ঘটনা ও প্রবণতা : ৭০০০ ব্যাঙ্ক জালিয়াতি, ক্ষতি ৭১৫০০ কোটি টাকা

ব্যাঙ্ক জালিয়াতি রোধে কেন্দ্র একাধিক পদক্ষেপ করলেও তা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত অর্থবর্ষে ৬৮০০-র বেশি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, যার মোট অর্থমূল্য ৭১৫০০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ব্যাঙ্কগুলি মোট ৫৯১৬টি জালিয়াতির ঘটনার উল্লেখ করেছিল। আর্থিক মূল্যে যার পরিমাণ ৪১১৬৭.০৩ কোটি টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে করা এক আবেদনের জবাবে এই তথ্য দিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর তরফে তথ্যের অধিকার আইনে দেশে কত ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে তা জানতে চাওয়া হয়। তার জবাবে আরবিআই জানায়, গত অর্থবর্ষে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ও বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ৭১৫৪২.৯৩ কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতির ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে, যা তার আগের অর্থবর্ষের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। মোট ৬৮০১টি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।

গত ১১ অর্থবর্ষে মোট ৫৩৩৩৪টি জালিয়াতির ঘটনার কথা জানিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। আর্থিক অঙ্কে যার পরিমাণ ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষে ৪৩৭২টি জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাঙ্কগুলির ১৮৬০.০৯ কোটি টাকা এবং ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে ৪৬৬৯টি জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাঙ্কগুলি ১৯৯৮.৯৪ কোটি টাকা হারিয়েছে। জালিয়াতির ঘটনায় রাশ টানতে পারেনি কেন্দ্র। ফলস্বরূপ, ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা বেড়েই গিয়েছে এবং তার পরিণামে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির বোঝা বইতে হয়েছে দেশের প্রায় সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকেই।

নীরব মোদী এবং বিজয় মালিয়ার মতো ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যাঙ্ক জালিয়াতর ঘটনায় ব্যাঙ্কগুলি যখন বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই সময় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির এই তথ্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। বড় ধরনের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসায় দেশের দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ামক সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে এবং ১০০টি বড় ধরনের জালিয়াতির রিপোর্ট তৈরি করেছে।

ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনার বিশ্লেষণ করার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা কী উপায় অবলম্বন করেছে, কত টাকা তছরুপ করা হয়েছে, ঋণের প্রকৃতি, কী ধরনের ত্রুটি ছিল, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ফাঁকফোকর ছিল তা খতিয়ে দেখেছে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন।

১৩টি শ্রেণীবদ্ধ করে জালিয়াতিগুলিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যে ক্ষেত্রগুলির ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে তার মধ্যে গয়না ও মূল্যবান রত্ন, উৎপাদন ও শিল্প, কৃষি, গণমাধ্যম, বিমান পরিবহন, পরিষেবা ও প্রকল্প, চেক গণনা, ব্যবসা, তথ্যপ্রযুক্তি, রপ্তানি ব্যবসা, মেয়াদি আমানত, ডিমান্ড লোন এবং লেটার অফ কমফোর্ট রয়েছে। গোটা বিষয় খতিয়ে দেখার পর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর এবং নজরদারি ব্যবস্থা মজবুত করার পরামর্শ দিয়েছে সিভিসি।

গতবছর আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ৬০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় আইডিবিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি, এয়ার সেলের প্রাক্তন সিএমডিসি শিবশঙ্করণ, তাঁর ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শিবশঙ্করণের ছেলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হয়। এছাড়া, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আইডিবিআই ব্যাঙ্কে কাজ করেছিলেন এমন ১৫ জন আধিকারিকের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়। শিবশঙ্করণের অধীনে এই আধিকারিকরা কাজ করেছিলেন এবং তাদের সময়ই ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল, রিপোর্টে জানায় সিভিসি।

-- এইসময়, ৪ জুন ২০১৯

খণ্ড-26
সংখ্যা-15