১) গত আর্থিক বছরে বিলগ্নীকরণ মানে সহজ করে বললে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বেচে আয় হয়েছিল ৮৭ হাজার কোটি টাকার মতো। এই বছরে এই ধরনের সম্পত্তি বেচে “বখাটে ছেলেদের” ঠাটবাট বজায় রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু, এবারে কেনার লোক তেমন পাওয়া যাচ্ছে না বলেই খবর ... মানে সম্পত্তি বেচে আয় কত হবে তা কিছুটা অনিশ্চিত।
২) “বখাটে ছেলেদের” পরবর্তী অবশ্যম্ভাবী লক্ষ্য হয় “জমানো টাকায়” হাত দেওয়া। অনেকদিন ধরে চেষ্টা চলেছে, এইবারে শক্তিমান থুড়ি “শক্তিকান্ত”বাবুর হাত ধরে, বিমল জালানদের একটি কমিটির সুপারিশকে “শিখণ্ডী” সাজিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকার মতো। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে পড়ে থাকবে আপতকালীন ৫২ হাজার কোটি টাকার মতো, ইদানীংকালে সর্বকালীন কম।
৩) এরই মধ্যে “বখাটে ছেলেদের” পায়রা ওড়ানোর সখ হয়েছে, কর্পোরেট করে ছাড় দেওয়া হয়েছে, ১ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এছাড়া কোটি টাকার বেশি উপার্জনের ক্ষেত্রে যে বাড়তি সারচার্জ নেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল, তাও রদ করা হয়েছে।
৪) গ্যাসের ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে, শুধু “উজালা” প্রকল্প বাদে। তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে একটি ছোট্ট ঘোষণা হয়েছে, আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় মানে কার্ড দিয়ে তেল কিনলে যে ০.৭৫% ক্যাশব্যাক পাওয়া যেত (“নোটবন্দী”র সময় ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প ঘোষিত হয়েছিল!) তা আগামী ১ অক্টোবর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে।
৫) “নোটবন্দী”র সময় যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, (বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন) তাই, অর্থাৎ দু- আড়াই বছর পর থেকে জিডিপি মোটামুটি দু-আড়াই শতাংশ কমেছে। এই অধোগতি আরো খারাপের দিকে যাবে কিনা তা সময় বলবে।
৬) চারিদিকে মন্দার কারণে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। “কুমারী” বেকারের পাশাপাশি “বিধবা” বেকারের সংখ্যাও হুড়মুড় করে বাড়ছে। বাজার সংকুচিত হচ্ছে।
৭) জাতীয় সড়ক কর্পোরেশনের বাজারে ঋণ নাকি এত বেশি যে নতুন প্রকল্প আর হাতেই নিচ্ছে না, চালু প্রকল্পগুলির কাজও হয়েছে শ্লথ।
৮) ব্যাংকগুলোতে সুদের হার কমছে তো কমছেই, এখন ফিক্সড ডিপোজিটের হার যা এসে দাঁড়াচ্ছে, তা ২৫-৩০ বছর আগের সেভিংস একাউন্টের সুদের প্রায় সমান। অন্যান্য সেভিংস স্কিম, জিপিএফ, পিপিএফ, ইত্যাদিতেও সুদের হার কমছে। বয়স্কদের দূরবস্থা বাড়ছে। আবার বাজারে মন্দার কারণে শেয়ার বাজারে টাকা রাখাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। অন্যদিকে “ব্যাংক সংযুক্তীকরণের” নামে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিসেবা আরো সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে, অথচ প্রথমবার সরকারে এসে সকলের ব্যাংক একাউন্ট তৈরির “জনধন প্রকল্পের” কাজ বিশাল হইচই করে হয়েছিল। সেই কাজ প্রবল চাপের মধ্যে পড়বে (ইতিমধ্যেই অথৈ জলে আছে)।
৯) আবার যুদ্ধবাজ সাজা ও সেই সূত্রে টাকাপয়সা ছড়ানো এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে বেসরকারী অস্ত্রব্যবসায়ী সংস্থা (পড়ুন আম্বানি!) পুরোদমে লাভ করতে করতে পারে ... সেই সবও চলছে। তথ্য দিয়ে বললে, (ক) গত মার্চ মাসে রাশিয়ার সাথে তিন বিলিয়ন ডলার দিয়ে পরমাণুশক্তি চালিত সাবমেরিন কেনার বা লিজ নেওয়ার চুক্তি হয়েছে। (খ) জুন মাসেই ঘোষণা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বেসরকারী সংস্থা থেকে ৬টি সাবমেরিন কেনার টেন্ডার ঘোষণা করা হতে চলেছে। (গ) আর রাশিয়া গিয়ে “অ্যাক্ট ফার ইস্ট” পলিসির নামে রাশিয়াকে এক বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাহায্য (কম সুদে ধার) ঘোষণা করা হয়েছে, যা সাইবেরিয়ার অন্য প্রান্তে ব্লাদিভস্টক এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজে লাগবে।
এই তিনটি বিষয় আপাত সম্পর্কহীন, কিন্তু তত সম্পর্কহীন নাও হতে পারে। আবার খুচরো বাজারেও আগুন লেগেছে আজকাল। সবজি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশে চড়ে বসে আছে।
আমেরিকাতে “হিন্দুত্ববাদী” সরকার পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে যে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছে, এদেশে কর্পোরেট মিডিয়া তা সযত্নে এড়িয়ে গেছে। বিদেশে বিরাট মুখ উজ্জ্বল হয়েছে বলে ভক্তদের যে আস্ফালন তা আসলে একধরনের “মস্ত গ্যাসবেলুন” মাত্র তা আস্তে আস্তে প্রকাশিত হচ্ছে।