ভারতীয় অর্থনীতিতে বৃদ্ধি নিয়ে আলোড়ন অবশ্যই নয়া উদারবাদী অর্থনীতির প্রত্যক্ষ সংযোজন। পূর্বতন পরিকল্পিত অর্থনীতিতে বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বেকারি বা নিয়োগ, দারিদ্র দূরীকরণ বা অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেহেতু মিশ্র অর্থনীতির নামে পরিকল্পিত অর্থনীতি একটি আধা খেচড়া বস্তু তৈরি করেছিল তাই ওই সমস্ত উদ্দেশ্যগুলিও অর্ধসিদ্ধ হয়েছে। পরিকল্পনা চালু থাকলেও ১৯৯১ সালে নয়া উদারবাদী অর্থনীতিতে তাকে লঘু করে দেওয়া হয়, যখন নরসিংহা রাও প্রধানমন্ত্রী, মনমোহন সিং অর্থমন্ত্রী ও প্রণব মুখোপাধ্যায় পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশন ও পরিকল্পিত অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি পোতা হয় মোদি সরকারের প্রথম পর্যায়ে, যখন পরিকল্পনা কমিশনকে নীতি আয়োগ (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া বা ভারতকে রূপান্তরের জাতীয় প্রতিষ্ঠান) দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়। মনে রাখা দরকার ভারতের সংবিধানের মুখবন্ধের শব্দগুলি ধীরে ধীরে অবান্তর হয়ে যাচ্ছে। একটি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত অর্থনীতিকে সমাজতন্ত্রী বলার কোনো মানেই হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতার সব আড়াল উঠিয়ে দেওয়া হয় যখন নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ধর্মকে ভিত্তি করে শর্ত নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে কেবল ধনীদের সুবিধের স্বার্থে সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার যে রীতি নয়া উদারবাদী নীতিতেই শুরু করা হয়েছিল তাকে ক্রমাগত সঙ্কুচিত করা চলছে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইরাণ বা ভেনেজুয়েলা থেকে জ্বালানী তেল কেনার ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কাছে নতজানু হওয়া। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশে কতটা রসিকতায় পর্যবসিত হয়েছে তা বিগত দিনে বিচার ব্যবস্থা, সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে নির্লজ্জ সরকারি হস্তক্ষেপে বোঝা যাচ্ছিল, সাম্প্রতিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ তাঁবেদারি দেশের গণতন্ত্রের দুরবস্থাকে প্রকট করেছে। গত নির্বাচন ও বিগত ৫ বছরের মোদি রাজ একথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, ভারতের অধিবাসীরা সংসদীয় গণতন্ত্রের বদলে একনায়কতন্ত্রর দিকে এগিয়ে চলেছে, ফলে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বিপন্ন। সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কেবল সংবিধানের মুখবন্ধেই রয়ে গিয়েছে অন্তর্বস্তুতে তার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
তাই প্রজাতন্ত্রের প্রজাদের প্রতি রাজার তেমন কোনো দায় থাকে না, দায়িত্ব থাকে তাঁকে যারা সসম্মানে সিংহাসনে বসিয়েছেন, বিরাজ করতে দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করার। কর্পোরেট দুনিয়া তাদের সাফল্য মাপে কত মুনাফা হল তার ভিত্তিতে। মুনাফার হার যত বৃদ্ধি পায় কর্পোরেটের সাফল্য তত বাড়ে। যে দলের সরকার তাদের মুনাফা বৃদ্ধিতে যত সাহায্য করে তত অনুদান কর্পোরেট জগৎ তাদের প্রদান করে। নেতাদের নয়া উদারবাদী অর্থনীতি জাঁকিয়ে বসার ফলে ভারতীয় অর্থনীতির সাফল্যও বৃদ্ধির হার দিয়ে মাপা শুরু হয়েছিল। সেই ট্র্যাডিশন গত ৩ দশক ধরে চলছে। তবে গত ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের পর থেকে কংগ্রেস আমলের সমস্ত সাফল্যকে টেক্কা দেওয়ার জন্য এক নতুন আদত শুরু হয়। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপন্ন বা জিডিপি পরিমাপের জন্য নির্দিষ্ট ভিত্তি বর্ষ থাকে। সময়ের সাথে সাথে সেই ভিত্তি বর্ষকে পাল্টাতে হয় কারণ নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন হয় ও জনজীবনে পণ্যগুলির গুরুত্বের পরিবর্তন হয়। যখনই ভিত্তি বর্ষকে পাল্টানো হয় তখন নতুন ভিত্তি বর্ষের ভিত্তিতে পুরোনো জিডিপিও কয়েক বৎসরের জন্য পরিমাপ করা হয়, তুলনা করার জন্য। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পুরাতন ভিত্তি বৎসর ২০০৪-০৫-কে পাল্টে ২০১১-১২-তে নিয়ে যায় এবং জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতিতেও বদল আনে। কিন্তু সেই নতুন ভিত্তি বৎসর ও নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী ২০১১-১২ সালের জিডিপির কোনো পরিমাপ তৈরি করে না। ফলে আগের ইউপিএ জমানার সঙ্গে এনডিএ জমানার জিডিপি বৃদ্ধির হারের তুলনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আগষ্ট, ২০১৮ সালে জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন ২০১১-১২ সালকে ভিত্তি বর্ষ ধরে নতুন পরিমাপ পদ্ধতিতে ২০০৪-০৫ সাল থেকে জিডিপি পরিমাপ করে তা পেশ করে। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংএর ইউপিএ সরকারের ১০ বছরের গড় বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৮.১%। যেখানে সেই সময়ে মোদি সরকারের ৪ বছরের গড় বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩৫%। এমনকি ইউপিএ ২-এর শেষ ৫ বছর, যাকে নীতি পঙ্গুত্বের কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সেই সময়েও গড় বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪%, মোদি জমানার থেকে বেশি। কিন্তুু ‘মোদি হায় তো মুমকিন হায়’-এর নীতিতে বিশ্বাসী নীতি আয়োগ ও তার কর্তা, যিনি সরকারি পদে থেকে এনডিএ-র হয়ে প্রচার করেছিলেন, তিনি জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের পরিমাপকে নাকচ করে নতুনভাবে পরিমাপ করে বলেন যে না, মনমোহন সিংএর ১০ বছরে বৃদ্ধির গড় হার মাত্র ৬.৭%, যা সেই সময়ের ৪ বছরের এনডিএ সরকারের আমলের ৭.৩৫% থেকে কম। কেবল তাই নয়, পরবর্তীতে সংশোধিত ও পরে চূড়ান্ত পরিমাপে ক্রমাগত জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়তে থাকে ও গড় বৃদ্ধির হার ওই ৪ বছরের জন্য দাঁড়িয়েছে ৭.৭%। ইতিমধ্যে ২০১৬-১৭ সালের নোট বাতিলের বর্ষের বৃদ্ধিকে রাজার মন রাখতে বাড়িয়ে ৮.২% পরিমাপ করা হয়েছিল। মনে রাখা দরকার ওই নোট বাতিলের বছরের বৃদ্ধিই মোদি সরকারের আমলের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। একটি নগদ নির্ভর অর্থনীতির ৮৬% নগদকে বাতিল করে দিলেও কিভাবে সে বছরে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হওয়া সম্ভব তা নীতি আয়োগের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদই বলতে পারবেন।
উপরের আলোচনা করার উদ্দেশ্য হল এই যে, যে সরকারটি ক্ষমতায় আছে তারা তাদের তাঁবেদার বাহিনী তৈরি করেছে, যার মধ্যে তেমন প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদরা না থাকলেও প্রচারের প্রাবল্যে যা হয়নি তাকেও হয়েছে বলে শংসাপত্র দিয়ে ছাড়বে। এনএসএসও-র কর্মসংস্থানবেকারি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রকাশকে বন্ধ রাখা, পরবর্তীতে জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের সদস্যদের পদত্যাগ ও পরিসংখ্যানের কারচুপি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদদের প্রতিবাদ স্মরণ করা যেতে পারে। এও মনে রাখা দরকার সেই সময় এনডিএ সরকারের সমর্থনে চার্টার্ড একাউন্টান্টদের সাক্ষরের কথা, যদিও জাতীয় উৎপাদন বা আয় হিসেবের কোনো দক্ষতাই চার্টার্ড একাউন্টান্টদের থাকে না, তেমন কোনো প্রশিক্ষণ তারা পান না। কিন্তুু ভোট পাওযার জন্য যে কোনো ধরনের দুরাচারেই সরকারের কোন খামতি নেই। তাই সমস্ত সময়েই ধাঁধার মধ্যে থাকতে হয় যে, আজ যা বলা হচ্ছে কালই তা পাল্টে দেওয়া হবে না তো। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে নির্বাচনের সময়েও ঢাক পেটানো হয়েছে, তবে পুলওয়ামা-বালাকোটের বোমার আওয়াজ তাকে কিছুটা চেপে দিয়েছে। নতুন মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকের দিনেই কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর ২০১৮-১৯ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক বা জানুযারি-মার্চ সময়কালের জিডিপি তথ্য ও ২০১৮- ১৯ সালের অর্থ বর্ষের জিডিপি তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই তথ্য অনুসারে উক্ত ত্রৈমাসিকের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বিগত ৫ বছরে সর্বনিম্ন ৫.৮%-এ নেমে এসেছে। ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিকবৃদ্ধির হারও গত ৫ বছরের সর্বনিম্ন স্তরে, ৬.৮%-এ কমে এসেছে, যা গত বছরে ৭.২% ও তার আগের বছরে ৮.২% বলে ঘোষিত হয়েছিল। ২০১৭-১৮ সালের তুলনায় ২০১৮-১৯ সালের কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৫.৫ থেকে কমে ২.৯% এ পৌঁছেছে। খনিজ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৫.১% থেকে কমে ১.৩% হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ও নির্মাণ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়লেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা যথেষ্টই কমেছে। সামগ্রিকে ভারতীয় অর্থনীতির হাল ২০১৮-১৯ সালে এবং বিশেষত, শেষ ত্রৈমাসিকে যথেষ্ট খারাপ হয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতিকে বর্তমান ২.৭ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি থেকে ১০ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার প্রকল্প ঘোষণা করেছে। তা করতে গেলে, যদি টাকার ডলার মূল্যকে এক রাখা যায় তাহলেও জিডিপি বৃদ্ধির হারকে বার্ষিক ১১.৫%-এ বজায় রাখতে হবে। এই বৃদ্ধির হারের কাছাকাছিও কখনো পৌঁছতে পারেনি এনডিএ সরকার।
ইতিমধ্যে নতুন মন্ত্রীসভার প্রথম দিনই কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতরের (এনএসএসও)র যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি, কারণ সেই রিপোর্ট সরকারের কর্মসংস্থানের দৈন্যতাকে প্রকট করে জানিয়ে দিয়েছিল যে, গত ৪৫ বছরে কর্মহীনতার হার এত নিদারুণ পরিস্থিতিতে কখনো পৌঁছায়নি। নির্বাচনে জিততে গেলে অমন রিপোর্টকে মান্যতা দেওযা যায় না, তাই নীতি আয়োগের নীতিবান ভাইস চেয়ারম্যান থেকে মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই বলতে শুরু করলেন রিপোর্টটাই ভুল, এত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যখন হচ্ছে কর্মসংস্থানও হচ্ছে। কিন্তুু নির্বাচনের পরে রিপোর্ট প্রকাশিত হল। আগের অপ্রকাশিত রিপোর্টটিই মান্যতা পেল। কর্মহীনতার হার ১৯৭২- ৭৩ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ ৬.১% এ পৌঁছেছে। কেবল তাই নয়, রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রামীণ ভারতে বেকারির হারের, ৫.৩%-এর তুলনায় নাগরিক ভারতে বেকারীর হার, ৭.৮% অনেকটাই বেশি। গ্রামীণ শিক্ষিত পুরুষের বেকারির হার ১০.৫%। গ্রামীণ তরুণদের বেকারির হার ১৭.৪% যেখানে তরুণীদের ক্ষেত্রে সেই হার ১৩.৬%।
এনএসএসও তথ্য ভারতের কর্মসংস্থানের করুণ ছবি তুলে ধরলেও, অধিক দুর্দশা ফুটে উঠেছে সেনটার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনোমি (সিএমআইই)-র প্রকাশিত তথ্যে। সিএমআইই প্রকাশিত কর্মহীনতার তথ্য অনুসারে ২০১৭ সালের জানুয়ারি এপ্রিল সময়কালে কর্মহীনতার হার ছিল ৭.৬৬%, ২০১৮ সালের সমসময়ে তা বেড়ে হয়েছিল ৭.৯১%, আর ২০১৯-এর জানুয়ারি-এপ্রিলে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯.৩৫%। সিএমআইই তথ্য আরো জানিয়েছে যে, স্নাতক উত্তীর্ণশিক্ষিত কর্মপ্রার্থীদের কর্মহীনতার হার ২০১৭ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়কালের ১৪% থেকে বেড়ে ২০১৭-র জানুযারি এপ্রিলে ১৭%-এ পৌঁছেছে। ফলে স্নাতক উত্তীর্ণশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২ বছরের মধ্যে ৮৪ লক্ষ থেকে ৩১% বেড়ে ১১১ লক্ষে উপনীত হয়েছে। তার মানে ১ কোটি ১১ লক্ষ স্নাতকের সাথে দশম শ্রেণী-একাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ আরো ২ কোটি ২০ লক্ষ বেকারকে যুক্ত করলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩১ লক্ষ। তাই তথ্যে প্রকাশিত স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে বেকারির হার কম, ২%। এই যে কম বেকারির হার তার কারণ এই নয় যে সকলে উপযুক্ত জীবন-ধারণের কাজ পাচ্ছে, বরং এটিই যে, তাদের পক্ষে কাজ না করে থাকার বিলাসিতা সম্ভব নয় বলে বেঁচে থাকার জন্য যে কোন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সিএমআইই-র তথ্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রকট করেছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে কর্মহীনতার হার যেখানে ২৫.৭%, পুরুষদের ক্ষেত্রে সেই হার ৬.৮%। ফলে বৃহৎ সংখ্যক কর্মপ্রার্থী মহিলাকে কর্মহীন থাকতে হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ ভারতীয় সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতা।
সামগ্রিকে এনডিএ (২.০) সরকার তাদের নতুন ইনিংস শুরু করার সময়ে প্রথম ইনিংসের অর্থনীতির হালচাল নিয়ে যে সমস্ত তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে তা ভারতীয় জনগণের পক্ষে সুখকর নয়। যদিও এনডিএ-র মুখপাত্ররা অবশ্যই বলবে যে, ভারতীয় জনগণ যখন বিপুল রায় দিয়ে তাদের জিতিয়ে এনেছে তখন জনগণ নিশ্চিত আনন্দেই আছেন, কর্মহীন অবসরের আনন্দে। কিন্তুু একথা তারা না বললেও আমরা জানতে পারছি যে নির্বাচনের সামগ্রিক খরচের অর্ধেক করেছে কেবল বিজেপি। পাশাপাশি ভোটারদের মন কাড়ার জন্য সরকারি বাজেট বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশই খরচ করা হয়েছে কেবল এপ্রিল মাসে। কর্পোরেট পোষিত অনুদান ব্যয় করে প্রবল আড়ম্বরের নির্বাচনী প্রচার কর্মহীনতার দু:খকে অতিক্রম করে হিন্দুত্ব ও পাকিস্তান বিরোধী সার্জিকাল স্ট্রাইকের আনন্দের অনুভব জনগণের হৃদয়ে পৌছে দিয়েছে। তথাপি মনে রাখতে হবে যুদ্ধের উন্মাদনা কর্মহীনতার হতাশা বা ক্ষুধাকে কখনো কখনো আড়াল করে দিলেও সে উন্মাদনা কেটে গেলে জনগণকে অসহায় করেও তুলতে পারে, আবার সংগ্রামীও করে তোলে।