আমরা যারা এই মুহূর্তে ঘরছাড়া, দেশছাড়া মানুষজন, কিছুদিন আগেও জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বাসিন্দা ছিলাম যারা, সেই আমরা আর্টিকেল ৩৭০-এর বিলোপকে দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।
আমরা এই সুযোগে ভারতের নাগরিকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের কারণেই ভারতে সংযুক্ত হবে বলে বেছে নিয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যই একমাত্র রাজ্য ছিল যা ১৯৪৯ সালে ভারতের গণপরিষদের কার্যক্রম চলাকালীন নিজেদের অধিগ্রহণের শর্তাদি নিয়ে আলোচনা করেছিল, যার ফলস্বরূপ ৩৭০ ধারাটি কোনও বিরোধিতা ছাড়াই ভারতের সংবিধানে জায়গা পায়।
এই কারণে আমাদের বিবেচনায়, ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা বিলোপের এই সিদ্ধান্ত যে পদ্ধতিতে জবরদস্তিভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের প্রতি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির সরাসরি বিরোধী ও চূড়ান্ত অসাংবিধানিক। যে তুঘলকি পদ্ধতিতে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার কোনোরকম মতামত বা সম্মতি না নিয়েই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তাতে ভারত সরকারের একনায়কসুলভ ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে সর্বতোভাবে।
আমরা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষজন এটা জোর দিয়ে বলতে চাই যে জম্মু-কাশ্মীরের কোনো মানুষের সাথে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি এবং আমাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের সাথে কথা না বলে গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে গণ্য করা চলবে না। আমরা একে ধিক্কার জানাচ্ছি এবং আমাদের ওপর নামিয়ে আনা এই অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তকে মানছি না।
আমরা অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরের রাষ্ট্রপতি শাসন বন্ধ করবার দাবি জানাচ্ছি। জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের যোগাযোগের ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করতে হবে। সমস্ত রকমের রাজনৈতিক প্রতিনিধি যারা বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের অন্যায় ও বেআইনি বন্দী অবস্থা থেকে তাঁরা যাতে মুক্তি পান সেই দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের জন্মভূমি এইভাবে ভাগ হয়ে যাওয়াটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা শপথ নিচ্ছি যে এই সংকট ও পরীক্ষার মুহূর্তে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিভাজন তৈরির যে কোনোরকম চেষ্টাকে আমরা রুখে দেব।
স্বাক্ষরকারী —
রবীন্দার সিং, অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসার; এয়ার ভাইস মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) কপিল কাক; উপেন্দ্র কাউল, কার্ডিওলজিস্ট; অনুরাধা ভাসিন, এক্সিকিউটিভ এডিটর, কাশ্মীর টাইমস; এম কে রায়না, থিয়েটার এণ্ড ফিল্ম অ্যাটিস্ট; সুবীর কাউল, প্রফেসর এবং সাহিত্যিক; পুস্কর নাথ গঞ্জু, অবসরপ্রাপ্ত আমলা; নির্দোষ উপল, সমাজকর্মী সহ মোট ৫০ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত বুদ্ধিজীবী।