উড়িষ্যায় ফণী ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করল এআইএআরএলএ প্রতিনিধিদল

সম্প্রতি জাপানে সফরকালীন সময়ে সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রধানমন্ত্রী মোদী একথা বলেন, “ভারত সরকার সাম্প্রতিক ফণী ঝড় ও অন্যান্য আরও কিছু বাধা খুব কম ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ছাড়া মোকাবিলা করতে সফল হয়েছে। বিশ্বজগৎ আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার তারিফ করেছে, আমরা কিভাবে সরকারি সম্পদ, মানব সম্পদ ও মহাকাশ প্রযুক্তি এবং অন্যান্য উপায়কে ব্যবহার করে দক্ষতার সাথে ভূমিকা রাখতে পারছি তা সবাই জানছে বুঝছে।”

পক্ষান্তরে, ভুবনেশ্বরে নাগভূষণ ভবনে এআইএআরএলএ-র জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্প্রতি দুদিন ব্যাপী বৈঠক হওয়ার পর সংগঠনের সর্বভারতীয় ও উড়িষ্যা রাজ্য স্তরের নেতৃবৃন্দ পুরী জেলার ফণী বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। তারা লক্ষী নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যাওয়ার পথে গোটা রাস্তার দু’পাশ বরাবর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চেহারা দেখতে পেয়েছেন। অসংখ্য নারকেল গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কয়েক দশকের পুরানো গাছ শেকড়শুদ্ধু উপড়ে গেছে, হাজার হাজার হেক্টর ধানের জমি নষ্ট হয়েছে, কুঁড়ে ঘর ও আধা মাটির ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে গেছে। মানুষজন যারা ঘরদোর খুইয়েছেন তাদের তখনও যথাযথ মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি।

উড়িষ্যার রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে ৭০০০ কোটি টাকা দাবি করেছে ৫ লক্ষ বাসস্থান নির্মাণের জন্য। ‘সরকারের সম্পদ ব্যবহারের’ বুলি শোনানো প্রধানমন্ত্রী মোদী কিছুই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি! বহু ছোট ছোট গ্রাম আর টোলা অধ্যূষিত লক্ষীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তারা মানসিক বিপর্যয়ের ভুক্তভোগী হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে পিলিপদা, এআইএআরএলএ-র উড়িষ্যা রাজ্য সভাপতি সত্যবাদী বেহরার জন্মভূমি, যিনি গতবছর প্রয়াত হয়েছেন, তিনি জমিদারশ্রেণীর বেআইনী কব্জায় থাকা কয়েক হাজার একর জমি মুক্ত করতে ও সেইসমস্ত জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিলিবন্টণ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। পিলিপদা গ্রামটি ফণীতে বিধ্বস্ত গ্রামগুলোর মধ্যেকার একটি গ্রামবিশেষ। এইসমস্ত গ্রামের অধিবাসীরা বললেন তারা অমানবিক পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার যা কিছু করছে বলে দাবি করছে সবই শূন্যগর্ভ। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ ঠিকমতো চলছে না। বিদ্যুতের লাইন, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি যা যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো তখনও ঠিকঠাক পাল্টানো হয়নি।

দিগড়িয়া নামে একটা টোলার ২৫ ঘর দলিত পরিবারগুলো কি প্রচন্ড দুঃসহ অবস্থার মধ্যে বাস করছেন কল্পনা করা যায় না। সরকার ব্যবস্থা করেছে সোলার আলোর এবং একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোই যা ভরসা। গ্রামবাসীদের অনেকেই এখনও ঠিক কাজকর্ম পাচ্ছে না। এমএনআরইজিএ কাজ দেওয়া হচ্ছে না। এই গ্রামে ফণীর ঝড়ে মারা গেছেন ৩৫ বছর বয়সী একজন সিপিআই(এমএল) সদস্য, তাঁর স্ত্রী ও দুটি মেয়ে রয়েছে। পরিদর্শনকারী প্রতিনিধিদল প্রয়াত পার্টি সদস্যের পরিবারের লোকেদের গভীর সমবেদনা জানান এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সহায়তা করতে ২ লক্ষ টাকা দেবে বলেন। এছাড়া প্রয়াত কমরেডের মেয়েদের পড়াশোনার বিষয়টা দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।

খণ্ড-26
সংখ্যা-20