গত ২২ জুলাই, বেলা পাঁচটায় সারা ভারত কিষাণ মহাসভার পক্ষ থেকে কালিগঞ্জ ব্লকের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ডেপুটেশন হয়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কৃষক সাধারণ তাদের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার। একজনের জমি অপরের নামে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। আর সেই নিয়ে রেকর্ড সংশোধনের জন্য বছরের পর বছর হয়রানি হতে হচ্ছে, কৃষ্ণনগর কোর্টে, অথবা জেলা ভূমি দপ্তরের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে, তাতে কৃষকের সারাদিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উপরন্তু ২০০ টাকা যাতায়াত খরচ করে উকিল ধরে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে হচ্ছে প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে।
সাপজোলা মৌজায় গরিব কৃষক কৃষ্ণভক্ত মন্ডলের জমি অপর ব্যক্তির নামে রেকর্ড করার ফলে দখল নিয়ে গুলি চালাচালি, মারধর, গন্ডগোল হয়। বামফ্রন্ট আমলে পুলিশের সহযোগিতায় গ্রামের কিছু দুষ্কৃতী এই কাজের সাথে যুক্ত ছিল। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ কৃষক সমিতির পক্ষ থেকে লড়াই করে সেই জমি কৃষ্ণ ভক্তের দখলে আনা হয়। ভূমি দপ্তরে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করেও ব্যর্থ হয়। অবশেষে কৃষ্ণনগর জর্জকোর্টে মামলা করে কৃষ্ণভক্ত মন্ডল ২০০২ সালে রায় পায়। কিন্তু সেই থেকে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করলেও এখনো পর্যন্ত তা কার্যকরী হয়নি। এই তথ্য তুলে ধরে জেলা ভূমি অধিকর্তাকে জানালে, তিনি যাতে দ্রুত রেকর্ড হয় তার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। বসতপুর মৌজায় জহর মন্ডল এর ৫ শতক জমি অপর ব্যক্তির নামে কিভাবে রেকর্ড হলো তা জানতে চাইলে, তিনি বলেন নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকতে পারে, সেটা ব্লক ভূমি দপ্তর থেকে জানতে হবে, দপ্তরের ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা হবে বলে জানান। দেবগ্রাম মৌজার হারাধন দে মহাশয়ের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত জমি একজন প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তির নামে কি করে রেকর্ড হলো, সেই সংক্রান্ত বিষয় ব্লক ভূমি দপ্তর তদন্ত করে সিদ্ধান্ত জেলা ভূমি দপ্তরে জানানো সত্ত্বেও তা কার্যকরী কেন হচ্ছে না, এর সাথে দেবগ্রামের সাইকেল মিস্ত্রি দেবু দাসের বাড়ির জমি অপরের নামে কিভাবে রেকর্ড হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন ব্যবস্থা নেবেন, কিছু পরামর্শও দেন।
খাস জমি সংক্রান্ত বিষয় ভূমিহীনদের নামে পাট্টার দাবি জানালে, তিনি বলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে এখনো পর্যন্ত ব্লক স্তরে কোন স্থায়ী কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি, তাই হচ্ছে না। প্রতিনিধিরা জানতে চান, গ্রামীণ গরিবদের প্রতি সরকারের এই ধরনের অবহেলা কেন? তারা আরো বলেন, প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে রেভিনিউ ইন্সপেক্টর থাকার কথা যিনি গ্রামীণ এলাকার মানুষের জমির খাজনা নেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতি কেন? ব্লকে মোট ১৫টি অঞ্চলে একজন করে রেভিনিউ ইন্সপেক্টর থাকার কথা কিন্তু সারা ব্লকে মাত্র একজন কেন? ভূমি অধিকর্তা কিছুটা নির্বাক হয়ে বলেন, এটা তিনি কিছু করতে পারবেন না সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের উপরতলার ব্যাপার।
ব্লকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত একশ্রেণীর জমির দালাল জমি সংক্রান্ত বেসরকারি মুহুরী দের সাথে সংযোগ করে সরকারি ভূমি দপ্তরের কর্মচারীর সাথে গোপনে আর্থিক লেনদেন করে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। এই ঘটনায় শাসকদলের সরাসরি, কোথাও দূর থেকে মদত দিয়ে জনগণকে হয়রানি করে চলেছে। গ্রাম সভার সদস্য বা প্রধানকে জানালে তারা এ বিষয়ে মানুষকে কোন সহযোগিতা করতে অপারগ। এই অবস্থায় মানুষ একটি সংগ্রামী শক্তিকে তাদের পাশে পেতে চায়। সারা ভারত কিষান মহাসভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকতে প্রস্তুত। এদিনে ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন কৃষ্ণপদ প্রামানিক, জহর মন্ডল, কৃষ্ণভক্ত মন্ডল, দেবু দাস, হারাধন দে ও বাবলু দত্ত প্রমূখ। ডেপুটেশন দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করেন এআইসিসিটিইউ নেতা নীহারেন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।
২৬ জুলাই, বেলা তিনটার সময় কালিগঞ্জ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক এর নিকট ডেপুটেশন দেওয়া দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু স্বয়ং বিডিও এবং সহকারি বিডিও কেউ উপস্থিত ছিলেন না, দপ্তরের একজন অফিসার ডেপুটেশন নিলেন। না থাকার জন্য প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, একজন অসুস্থ আর একজন পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি।
দপ্তরের ঘরে ১৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত হন। তারা বলেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অসংখ্য মানুষ যারা সত্যি ঘর পাওয়ার যোগ্য তারা কেন বঞ্চিত? যারা ঘর পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে ঘুষ যারা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে? সংগঠনের পক্ষ থেকে পিএমএওয়াইএ ঘর পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকা তথ্য জানার আইনে আবেদন করে কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এর কোনো সদুত্তর পাওয়া না গেলেও ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্লক আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা বলেন, তথ্য জানার আইনে তালিকার বিষয়ে ব্লক আধিকারিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
তারপর রেশন কার্ড এখনো কেন গ্রাহকদের হাতে পৌঁছালো না? কেন রেশন কার্ডের মাল তারা পেলেন না? পঞ্চায়েতের ধান্দাবাজ পার্টি নেতা আর খাদ্য দপ্তরের ডিলারদের অশুভ আঁতাতের কথা তুলে ধরা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচজনের নাম দিয়ে তথ্য দেওয়া হয়, যারা এখনো কার্ড পাননি। বর্ষা শুরু হয়েছে, গরিব মানুষের চালা ঘরের ছিদ্র দিয়ে জল পড়ছে, জরুরী ত্রিপল দরকার। এ বিষয়ে রাধাকান্তপুরের ১৫ জন গরিব মানুষ দরখাস্ত লিখে দপ্তরে জমা দেন। এটাও বিডিও মহাশয়ের অনুমোদন সাপেক্ষ বলে জানানো হয়।
অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু চোখের সামনে দেবগ্রামের পাওয়ার হাউজ থেকে গরুর হাট, সবজির হাট পর্যন্ত ৬০ বছরের পুরনো পিচের রাস্তা বর্তমানে চলার অযোগ্য। রাস্তা দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা, কৃষকের সবজি ফসল, টোটো চালক, সাইকেল চালক সহ অসংখ্য নাগরিকদের চলাচলের এই রাস্তা দ্রুত নির্মাণ করার দাবি জানালে ব্লক দফতরের পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখবেন এবং এই রাস্তা ব্লক এর অধীন হলে তা কার্যকরী করবেন বলে জানানো হয়।
ডেপুটেশনে সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃষ্ণপদ প্রামানিক, দিলীপ মৈত্র, দেবু দাস, হারাধন দে, বাবলু দত্ত ও স্বপন প্রামানিক অংশগ্রহণ করে।