এনআরসি এখন গ্রামীণ কৃষকদের বিশেষ করে ভূমিহীন গরিব কৃষকদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। বসবাস ও চাষের জমির ঠিকানা অর্থাৎ সরকারি খাতায় নথিভুক্ত করার জন্য তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জমির দলিল আছে তো রেকর্ড নেই, খাস জমিতে বসবাস করে কিন্তু পাট্টা নেই, আবার পাট্টা থাকলেও রেকর্ড নেই। এছাড়া রেলের জমিতে, জাতীয় সড়কের জমিতে, জেলা সড়কের জমিতে, বসবাসকারীদের অবস্থা আরো করুণ।
জীবন-জীবিকা রক্ষার এইসব বিষয়গুলো কার্যকরী করতে গিয়ে মানুষের চরম হয়রানির শেষ নেই। কালিগঞ্জ ব্লকে বিএল এন্ড এলআরও দপ্তরে জমে থাকা রেকর্ড ভুক্তির দুর্নীতি, শুনানিতে পক্ষপাতিত্ব, নিয়ম বহির্ভূতভাবে রেকর্ড করা চলছে তো চলছে, তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ব্যক্তিগতভাবে বহু কৃষক ক্ষোভ বিক্ষোভ জানান কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এই প্রসঙ্গে গত ২২ নভেম্বর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর বিক্ষোভ ডেপুটেশন দেয় সারা ভারত কিষান সভা। সাপজোলা গ্রামের গরিব কৃষক কৃষ্ণভক্ত মন্ডলের জমি সিপিএম আশ্রিত গুন্ডারা জাল দলিল মূলে রেকর্ড করে, পুলিশের সাহায্য নিয়ে জমি দখল করে নেয় ২২ বছর আগে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ কৃষক সমিতির নেতৃত্বে পুলিশের বেষ্টনী ভেঙে, গুন্ডাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করে সেই জমি কৃষ্ণ ভক্ত মন্ডলের পক্ষে দখল নেওয়া হয়। কিন্তু বিএলআরও দপ্তর সেদিন কৃষ্ণ ভক্তের জমি রেকর্ড করেনি, উচ্চতর আদালতের সুপারিশ করে। কৃষ্ণনগর জেলা জজ কোর্টে মামলায় জয়ী হওয়ার পরেও রেকর্ড করা হয়নি। রেকর্ডের জন্য নতুন করে আবেদন জানালে শুনানির দিন দেখা গেল সেদিনের সিপিএম আশ্রিত গুন্ডারা এখন বিজেপির আশ্রয় নিয়ে শুনানিতে হাজির। তারা হাইকোর্টে মামলা করেছে বলে কৃষ্ণ ভক্তের রেকর্ড হয়নি। ডেপুটেশনে জোরের সাথে দুটি দাবি করা হয়। (ক) যে দলিলের ভিত্তিতে বিএলআরও দপ্তর রেকর্ড করেছিল সেই দলিল ভুয়া বলে জেলা আদালত খারিজ করেছে। তাই জেলা আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিতে হবে। (খ) এই মামলা আদৌ হাইকোর্ট গ্রহণ করেছে কিনা তার প্রমান দেখাতে হবে।
ঠিক এইরকমভাবে গত ৩/৪ মাস আগে দেবগ্রাম মৌজায় গহরাপোতা গ্রামে আব্বাস মোল্লার জমি অপরের নামে মিথ্যা রেকর্ড করার ফলে পঞ্চায়েত ও তাদের গুন্ডাবাহিনী আগুন লাগিয়ে, মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ৪ শতক জমি দখল করে নেয়। দেবগ্রাম মৌজার নিম্নমধ্যবিত্ত প্রভাত দে’র রেকর্ডভুক্ত জমি বসতপুর মৌজার ছেড়াখালের গরিব কৃষক জহর মন্ডলের রেকর্ডভুক্ত জমি অপর ব্যক্তির নামে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে তথ্য জানার আইনে আবেদন করলে ক্রমাগত হয়রানি করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তথ্য দেয়ার নামে তথ্য দেওয়া হয়না। ব্লকের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সংগঠনের যুক্তি ও দাবিগুলি মেনে নিতে বাধ্য হন এবং পুনর্বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে প্রতিনিধিদের জানান।
সংগঠনের পক্ষ থেকে খাস জমির তালিকা চাইলে তিনি রাজ্য সরকারের নির্দেশ নেই বলে জানান। ব্লকে অনুপস্থিত ও উপস্থিত জমিদার’দের বহু খাসজমি বেনামে দখলদারি হিসাবে এক ধরনের বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অথচ গরিব ভূমিহীনরা বসবাস, কৃষি উৎপাদন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়ে তথ্য আকারে বড়চাঁদঘর মৌজার, দেবগ্রাম মৌজার আদিবাসী ও সংখ্যালঘু ভূমিহীন, বসতপুর মৌজার আদিবাসীদের পাট্টার ও পাট্টা জমি রেকর্ডের বিষয় তুলে ধরা হয়। আধিকারিক পাট্টার আবেদন গ্রহণ করবেন ও পাট্টা রেকর্ডের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। ডেপুটেশনে নেতৃত্ব দেন সারা ভারত কিষান মহাসভার রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, কৃষ্ণপদ প্রামাণিক, আলতাফ হোসেন, উমা রায়, আসাদুল শেখ প্রমূখ।