অ্যাডলফ হিটলার, ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়া জার্মানির সীমান্তে জন্ম। বাবা শুল্ক কর্মচারী। পড়াশোনায় কোনো দিন মন বসেনি। ভবঘুরে জীবন কাটিয়ে সেনাবাহিনীতে প্রথমে আর্দালি পরে পিওন পদে কাজ করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সেনাবাহিনীতে গুপ্তচর হিসেবে যোগদান। গুপ্তচর বৃত্তি করতে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগদান ও সেনাবাহিনীতে খবরাখবর দেওয়া। এই পার্টিতে থেকেই প্রচন্ড ইহুদি বিদ্বেষী, কমিউনিস্ট বিদ্বেষী ও গণতন্ত্র বিরোধী হয়ে যায়। ক্রমে পার্টির প্রধান হয়ে পার্টির নাম পরিবর্তন করে, ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি সংক্ষেপে নাজি বা নাৎসী পার্টি গড়ে তোলে। এদের কর্মসূচি ছিল (১) ইহুদি বিদ্বেষী (২) কমিউনিস্ট বিদ্বেষ (৩) আর্যদের প্রাধান্য (৪) গণতন্ত্রের বিরোধিতা (৫) উগ্র জাতীয়তাবাদ। জার্মানির পুঁজিপতিরা ও ব্যবসায়ী মহল এমনকি ইহুদি ব্যবসায়ীরাও হিটলারকে সমর্থন করে ও টাকার স্রোত বইতে থাকে।যেটা ভারতে এখন বিজেপি পাচ্ছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বেকার হয়ে যাওয়া উগ্র কমিউনিস্ট বিরোধী সৈন্যদের নিয়ে হিটলার তৈরি করল ব্রাউন শার্ট ইউনিফর্মের কুখ্যাত এসএ বাহিনী। আর এদের উপর নজরদারি ও নিজের দেহরক্ষী হিসেবে তৈরী হলো ব্ল্যাক শার্টনামে আর একটি বাহিনী। নাৎসী পার্টিতে সর্বেসর্বা হিটলার, শুরু হলো ফ্যাসিবাদ।
১৯২৮ সালে রাইখস্ট্যাগে (জার্মান সংসদ) নির্বাচনে নাৎসীরা পেল ১২টি আসন, কমিউনিস্টরা পেল ৫৪টি আসন। হিটলারকে পাঁচ বৎসর অপেক্ষা করতে হল। ১৯৩৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে রাইখস্ট্যাগে আগুন লাগল, বলা ভালো আগুন লাগানো হল।কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই তৎকালীন জার্মানির সমস্ত কাগজগুলো কমিউনিস্ট বিরোধী প্রচার শুরু করলো। উপরন্তু ১৯৩৩-র ৫ মার্চ রাইখস্ট্যাগের নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দল একসাথে লড়াই করতে পারলো না। হিটলার ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল (ভারতের সঙ্গে মেলে)। নির্বাচনে জিতেই দুই তিন মাসের মধ্যে সমস্ত বিরোধী দল, সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন ও সমস্ত গণ সংগঠনকে বেআইনি ঘোষণা করে ভেঙে দিল। বিভিন্ন পাঠাগার থেকে প্রগতিশীল বই রাস্তায় ফেলে পোড়ানো হলো। বই পোড়ানো উৎসব সংগঠিত হলো। মহিলাদের বাইরের কাজ নিষিদ্ধ হলো। সন্তান উৎপাদন ও ঘরকন্নার কাজ একমাত্র মেয়েদের কাজ বলা হলো। গোয়েবলস্ জনমানসে হিটলারকে ঈশ্বরের দূত হিসেবে প্রতিপন্ন করতে থাকে। হেইল হিটলার বা হাইল হিটলার (রক্ষাকর্তা হিটলার) শব্দটি মুখে মুখে ঘুরে বেড়ালো (যেমন বিজেপি-র জয় শ্রীরাম ধ্বনি)।
এর পরের ইতিহাস শুধুই খুনের ইতিহাস। শুধু শ্রমিক নেতা বা কমিউনিস্ট নয়, গণতান্ত্রিক মানুষ পাদ্রীও খুন হয়েছে হাজারে হাজারে। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বা গ্যাস চেম্বারে মানুষকে পাঠিয়ে খুন করা হিটলারের কাছে নিয়মিত কাজ ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যাণ্ড দখলের পর বন্দী শিবিরে নির্বিচারে হত্যা করা হলো। ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে সঙ্গে নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করে সোভিয়েতকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা।কিন্তু মহান স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েতের সাহসী মানুষ রুখে দিতে পেরেছিল অত্যাচারি হিটলারকে।
ভারতে বর্তমানের বিজেপি যাদের মূল সংগঠন আরএসএস মূলত উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল। ইতিহাসের আরও এক কুখ্যাত নায়ক ইতালির মুসোলিনি, যিনি ক্ষমতায় এসেই শ্রমিক হত্যা করে কর্পোরেট রাজ চালু করেন ও হিটলারের কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমএস গোলওয়ালকর, কেবি হেডগেওয়ার, সাভারকার ও বিএস মুঞ্জের মস্তিষ্কপ্রসূত সংগঠন। মুঞ্জে মুসোলিনির সঙ্গে সংগঠন নিয়ে আলোচনা করতে ইতালি গিয়েছিলেন। ইহুদি বিদ্বেষের মতো মুসলিম বিদ্বেষ, কমিউনিস্ট বিদ্বেষ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিরোধিতা এই দলের মূল এজেন্ডা। হিটলার যেমন তার বাগ্মীতার জোরে মিল মালিক ও মিলের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক উভয়েরই মন জয় করে ভোটে জিতেছেন। বিজেপির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যে মানুষ অত্যাচারিত সেও জয় শ্রীরাম বলে ছুটে চলেছে। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে ভারতের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি দলীয় প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। বিরোধী স্বরকে হত্যা করা হচ্ছে (গৌরী লঙ্কেশ)। আগামী দিনে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে চাইছে।
গত পাঁচ বছরে যা করেছে তার সব সুবিধা পেয়েছে কর্পোরেট সেক্টর। নতুন কাজ দূর অস্ত। যারা কাজ করছিলেন, তারা কর্মহীন হয়েছেন। স্বাধীনতার পর এই প্রথম রেকর্ড সংখ্যক বেকার দেখা যাচ্ছে। পিএসইউ সংস্থাগুলিকে হয় উঠিয়ে দেওয়া বা বেসরকারি করে দিতে চাইছে প্রকাশ্যেই।
- সন্দীপ দেবনাথ (হোয়াটস অ্যাপের পাতা থেকে)