বিগত ৩০ জুলাই কোলকাতা গণকনভেনশন থেকে ফিরে গিয়ে কয়েক দিন পরেই কেলাই ও দীঘা গ্রামের জনসাধারণকে ডেকে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে ২টি গ্রামের ১০০ লোকের বেশি মানুষ জমায়েত হয়। আলোচনায় উঠে আসে গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। তদুপরি বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোর করে জয় লাভ করে তৃণমূলের নেতারা প্রতিটি গ্রাম সভা থেকে তাদের নিজেদের পছন্দের ২০/২৫টি পরিবারের লোকজনের জব কার্ড এন্ট্রি করে কাজ দেবে ঠিক করে নিয়েছে। বাকি গ্রামের জনগণকে বঞ্চিত করা হবে। মানুষ এর প্রতিবাদ করতে থাকে।
আর এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর তৃণমূলের নেতারা গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে ঘর দেবে বলে পরিবার পিছু ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রীম অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু এখনও কাউকে ঘর দেওয়া হল না। তাছাড়া গ্রামে পিএইচই মাধ্যমে কোনো পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। গ্রামের অনেকেই বক্তব্য রাখেন। তারপর এই বৈঠকে ঠিক হয় ২৭ আগষ্ট ঝিল্লী গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হবে। তাছাড়া বৈঠকে রাজ্যের ও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে তৃণমূলের দুর্নীতি দলবাজি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ গরিবদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে গ্রামে গ্রামে বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মেরুকরন এর রাজনীতির মোকাবিলা করার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে অনেকই সরব হন। কাশ্মীরী জনগনের উপর নামিয়ে আনা অঘোষিত জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।
২৭ আগষ্ট বেলা ২টার সময় প্রায় শতাধিক মানুষ মিছিল করে ঝিল্লী গ্রাম পঞ্চায়েতের জমায়েত হন। জমায়েতে বহরমপুর থেকে জেলা কমিটি সদস্য অপূর্ব লাহিড়ী ও বহরমপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক রবি মন্ডল যোগদান করে। বক্তব্য রাখেন কমরেড অপূর্ব লাহিড়ী ও জেলা কমিটির সদস্য কমরেড হায়দার সেখ ও সারাভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা সম্পাদক হাসান সেখ। ডেপুটেশনে আটটি দাবি ছিল —
(১) সমস্ত গরিব পরিবারকে বছরে ২০০ দিন কাজ ও ন্যূনতম মজুরি কার্য্যকরী করতে হবে।
(২) প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের তালিকায় নাম তোলার ব্যাপারে দূর্নীতি দলবাজী বন্ধ করতে হবে। সমস্ত গরিব পরিবারের ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৩) পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য পিএইচই প্রকল্পের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) সরকারি সংগ্রহ মূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করতে হবে ও অন্যান্য স্থানীয় রাস্তা সংস্কারের দাবি তোলা হয়।
১০০ দিনের কাজের প্রশ্নে প্রধান বলেন কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কাজে বিধিনিষেধ ঘোষণা করে। ফলে অল্প কিছু লোককে কাজ দেওয়া সম্ভব হবে। তাই জব কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এমনকি বলে আপনারাও কিছু নাম দিতে পারেন। আমাদের তরফে সমস্ত মানুষের কাজ দাবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা আত্মসাৎ প্রশ্নে অস্বীকার করে। বলে নির্দ্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হলে তদন্ত হবে। অন্যান্য দাবিগুলো সমাধান করতে প্রচেষ্টা নেবে প্রতিশ্রুতি দেয়। শেষ বিচারে বাধ্য করা হয় প্রধানকে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে মাইকের সামনে হাজির হয়ে বলতে হয় সিপিআই(এমএল) যে দাবিগুলো করেছে — সেগুলো ন্যায্য দাবি এবং দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবে। এবং তিনি যতক্ষণ প্রধান থাকবেন ততদিন পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হলে তিনি দায়বদ্ধ থাকবেন।
মানুষের বিক্ষোভ এবং প্রধানকে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে জনসমক্ষে ঘোষণা করতে বাধ্য করানো এলাকায় ভালো প্রভাব পড়েছে। মানুষের স্বার্থের লড়াইয়ে সিপিআই(এমএল)-ই বিকল্প বিজেপি নয়। এটাই সামনে আসে।