সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটির বৈঠকের রিপোর্ট
গত ৮-৯ জুন, ২০১৯ বর্ধমানে সিপিআই(এমএল) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের শুরুতে বিগত দিনে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কমরেড গোবিন্দ ব্যানার্জী (চিত্তদা), অমর লোহার (ওন্দা,বাঁকুড়া), ভাখরু মুন্ডা (খড়িবাড়ী), সূর্যকান্ত রায় (নকশালবাড়ী), সন্তোষ কংসবনিক (নবদ্বীপ, রেল হকার ইউনিয়নের নেতা), রাধাগোবিন্দ দাস (ধনেখালি, হুগলী), সূর্য নারায়ন মুর্মূ (হীড়বাঁধ, বাঁকুড়া), চরণ সর্দার (বৈঁচী, হুগলী), মেহের ইঞ্জিনিয়ার (বিশিষ্ঠ বিজ্ঞানী, সমাজকর্মী ও এআইপিএফ নেতা), প্রখ্যাত গণসংগীত শিল্পী রুমা গুহঠাকুরতা। এবং কেন্দ্রীয় সার্কুলারে উল্লেখিত অন্যান্য প্রয়াত কমরেড ও বিশিষ্ঠজনদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকের রিপোর্টনিয়ে রাজ্য কমিটি আলাপ আলোচনা করে। এ রাজ্যের নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি এবং আগামী কাজের দিশা নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বিশ্লেষণ ও গৃহীত পদক্ষেপগুলি নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত চর্চা হয়।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ও বর্তমান রাজ্য পরিস্থিতি :

সমস্ত প্রাথমিক অনুমান ও পূর্বাভাস ছাপিয়ে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে কয়েকগুণ বেশি আসন লাভ করেছে। উত্তরবাংলার ৮টি আসনের মধ্যে ৭টি আসন, বাঁকুড়ার (২টি আসনে), পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম আসন বিজেপির পক্ষে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর বহু বিজ্ঞাপিত “পাহাড় হাসছে, জঙ্গলমহল হাসছে” ভিন্ন ফলাফল হাজির করেছে। রাজ্যের শিল্পাঞ্চলের আসনগুলির মধ্যে বর্ধমানদুর্গাপুর, আসানসোল, ব্যারাকপুর, হুগলী (শহর ও গ্রাম মিশিয়ে) কেন্দ্রের আসনগুলিতে বিজেপি জয়ী হয়েছে। রানাঘাট (পূর্ব) ও বনগাঁ কেন্দ্রে বিজেপির জয় যথেষ্ট নজরকাড়া। এই দুই কেন্দ্রে তপশিলি জাতি (মতুয়া সম্প্রদায়ের জনগণের বড় সংখ্যক উপস্থিতি)-র মধ্যে বিজেপির তড়িৎ গতিতে প্রাধান্য বিস্তারের পেছনে নাগরিকত্ব নিয়ে যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে তাকে সুকৌশলে কাজে লাগাতে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল হাতিয়ার হয়েছে।

আরএসএস-র মাধ্যমে বিজেপি এরাজ্যে যথেষ্ট শক্তি বৃদ্ধি করেছে, তা নিশ্চিত। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং এমনকি বামফ্রন্টের অধঃপতিত নেতা নেত্রীদের এক অংশ (জনভিত্তি সহ) বিজেপিতে যুক্ত হয়ে শক্তি বৃদ্ধি করেছে এটাও সত্যি। কিন্তু মূল শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে তীব্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে। অস্ত্র হাতে রামনবমী উৎসব থেকে স্থানীয়স্তরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও দাঙ্গা বাঁধিয়ে এই মেরুকরণ এগিয়েছে। সিপিএমের ভুল রাজনৈতিক অবস্থান বিজেপির আসনসংখ্যা ও প্রাপ্ত ভোটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বিজেপি এরাজ্যে গণতন্ত্রর দাবী নিয়ে সামনে চলে এলো, বড় মাত্রায় বাম ভোট তার পক্ষে চলে গেল বর্তমানে এটা একটা ভয়ংকর বিপদ হিসাবে সামনে এসেছে। বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তর জন্য কেবলমাত্র তৃণমূলই দায়ী এভাবে বিষয়টিকে বিচার করা ঠিক হবে না, এর পেছনে অন্য যে কারণটি রয়েছে তা হল, বিজেপিকে রুখতে বামদের ব্যর্থতা এবং তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। সিপিএমের ভোট বিরাট মাত্রায় (প্রায় ২৩ শতাংশ) কমে যাওয়াকে বামপন্থার একটা বড় সংকট হিসাবে আমাদের দেখতে হবে। ফ্যাসিবাদের দাপটের মুখে “আগে অমুক তো পরে তমুক” এ জাতীয় ভাবনা বামপন্থার এক আদর্শগত সংকটকে দেখিয়ে দেয়। ফলে নির্দিষ্টভাবে সিপিএম ও সাধারণভাবে বামপন্থা সম্পর্কেই এক নেতিবাচক বার্তা সারা দেশে যাচ্ছে। দেশ জুড়ে বামপন্থার এক অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নিজেদের কাজ নিয়ে ভাবা আর সিপিএম তথা সমগ্র বাম আন্দোলন নিয়ে ভাবা — এ দুটির মধ্যে কোনো চীনের প্রাচীর নেই, আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হতে হবে। এই জায়গা থেকেই পার্টির উদ্যোগে সারা ভারত কনভেনশন ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সময়কালে এখনই একটা বড় আকারে উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে উঠেছে। এই কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে একটা গতি সৃষ্টি করা, বিভিন্ন ধরনের সংগ্রামী শক্তি, বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিবর্গকে এই কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে আমাদের কাছাকাছি নিয়ে আসার লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিতে হবে। এ রাজ্যে বামপন্থার এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে, এর পাশাপাশি শিক্ষিত বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নবজাগরণের যতটুকু ঐতিহ্য বা উপাদান আছে এ সমস্ত কিছুকে ব্যবহার করার লক্ষ্যে আমাদের ভাবনা চিন্তা ও পরিকল্পনা করতে হবে। সিপিআই(এমএল) প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর ও কমরেড চারু মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই কনভেনশন সংগঠিত হবে। এরপর ৩১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পার্টির এক কেন্দ্রীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। স্থান : মৌলালী যুবকেন্দ্র।

সিপিএমের ভোট এত বড় মাত্রায় চলে যাওয়া নিয়ে ওদের কোন আন্তরিক আত্মসমীক্ষা বা এই পরিঘটনার কোনো বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতে ওদের নেতৃত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ একে পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা বা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা হিসাবে তুলে ধরছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাম দলগুলির সাথে যুক্ত কার্যকলাপ আপাততঃ স্থগিত রাখবো। যদিও ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষেত্রে বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো কোনো বিশেষ ঘটনায় কখনও কখনও ব্যতিক্রমী কোনো যৌথ কর্মসূচী হতে পারে। পরবর্তীকালে পরিস্থিতির কোনো ভিন্নতর বিকাশের উপর দাঁড়িয়ে আমরা এ বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করবো বলে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে

রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় “পরিবর্তন” কায়েম হওয়ার পর থেকে রাজ্য জুড়ে বামপন্থী কর্মী, সমর্থক ও দরদীদের উপর ধারাবাহিক সন্ত্রাস, ট্রেড ইউনিয়ন অফিস ও সংগঠন, ছাত্র সংসদ দখল, সমস্ত গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পঞ্চায়েত-পৌরসভা দখল, “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়” পঞ্চায়েত বা পৌরসভা বিজয়ের অভিযান, ব্যাপক দুর্নীতি, এককথায় স্বৈরাচারী অপশাসন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। সেই লড়াই গড়ে তুলতে ব্যর্থতা থেকে “সহজ সমাধান” হিসাবে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ভ্রান্তনীতি বামফ্রন্টের দলগুলির বিভিন্নস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। “তৃণমূল হটাও, বাংলা বাঁচাও” শ্লোগান শেষ বিচারে বিজেপির হাতকেই শক্তিশালী করেছে। আজ যে বিষবৃক্ষ রোপণ হল, তা উপড়ে ফেলতে না পারলে এ রাজ্যের গণতন্ত্র ও জনজীবন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। এ রাজ্যে বর্তমানে বিজেপিকেই আমাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু করতে হবে তার অধীনেই স্বৈরাচারী তৃণমূলের বিরোধিতা করতে হবে।

বহুসংখ্যক তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক শিবির বদলের জন্য অপেক্ষা করে আছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর। বিজেপিতে “উপযুক্ত” জায়গা পেলে দলবদলের হিড়িক পড়ে যেতে পারে। বিজেপি নেতারা বলে বেড়াচ্ছে, “সাত দফায় যেমন নির্বাচন হয়েছে, সাত দফায় দলবদল সম্পন্ন হবে”। এই দলবদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এলাকা দখল, অফিস দখল, পৌরসভা, পঞ্চায়েত দখলের অভিযান। গোষ্ঠী সংঘর্ষকোথাও কোথাও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের চেহারাও নিচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগণার ভাটপাড়া- কাঁকিনাড়া অঞ্চলে যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অবস্থা আরও এক বিপজ্জনক দিকে এগোতে পারে। প্রাদেশিকতা ও ভাষাগত বিরোধ নতুন করে দেখা দিতে পারে। পশ্চিমবাংলার শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন ধর্মের ও ভাষার শ্রমিকদের মধ্যে বহু লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে শ্রেণী ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা ধ্বংস করার অভিযানে মেতেছে দুই শাসকদল। এর বিরুদ্ধে জোরালো ও পাল্টা প্রচার অভিযান রাজ্য জুড়ে এখনই শুরু করে দিতে হবে। এলাকাস্তরে কর্মসূচীর উপর জোর দিতে হবে, কলকাতায় বিশিষ্ট নাগরিক/ ব্যক্তিবর্গকে যুক্ত করে গণসংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচী নিতে হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের দুটি কেন্দ্রে নির্বাচনী ফলাফলকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৪ সালের তুলনায় হুগলী কেন্দ্রে আমাদের ভোট কমেছে ১১৪০। কৃষ্ণনগরে ১৯২ মতো হ্রাস পেয়েছে। ধর্মীয় বা বিভেদের রাজনীতি এই দুটি কেন্দ্রে উপস্থিত থাকলেও এবং আমাদের গণভিত্তির উপর তার প্রভাব পড়লেও আমরা আমাদের গণভিত্তিকে মোটামুটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। বুথ ভিত্তিক রিপোর্টসহ এই দুটি কেন্দ্রে আমাদের আরও বস্তুনিষ্ট চর্চা করতে হবে। তবে আমাদের গণ ভিত্তি আগের তুলনায় ক্রমশঃ সংকুচিত হয়ে আসছে কিনা, সেটাও পর্যালোচনা করা দরকার। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের দক্ষিণ কৃষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্রে এবং হুগলীর পান্ডুয়া বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের গণভিত্তির একটা অংশ আমাদের ভোট দেয়নি। তার পেছনে সাংগঠনিক দুর্বলতাও একটা বড় কারণ। হুগলীর ধনেখালিতে প্রবল সন্ত্রাসের মুখে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কোনো কাজ করতে পারিনি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেখানে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে, কিছু সংখ্যক বামপন্থী ভোট আমরা পেয়েছি। হুগলীতে আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু জনগণের সাথে একটা সম্পর্কবিকশিত হয়েছে। বৈদ্যবাটি-চাঁপদানি এলাকায় সিপিএমের একটা ছোট শক্তি আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। নদীয়ার চাপড়ায় প্রবল সন্ত্রাসের মধ্যে কমরেডরা সাহসিকতার সাথে প্রচার কাজ করেছেন। সেখানে আমাদের ভোট কিছুটা বেড়েছে। পুরানো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকায় নতুন করে যোগাযোগ ও সক্রিয়তা সৃষ্টি করা গেছে। এই দুটি কেন্দ্রেই রাজ্য কমিটির অধিকাংশ সদস্য, উত্তর ২৪ পরগণা, কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও জলপাইগুড়ির সংগঠক কমরেডরা ভালো মাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে। সকলের মিলিত পরিশ্রমে পরিস্থিতিকে কিছুটা মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

রাজ্য রাজনীতি যথেষ্ট উত্তাল হয়ে উঠেছে। হিংসা, বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের এক আবহাওয়া গড়ে উঠছে। নির্বাচনে সাফল্য লাভ করার পর বিজেপির আগ্রাসন আরও বাড়ছে। রাজ্যের শাসকদল একে মোকাবিলা করতে যথেষ্ট দিশাহারা। নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসার কথাও শোনা যাচ্ছে। তা যদি নাও হয়, বিজেপি লাগাতার সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করে যাবে। আগামীদিনে বিভিন্ন পৌরসভা ও কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন আছে। তাকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই ওদের প্রস্তুতি চলবে। শ্রমিক মহল্লাগুলিতে, আদিবাসী প্রধান এলাকাগুলিতে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা বাড়বে। পরিস্থিতির গতি দেখে আমলাকূল তাদের ‘আনুগত্য’ বদল করতে শুরু করবে। পশ্চিমবাংলা এক অস্বাভাবিকতার দিকে যাত্রা শুরু করল। জনগণের বুনিয়াদী প্রশ্নগুলির কোনটারই মীমাংসা হল না, জনগণের গণতন্ত্র ও অধিকারগুলি আক্রান্ত হতে থাকবে। অগ্রণী বামপন্থী শক্তি হিসাবে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

আশু কর্মসূচি :

বর্তমান সময়কালে বাম কর্মীবাহিনীর প্রতি আন্তরিক আবেদন প্রচারপত্রটিকে পরিকল্পিতভাবে বাম কর্মীবাহিনী, সমর্থক ও প্রভাবিত শক্তির কাছে বিলি বন্টন করতে হবে। ছাত্র-যুব, মহিলা, শ্রমিক কর্মচারী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে নিয়ে যাওয়া, মতামত বিনিময় করার প্রক্রিয়ায় একটা অংশকে গণকনভেনশনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নির্বাচনী অবস্থান নিয়ে বাম শিবিরে নিশ্চিতভাবেই বিতর্ক থাকবে। বাস্তবে বামপন্থী শক্তি এক উত্তরণশীল/পরিবর্তশীল অবস্থায় রয়েছে। তাঁদের কাছে আমাদের পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। কোনো বৈরিতা বা বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব থেকে নয়, প্রকৃত বামপন্থী অবস্থান তুলে ধরার লক্ষ্যে আমাদের যেতে হবে। আমাদের নিজস্ব গণভিত্তির মধ্যেও এই আবেদনটিকে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

আগামী ৩০ জুলাই কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক গণকনভেনশন সংগঠিত হবে। যার শিরোনাম হবে “সংহতি ও প্রতিরোধ কনভেনশন”। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কনভেনশনে আমাদের রাজ্যের সর্বোচ্চ জমায়েত করতে হবে। বিভিন্ন গণসংগঠনগুলি এই কনভেনশনে নিজ নিজ ক্ষেত্রের প্রভাবিত শক্তি সমাবেশ ঘটানোর জন্য উদ্যোগ নেবে, পৃথক প্রচারপত্র প্রকাশ করবে। গণকনভেনশনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অংশগ্রহণ ঘটানোর জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিভিন্ন প্রকল্পকর্মী, চা বাগান শ্রমিক, আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘুদের সংগ্রামী শক্তিসমূহ; কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজকর্মী বুদ্ধিজীবী এদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কনভেনশনকে সফল করে তুলতে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের যে বাতাবরণ গড়ে উঠছে তাকে মোকাবিলা করার জন্য পাল্টা প্রচারাভিযানে নামতে হবে। আমাদের গণসংগঠনগুলি বিশেষত শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনকে নতুন পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের রূপরেখা ও প্রচার গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি বাংলার প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে নতুন পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আমাদের নতুন আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু আয়ত্ত করে নাটক, গান সহ সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নব সৃজনে মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে চালাবার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিতে হবে।

পার্টির কাঠামোগুলিকে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সংহত করার স্বার্থে রাজ্য ও জেলাস্তরে পার্টি শিক্ষণ শিবির সংগঠিত করতে হবে।

পার্টির রাজ্য সম্মেলনে পার্টির পত্র-পত্রিকা এবং প্রচার মাধ্যমকে শক্তিশালী করার ও বিস্তৃত করার জন্য আমরা আলোচনা চালিয়েছি।

পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু জনগণের মধ্যে যে ভীতির আবহাওয়া গড়ে উঠছে এবং তাদের উপর সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি হামলা বাড়ছে তাকে গণতান্ত্রিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। ইনসাফ মঞ্চের মতোই এ রাজ্যেও সংখ্যালঘু মানুষদের সংগঠিত করার জন্য কোনো গণসংগঠন গড়ে তোলা যায় কিনা তা নিয়ে আমাদের চর্চা করা উচিত।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আমাদের কাজের একটা অগ্রগতি হয়েছে। হুগলি জেলায় তাতে কিছু সফলতা এসেছে। কিন্তু এখনো তা একটি দুটি জেলাতেই আবদ্ধ। বর্ধমান, বীরভুম, বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর বাংলার দার্জিলিং জেলায় পার্টিতে আদিবাসী কমরেডরাও রয়েছেন। আদিবাসী কমরেডদের নিয়ে একটি গণসংগঠনও ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনটিকে উপরিউক্ত জেলাগুলিতে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

খণ্ড-26