প্রতিবেদন
মুখ্যমন্ত্রী, এত লাশ রাখব কোথায়?

গত ৪ ডিসেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, রাজ্যে এখন মৃত্যুর করাল ছায়া। কখনও ডেঙ্গি/ডেঙ্গু, কখনও ধর্ষণ-গণধর্ষণ, কখনও রাজনৈতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষ, কখনও অন্তর্দলীয় গোষ্ঠী সংঘর্ষে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, মানুষ মরছে। আর শুরু হয়ে যায় এক অশ্লীল, কুৎসিত তুলনা। “ঐ আমলে”-এর থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে, বা “অন্য রাজ্যে” এর থেকে বেশি! যেন এ নিয়ে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। নিশ্চিন্ত থাকুন। মানুষের মৃত্যু নিয়ে এ ধরনের মনোভাবকে কি বলবেন? অসভ্যতা ছাড়া!!

গত ৭-৮ মাস ধরে রাজ্যের মানুষ লাগাতার বলে যাচ্ছেন, বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, কোথাও কোথাও মরণাপন্ন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে সময়মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হতে পারায় মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে, আক্রান্তের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা “উঁচু তলার নির্দেশে” মৃত্যুর কারণ গোপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না। আজ ডেঙ্গি মহামারীর আকার ধারণ করেছে।

গতকাল (৩ ডিসেম্বর) রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সীমাহীন ঔদ্ধত্যে বললেন, “আমরা তো ডেঙ্গির মশা আমদানি করছি না। যদি করতাম, তবে আপনাদের (বিরোধী নেতা-নেত্রীদের) কামড়ে দিতে বলতাম”। তারপর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাঙা রেকর্ড বাজাতে শুরু করলেন। গতবছর আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল, মৃত্যু বেশি ছিল। এবছর আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, মৃত্যু কম। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মৃত মানুষ নিছক সংখ্যা মাত্র। রাজ্যবাসী শুধু সংখ্যা আর শতাংশ জানতে চায় না। অন্য রাজ্যের তুলনায় আমরা এগিয়ে না পিছিয়ে, তাও জানতে চায় না। জানতে চায়, ডেঙ্গি প্রতিরোধে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্তদের জরুরী চিকিৎসার জন্য কত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এমার্জেন্সি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হল, রোগের বৈশিষ্ট্য-বৈচিত্র্য ও প্রতিরোধপন্থা নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন এবং তাদের সুপারিশগুলি কতটা কার্যকর হয়েছে — রাজ্যবাসী বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এসব শুনতে আগ্রহী ছিলেন। মশা আমদানি-রপ্তানির হিসেব নয়। মানুষের মৃত্যু নিয়ে, শাসক-বিরোধীদলের তরজায় রাজ্যবাসী ক্লান্ত ও বিরক্ত। আমরা দাবি করি, ডেঙ্গি প্রতিরোধে সরকার কী কী ব্যবস্থা করেছে তা নিয়ে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।

খণ্ড-26
সংখ্যা-40