এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে খুবই ভাল সাড়া পয়েছি কিন্তু ভোট পাইনি সেরকম। নতুন নির্বাচনী গান তৈরি হয়েছিল দুটি। নৈহাটি অগ্নিবীণার গান বেশ ভালো, মানের দিক থেকেও উন্নত। কৃষ্ণনগরে মিছিলের মধ্যে সম্মিলিত কন্ঠে গাওয়া গানটিতে অন্যান্যরা গলা মেলান। পরে দুদিন কৃষ্ণনগর শহর ও শহরতলীতে পথসভাগুলিতে অগ্নিবীনার গান মানুষকে নাড়া দেয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতা বিরোধীও কৃষক আন্দোলনের গান। অগ্নিবীণার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন বাবুনি মজুমদার, বাবলু হালদার, সঙ্গে ছিলেন সোহম পাল। পরে দলগতভাবে অগ্নিবীণা আসতে চাইলেও এলাকার সংগঠকদের ব্যবস্থাপনার অসুবিধার কারণে তাদের আসা হয়ে ওঠেনি। আমি এব্যাপারে একা তাই আমার নদীয়া জেলায় ভোটের প্রচারে একটু বেশি সময় জুড়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার গানটি ছিল গ্রামীণ পল্লীসুরে “একশ পারসেন্ট গ্যারান্টি মোদীর হবে হার।” মুলত এই গানটি এবং তার সাথে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান ‘‘ও গায়ের নওজোয়ান হিন্দু আর মুসলমান’’ বা “বাংলা মা আ গো সইবো না তোর অপমান” এই গানগুলি নিয়েই গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছি। গানে গাইতেই ঠিক আগের মতোই মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়েছে। ধুবুলিয়া-নওপাড়া অঞ্চলের রূপদহ, জ্যোতিনগর, নতুন নওপাড়া, পাথরাদহ, সোনাতলা, কালিনগর, চড়মহৎপুর গ্রামগুলি আমাদের পুরানো অঞ্চল, তিন তিন বার এখান পঞ্চায়েত বোর্ড আমাদের হাতে ছিল। বর্তমানে আমরা বিরোধীপক্ষ। কর্মীরা কিছুটা হতোদ্যম, কিন্তু সভায় লোক সমাগম ভালই ছিল, গান শুনে লোক জমেছে। পুরানো কমরেডদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ হল, আন্তরিকভাবেই বলল, “আর আসোনা কেন? ভোট কেমন হবে জিঞ্জাসা করতে বলল, “লইড়তে হবে তো। নেতাদের ঘনঘন আইসতে হবে”।
গাছা বাজার। এখানে কৃষক আন্দোলনের নেতা কমরেড জালালের শহীদবেদী, পাশেই পার্টি অফিস, সপ্তাহে এখানে হাট বসে। এখানে দুদিন সভা হল। বিভিন্ন গ্রাম থেকে বেশ কিছু কর্মী হাজির হলেন। জয়তু দেশমুখ, সুবিমল সেনগুপ্ত, পার্থঘোঘ এখানে বক্তব্য রাখলেন। কমরেডদের আপ্যায়ন আমাদের মুগ্ধ করলো। একটু বেশি রাতে পৌঁছালাম কাছের দুটি গ্রামে। রাত আটটা বাজে একটাও লোক নেই, অগত্যা মাইকে গান ধরলাম। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো মেয়েরা, আসতে আসতে মানুষ জমতে শুরু করলো। দাবি উঠল আরো গান গাইতে হবে। বললাম আগে বক্তব্য শুনুন পরে আবার গাইবো। রাত ন’টায় পাশের গাঁয়ে একইভাবে সভা হলো। মানুষ গান শুনতে চায়, শুনতে চায় বক্তব্যও। এর সাথে নিবিড় কাজের উদ্যোগও একান্ত প্রয়োজন। দুদিন গেলাম শালিগ্রামে। এটা শহীদ জালালের গ্রাম। ১৯৮৩ সাল থেকে গ্রামের সাথে পরিচয়। পরিচয় গ্রামের মানুষের সাথে। এখানে শহীদ হয়েছেন কমরেড জালাল, কমরেড কদর দেওয়ান, উমেদ বর্গী, আনিছুর সেখের মতো কমরেডরা। গান গাইলাম “ও জালাল তোমারে ভুলি বলো কেমনে?” অনুরোধ এলো আরো গাওয়ার। এখনো সক্রিয় আছেন কমরেড ইউনুস, কমরেড ফরজ, আরো কমরেডরা এগিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। একই অভিযোগ “আসনা কেন”? প্রতিশ্রুতি দিলাম আসবো, তোমরা ডাকলেই আসবো। কথা হল সমীরভাই-এর সাথে। অনেক কমরেডদের নাম ভুলে গেছি। কপট রাগ দেখিয়ে বললো বলতো আমি কে? ডেকে নিয়ে গেল চায়ের দোকানে, চা খেতে গিয়ে দেখি বুড়ো হয়ে গেছে কমরেড নজরুল পাকা দাড়ি পাকা চুল। নজরুল এবার উল্টো কাজ শুরু করলো, একের পর এক আমার গান গাইতে গাইতে বলল এই যে গাহক (গায়ক) তোমার গানগুলো কিন্তু আমি মনে রেখেছি, তুমি আমাদের ভুইলে গিয়েছ।
কি করে তাকে বোঝাই আমার নিজের লেখা তখনকার গানগুলো না গেয়ে গেয়ে হয়তো ভুলে গেছি, কিন্তু তোমাদের কি করে ভুলি বলো তো?
একসময় নদীয়ার মাটিতে কৃষক আন্দোলনের জোয়ার এসেছিল অনেক কমরেডদের রক্তপাতের বিনিময়ে। যারা আজো বেঁচে আছো লড়াইয়ের ময়দানে, তোমাদের লড়াই নিয়েই তো আমার গানের চলা “তোমারে ভুলি বলো কেমনে?”