও “জয় শ্রীরাম” ধ্বনি তুলে গোটা দেশজুড়ে রাষ্ট্র ও সরকার মদতপুষ্ট ফ্যাসিস্ট বাহিনী নিরপরাধ, নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে, হত্যা পর্যন্ত করছে। অপরাধীরা জেনে গেছে তারা বিচারের উর্দ্ধে। কোনো আইন, কোনো আদালত তাদের শাস্তি দিতে পারবে না। সম্প্রতি পেহলু খানের হত্যাকারীরা হাসিমুখে জেল থেকে বেড়িয়ে এলো। সুপ্রিম কোর্ট বারংবার এই ভিড়-সন্ত্রাস বা গণপ্রহার বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি রাজ্য সরকারগুলিকে এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রনয়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ কার্যকরী করতে বিন্দুমাত্র হেলদোল দেখায়নি। উত্তরপ্রদেশ সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি মব লিঞ্চিং-এর মৃগয়া ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি এরাজ্যেও বিভিন্ন জেলায় মব লিঞ্চিং বা ভিড় সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। কলকাতায় মাদ্রাসা শিক্ষক যেমন আক্রান্ত হয়েছেন, মালদহ বা উত্তর দিনাজপুর জেলায়ও এ ধরনের একাধিক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। মব লিঞ্চিং প্রতিরোধে কোনো আইন না থাকায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে “দি ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব মব লিঞ্চিং বিল ২০১৯-কে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন স্বাগত জানায়। অবিলম্বে এই আইন প্রণয়ন করে গণপ্রহারের ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে, এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আইনের কোনো ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা যাতে বেড়িয়ে আসতে না পারে তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বিলম্বিত বিচার শেষ বিচারে বিচারের প্রহসন। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়াকে শেষ করতে হবে। কোনো কোনো “প্রাজ্ঞ” রাজনীতিবিদ আইন প্রণয়নের পূর্বেই “আইনের যাতে বাড়াবাড়ি না হয়” তার জন্য সতর্ক থাকতে বলেছেন। আইন-ই তৈরি হল না, তার আবার বাড়াবাড়ির আশঙ্কা! আইন প্রণয়ন হলেই হবে না, তা যাতে কার্যকরী হয়, তার জন্য রাজ্যবাসীকে নজর রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “সংশোধিত’’ বিলে মৃত্যুদণ্ডের যে বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করি। নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনোরকম আলাপ আলোচনা না করে প্রস্তাবিত বিলে এই ধরনের ‘সংশোধন’ সংসদীয় রীতিনীতির পরিপন্থী। এছাড়াও বলা যায়, আমরা মৃত্যুদণ্ডের মতো ‘আদিম প্রথার’ তীব্র বিরোধী। পৃথিবীর বহু দেশ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে দিয়েছে। আমাদের দেশেও মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো জনমত গড়ে উঠেছে, এবং বাতিলের দাবি উঠেছে। যতদিন না মৃত্যুদণ্ড বাতিল হচ্ছে, ততদিন এর উপর “মোরেটোরিয়াম” জারী করা হোক।