সম্প্রতি তৃণমূল সরকার “জয়বাংলা”, “তপশিলি বন্ধু”, “জয় জোহার” প্রভৃতি নামে এক সামাজিক পেনশন প্রকল্প চালু করছে বলে ঘোষণা করেছে। ১ এপ্রিল থেকে নাকি এটা কার্যকরী হবে! এই প্রকল্পে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে এসসি, এসটি বর্গভুক্ত মানুষদের ১০০০ টাকা মাসিক পেনশন দেওয়া হবে। সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে – এই প্রকল্প প্রথমত যারা অন্য কোনো পেনশন পান না তাদের সকলের জন্য, দ্বিতীয়ত উপরোক্ত নামকরণে এসসি ও এসটিদের জন্য৷ যারা বর্তমানে ৬০০-৭৫০ বা অন্যান্য হারে পেনশন পায় তাদের সকলকেই মাসিক ১০০০ টাকা দেওয়া হবে। অনলাইনে দরখাস্ত করা যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ব্লক থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে যে রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের আধিকারিকরা এ সম্পর্কে এখনও কিছু জানেনই না। ফলে সরকারী বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রকৃত উপভোক্তা কারা? এ সম্পর্কে একটা অস্বচ্ছতা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু এটা খুবই গুরুতর আশঙ্কা যে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরা এই প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যাবেন, কারণ ঐ সম্প্রদায়ের মধ্যে এসসি বা এসটি-র সংখ্যা খুবই নগন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরাই ওবিসি তালিকাভুক্ত। এই পরিকল্পনা তৃণমূল সরকার কি করে গ্রহণ করল! এটা আপেক্ষিকভাবে সত্য যে এ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের একটা ভালো পরিমাণ মানুষের সমর্থন তৃণমূলের সাথে রয়েছে। যদিও দিল্লী গণহত্যায় নীরবতা, এ রাজ্যে এনপিআর কার্যকরী করার প্রশ্নে এক ধরনের নীরব সন্মতি, রাজ্য শাসনে দুর্নীতি-দলবাজি, সন্ত্রাস মুসলিম জনগণের মধ্যে তৃণমূলের সম্পর্কে প্রশ্ন বা বিরোধিতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ধর্মীয় মেরুকরণের তীব্রতা মুসলিমদের অনোন্যপায় করে দেয়। এখন নির্বাচনের আগে তাদেরকে বাদ রেখে কেবলমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যকার বড়ো সংখ্যক প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সমর্থন লাভের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই কি এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে? মতুয়া (নমশুদ্র) ও অন্যান্য তপশিলী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে জঙ্গল মহলের আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপির ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ঠেকানোটাই তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য। সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে সকল এসসি ও এসটি জনগণকে পেনশন দেওয়া হবে বলা হয়েছে অথচ উপভোক্তার সংখ্যা নির্দিস্ট ভাবে ঘোষিত হয়েছে ৬০ লক্ষ মাত্র! পঃ বাংলার জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ তপশিলী সম্প্রদায়ভুক্ত আর আদিবাসী মানুষ ৫.৫ শতাংশ। প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার এই রাজ্যে এসসি, এসটি মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ২.৮৫ কোটি। অর্থাৎ এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে একটা বড় অংশের মানুষকে বাদ দেওয়া হবে। এখান থেকেই শুরু হবে দলবাজী স্বজনপোষণ। গরিব মানুষকে দলদাস করে রাখার ঘৃণ্য কৌশল। তাই এই প্রকল্পে আমাদের জোড়ালোভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। গ্রামে গ্রামে ব্যাপক সংখ্যক গ্রামীণ গরিব মানুষদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
আমাদের দাবি তুলতে হবে ওবিসি বর্গ সহ সমস্ত গরিব মানুষদের এই প্রকল্পর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৩ হাজার টাকা মাসিক পেনশন দিতে হবে। গরিব মানুষদের প্রতি তৃণমূলের বঞ্চনা, দুর্নীতি দলবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি প্রচার ও কিষাণসভার সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের কর্মসূচীর সাথে এই প্রচারকে যুক্ত করতে হবে। সমস্ত গরিবদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ব্লকে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কাজকে একটা আন্দোলনমুখী কর্মসূচী রূপে গ্রহণ করতে হবে।