ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে গোষ্ঠী সংঘর্ষে দীর্ণ কাঁকিনাড়া-জগদ্দল অঞ্চলের জনজীবন। কিন্তুু ঘটনার ঘনঘটা তার পিছু ছাড়ছে না। বাড়ি-দোকান ঘর লুঠ, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, প্রাণভয়ে শয়ে শয়ে মানুষের অঞ্চল থেকে পলায়ন, ট্রেন অবরোধ, ট্রেনে বোমা মারা, দিনের পর দিন বাস বন্ধ, অঞ্চলে মুড়ি মুড়কির মতো বোমাবাজির সাক্ষী এই অঞ্চলের মানুষ। এক পক্ষকাল অতিক্রম করা সত্বেও সেই ভয়-ঘৃণা-বিদ্বেষ-আশঙ্কা থেকে তারা মুক্ত হতে পারছে কই? আজও বিশাল পুলিশ বাহিনীর টহল, বিভিন্ন মহল্লায় ১৪৪ ধারা জারি, অনেক জায়গায় দোকান বাজার বন্ধ, উত্তেজনার কারণে শ্রমিক কাজে যেতে ভয় পাচ্ছে । তিন শিফটের জুট মিলগুলোতে এখনো কোথাও এক শিফট কোথাও দুই শিফট কাজ হচ্ছে। এখনো ভয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি অনেক মানুষ। কারণ প্রতিদিন ঘৃণা-আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভেদ রাজনীতির কারবারিরা। তার মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রাদেশিকতার ইন্ধন দিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছেন।
ভাটপাড়া বিধানসভার অন্তর্গত এই অঞ্চলটিতে মিশ্র মানুষের বাস। বাংলাভাষী হিন্দুভোটার প্রায় ৪০ হাজার (২৭.৫%), হিন্দীভাষী হিন্দুভোটার ৬৮ হাজার (৪৬.২%) এবং হিন্দী-উর্দুভাষী মুসলিম ভোটার ৩৮ হাজার (২৬.২%)। রাজ্যের মধ্যে বড় পৌরসভা ভাটপাড়া, এর ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৭টি ওয়ার্ডনিয়ে গঠিত ভাটপাড়া বিধানসভা। ফলে আয়তনে ছোট হলেও এই বিধানসভা ঘিঞ্জি ও জনবহুল। এই অঞ্চলে গঙ্গার ধার দিয়ে রিলায়েন্স, কাঁকিনাড়া, নফরচাঁদ, জগদ্দল, এ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়া, মেঘনা, এ্যালায়েন্স সহ ৭টি জুটমিলের সারি। আর এই জুট মিলগুলোতে কাজের জন্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ সহ পার্শ্বর্তী রাজ্য থেকে বিভিন্ন জাত-ধর্মের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে আগমন ও পাশাপাশি বসবাস। আজ শাসকরা এই শ্রমিকদেরকে তাদের স্বার্থে লড়িয়ে দিচ্ছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষে শ্রমিক মহল্লাগুলিতে জ্বলছে আগুন।
এই অঞ্চলে গোষ্ঠী সংঘর্ষকোন নতুন ঘটনা নয়। ১৯৭০-৭১ সালে যখন অর্জুন সিং-এর বাবা সত্যনারায়ণ সিং কংগ্রেসের বিধায়ক তখনও দাঙ্গায় অনেক সংখ্যালঘু মানুষকে হত্যা করা হয় ও তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। এমনকি গত বছর মার্চমাসে তৃণমূল দলের উদ্যোগে অর্জুন সিং-এর নেতৃত্বে রাম নবমীর মিছিল থেকে সংখ্যালঘু মানুষের উপর হামলার ঘটনায় বেশ কিছুদিন অঞ্চলে চরম অশান্তি তৈরি হয়।
বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে এই ভাটপাড়া বিধানসভায় বাহুবলী নেতা অর্জুন সিং-এর একচেটিয়া দাপট। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনকে ধরে বারাকপুর লোকসভা জুড়ে অর্জুন সিং তার প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হয়। এবার গণ্ডগোলের সূত্রপাত অর্জুন সিং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার পর। বিজেপির প্রার্থী হয়েই জগদ্দল অঞ্চলে প্রায় দু-হাজার লোকের মিছিল থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়। এরপর থেকেই চলতে থাকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে হিন্দু ভোটকে সংহত করা। অচিরেই দক্ষ বাহুবলী নেতা সিংহভাগ হিন্দুদেরই তার পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। আর এর বিপরীতে সংখ্যালঘুদের প্রায় সকলেই নিরাপত্তার কারণে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের পতাকাতলে জড়ো হতে থাকে। পুরো লোকসভা ভোট ঐ অঞ্চলে এই মেরুকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়। যেহেতু অর্জুন সিং তৃণমূলের বেশিরভাগ কাউন্সিলর সহ আঞ্চলিক নেতৃত্বকে দ্রুত তার পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং হিন্দুভোটের (বাংলা ও হিন্দীভাষী) উপর তার আধিপত্যও বাড়তে থাকে, তাই শক্তির ভারসাম্য পুরোটাই (সংখ্যালঘু অংশ বাদে) তার অনুকুলে চলে যায়। প্রথমদিকে তৃণমূল সংঘর্ষ করে এই বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা চালালেও পরের দিকে কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়ে। ফলে লোকসভা ভোটে যতটা গন্ডগোলের আশঙ্কা করা হয়েছিল তার তুলনায় শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।
কিন্তুু গোল বাধে ৬ মে লোকসভা নির্বাচনের পর ১৯ মে ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী যেমন অর্জুন পুত্র পবন সিং, তেমনি তৃণমূল থেকে প্রার্থী করে আনা হয় আরেক বাহুবলী নেতা মদন মিত্রকে। লোকসভার ভোটে ততক্ষণে পরিস্কার হয়ে যায় হিন্দীভাষী হিন্দুভোটারদের উপর অর্জুনের একাধিপত্য। মদন মিত্র জানে শুধু সংখ্যালঘু ভোটে জেতা সম্ভব নয়, ভাঙ্গতে হবে হিন্দুভোটের একাধিপত্য। আর এই লক্ষ্যেই অঞ্চলের তৃণমূলের কর্মীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি কামারহাটি সহ বাইরের থেকে কিছু বাছাইকরা দুষ্কৃতী নিয়ে বারবার চেষ্টা করে অর্জুনের গড়ে হানা দেওয়ার। মদন মিত্র হিন্দুভোট ব্যাঙ্ক এলাকা পুনরুদ্ধারের লড়াই চালায় তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি সংখ্যালঘু পাড়াগুলিকে কেন্দ্র করে। এই হামলা পাল্টা হামলা পুরো নির্বাচন পর্যায় জুড়ে চলতে থাকে, যা চরম পরিণতি পায় নির্বাচনের দিন। ঐ দিন দুপুর থেকে দু’পক্ষের যে ব্যাপক বোমাবাজি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ শুরু হলো আজও তার জের চলছে। শুরুতে যা ছিল দুই দলের ভোটের জন্য এলাকা দখলের লড়াই, বিজেপি সুচতুরভাবে সমগ্র হিন্দুভোট সংহত করতে তাকে গোষ্ঠী সংঘর্ষে পরিণত করলো।
আর এসব কিছুই দিনের পর দিন ঘটে চললো নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ বিশাল প্রশাসন বাহিনীর উপস্থিতিতে। তাই এই গন্ডগোল ও গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। বিশেষ করে নির্বাচনে হেরে ২৩ মে সন্ধ্যা থেকে পুরো ব্যারাকপুর লোকসভা থেকেই যেন তৃণমূল দলটা উবে যায়। সমগ্র অঞ্চলটা চলে যায় অর্জুন সিং-এর হাতে। আর একতরফা চলতে থাকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা। প্রশাসন নীরব দর্শক। অথচ ২৮ মে প্রশাসনের দখল যখন নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে রাজ্যের হাতে আসলো, তখন থেকেই এই সংঘর্ষের প্রকোপ কমতে লাগলো!
২৫ মে যখন সমগ্র অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি, তার মধ্যেই জেলা পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ঐ অঞ্চলে যাই। দেখি শয়ে শয়ে আধাসেনা বাহিনী রাইফেল হাতে পুরো অঞ্চল পাহারা দিচ্ছে, নীল বাতি লাগানো পুলিশের অজস্র গাড়ি এলাকা জুড়ে টহল দিচ্ছে, পুলিশের জিপে মাইক লাগিয়ে অঞ্চলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার ঘোষণা চলছে। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার ঐ ছোট্ট অঞ্চলে এত আধাসেনা ও পুলিশ দিনের পর দিন মোতায়েন থাকা সত্বেও সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ নেই। ঐ দিন সকালেই বাস রাস্তার পাশে একজন সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর দোকানের লক্ষাধিক টাকার মাল লুঠ করে পুড়িয়ে দেয় দাঙ্গাবাজরা। আমরা ঐ অঞ্চলে পৌঁছে যখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি তখন ৫০ মিটার দূরে বাস রাস্তার উপর একটা বোমা পড়লো। তাই দেখে ওখানকার মানুষের বক্তব্য ‘বোমা টেস্টিং’ হচ্ছে। পুলিশের কোন হেলদোল নেই। অঞ্চলের সমস্ত মানুষ জানে বিজেপির নেতৃত্বে এইসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে দাগী অপরাধীরা। নাম উঠে এসেছে কুখ্যাত আরও কয়েক জনের। অথচ তাদের গ্রেফতারের কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। এসব ঘটনা দেখিয়ে দেয় ঐ সময় প্রশাসন নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল না।
এই সংঘর্ষে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চল চারটি – (১) কাঁকিনাড়া জুট মিল লাইন সহ ৫ ও ৬ নম্বর সাইডিং – টিনা গুদাম, (২) আর্য সমাজ – বারুইপাড়া, (৩) কাটাপুকুর সংলগ্ন অঞ্চল – মানীকপীড়, (৪) মেঘনা মিল সংলগ্ন রুস্তম গুমটি। এই চারটি অঞ্চলেই সংখ্যালঘু মানুষের বাস।
এই অঞ্চলগুলোতে প্রায় শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর, ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া, এমনকি কিছু বাড়ি অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভাঙচুরের আগে চলেছে যথেষ্ট লুটপাট। তারা আজ সর্বস্বান্ত। অনেকেই মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা ও গয়না বাড়িতে রেখেছিল, তাও লুঠ করে নেয় দুষ্কৃতিরা। কাঁকিনাড়া বাজার, জেজেআই মেইন রোড সহ বাস রাস্তার আশেপাশে ছোট বড় অসংখ্য দোকানও লুটপাট করে ভেঙ্গে দেওয়া হয়, নতুবা আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে প্রায় ৫০ বছরের পুরনো ও পরিচিত জুতোর দোকান, মোবাইল শপ, টেলারিং, স্টেশনারি, সাইকেলের দোকান প্রভৃতি। অনেক দোকানে কয়েক লক্ষ টাকার মাল লুঠ করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই সমস্ত বাড়ি-ঘর-দোকান সংখ্যালঘু মানুষের। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন স্বচ্ছল, আজ তারা আক্ষরিক অর্থেই পথে বসেছেন। আবার কাঁকিনাড়া জুট মিল অঞ্চলে কিছু গরিব সংখ্যালঘু মানুষ ঝুপড়িতে বাস করতো, তাদের ঝুপড়ি জ্বালিয়ে উচ্ছেদ করে জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়। এই কাজে ঐ অঞ্চলের দলিত সাফাই কর্মীদের ব্যবহার করে ফ্যাসিস্টরা। অন্যান্য অঞ্চলে এই লুটপাটে হিন্দীভাষী উচ্চবর্ণদের উস্কানি বা অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই আতঙ্কের পরিবেশে ঘরছাড়া কয়েক হাজার সংখ্যালঘু মানুষ। প্রথমে তারা সরিয়ে দেয় বাড়ির মহিলা ও শিশুদের। পরবর্তীতে তারাও চলে যেতে বাধ্য হয়। যারা থেকে যায় তাদের একটা বড় অংশই বয়স্ক মানুষ। এখন তাদের কেউ কেউ ঘরে ফিরলেও, অনেক মানুষই এক্ষুণি ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছে না।
এত বিভেদ-ঘৃণার রাজনীতির মধ্যে বেশ কিছু সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণও চোখে পড়ে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কপুর সর্দার ও বকর মহল্লার হিন্দীভাষীরা পালা করে মসজিদ পাহারা দেয় যাতে তাদের মহল্লার মুসলিম ভাইরা রোজার মধ্যে শান্তিতে নামাজ পড়তে পারে। এছাড়া এই সংঘর্ষে বাঙালী হিন্দুরা একদম নিজেদের জড়ায়নি। যার ফলে বাঙালী অঞ্চলের বসবাসকারী সংখ্যালঘু মানুষদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়নি।
শুধু ঐ অঞ্চলে নয়, নৈহাটি সহ পার্শ্বর্তী অঞ্চলগুলোতেও হিন্দুদের খেপিয়ে দিতে রটিয়ে দেওয়া হয় প্রচুর হিন্দু বাড়ি ভাঙছে মুসলিমরা। কিন্তুু অনুসন্ধানে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ মেলেনি। তবে তৃণমূল করার কারণে বিজেপি কয়েকটি হিন্দু বাড়ির উপর হামলা চালায় এবং বেশ কিছু তৃণমূলের পার্টি অফিসও হামলা করে দখল নেয়। কিন্তুু এই হামলার সঙ্গে মুসলিমদের কোন যোগ ছিল না। হিন্দুদের সব দোকান অক্ষত। ক্ষতি শুধু একপক্ষের — যারা সংখ্যালঘু। অথচ এই পুরো পর্যায় জুড়ে কিন্তু ঐ অঞ্চলের সাধারণ হিন্দুরাও ভীত। ইসলামোফোবিয়া! অর্জুন সিং ও তার বাহিনী নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয় — হিন্দু খতরেমে হ্যায়, তাই জোট বাঁধো, পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নাও। ‘ওরা’ খুব বেড়ে গেছে, তাই ওদের হাতে ভাতে এমনভাবে মারো যাতে মাথা তুলে আর দাঁড়াতে না পারে। ফ্যাসিবাদের এখানেই জোর। যখন মুসলিমরা সর্বস্ব খুইয়ে প্রাণ ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে, তখন হিন্দুরা কল্পিত মুসলিম হামলার ভয়ে লাঠি হাতে রাত জেগে তাদের মহল্লাগুলি পাহাড়া দিচ্ছে! অথচ তারা দুপক্ষই একই জুট মিলে, কেউ কেউ একই মেশিনে বছর বছর কাজ করে এসেছে। যে শ্রমিক দু’দিন আগেও জুট মিলে শ্রমিক বিরোধী কালা চুক্তির জন্য অর্জুন সিংকে ঘেন্না করতো সেও আজ আতঙ্কে অর্জুন সিংদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে।
ঐ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের স্থায়ী বাসিন্দা ও জুট আন্দোলনের সংগঠক স্বপন দাস আমাদের জানালেন — এটা একটা “নিয়ন্ত্রিত দাঙ্গা”। এই কয়েকদিনে কম করে হাজারের উপর বোমা পড়েছে, গুলিও চলেছে। কিন্তুু কোনো প্রাণঘাতী ঘটনা নেই। যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। বিজেপির উদ্দেশ্য ছিল দাঙ্গার আবহাওয়ায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়-ঘৃণা জাগিয়ে হিন্দুদের তাদের পক্ষে এককাট্টা করা, আর মুসলিমদের এমনভাবে কোমর ভেঙ্গে দেওয়া যাতে তারা তাদের বিরোধিতা তো দূরের কথা উল্টে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে জয়, বিরোধী সমস্ত শক্তির অনুপস্থিতি এবং নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সহযোগিতায় অর্জুন সিংরা এই খেলায় একশো শতাংশ সফল। এবার মুসলিম সমাজকেও ভাবতে বাধ্য করবে যে শুধুমাত্র শাসকের ভোট ব্যাঙ্ক হয়ে বাঁচা সম্ভব কিনা, যদি না তারা সমাজ পরিবর্তনের লড়াই-এ নিজেদের সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে পারে। আর যে শ্রমিকরা আজ হিন্দুহিন্দু করে লাফাচ্ছে, বাস্তবের রুক্ষ জমি তাদের আবারো বাধ্য করবে সেই রুটি রুজি গণতন্ত্রের কঠিন লড়াইয়ে শামিল হতে। আমাদেরও খুঁজে দেখতে হবে শ্রমিক আন্দোলনে কোথায় থেকে যাচ্ছে ফাঁক, যার ফলে আমাদের চেনা শ্রমিকরাও মাঝেমধ্যেই অচেনা হয়ে যাচ্ছে !’’