মোদীরাজ শুরুটা করেছিল একের পর এক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে। কথা দিয়েছিল ‘অচ্ছে দিন’ নিয়ে আসার, সুদিন আনার; বলেছিল, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ রূপায়ণের। কিন্তু পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ দলের হয়ে মোদী আর মোদীর হয়ে দলের চেহারা এখন একেবারেই আলাদা। প্রতিশ্রুতি পূরণের কোথায় কি হল তার গ্রহণযোগ্য তথ্য পরিসংখ্যান শুনিয়ে ভোট চাওয়ার বড় গলা আর নেই। মুখে এখন ভিন্ন সুর, অন্য কথা। ভোট চাইতে হচ্ছে এখন নতুন গরম ইস্যু পাকিয়ে তুলে, সীমান্তে জঙ্গী হানায় সংঘটিত পুলওয়ামার আঘাতের জবাবে বালাকোটে ঢুকে তার ‘বদলা’ নেওয়ার কথা শুনিয়ে। ভোট চাইতে হচ্ছে সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় ‘মজবুর’ নয়, মজবুত সরকার থাকার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। জনজীবনের জ্বলন্ত দাবিগুলোকে যে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে, এ নির্জলা সত্য চাপা দেওয়ার সমস্ত উপায়গুলো অকেজো হয়ে গেছে। তাই ‘এই করেছি ঐ করেছি’ বলে জনচিত্ত ভুলিয়ে ভোট আত্মসাৎ করার কেরামতি দেখানো খুবই মুশকিল। বরং ঘরে-বাইরে শত্রুপক্ষের হাত থেকে ‘দেশরক্ষা’র ধূয়ো তুলে কঠোর রাষ্ট্রবাদের আবশ্যিকতার সপক্ষে প্রচারের বান ছুটিয়ে ভোট গিলে খাওয়াকেই বিজেপি লক্ষ্য বানিয়েছে। কিন্তু এটাও এত সহজে হওয়ার নয়। মানুষের মনের এভাবে দখল পাওয়া এত সুলভ নয়। কারণ মানুষতো দেখেছে বিগত পাঁচটি বছরে দেশের-দশের জীবন-জীবিকা-গণতন্ত্রের কি সর্বনাশ করেছে মোদী জমানা!
মোদী দুর্নীতি ঝেঁটিয়ে দূর করার এক বলদর্পী আওয়াজ দিয়েছিলেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। কেন্দ্রে তার পাঁচ বছরের রাজত্বে প্রমাণিত হয়ে গেছে, সবটাই ভাবভঙ্গী-ভন্ডামী সর্বস্ব অতিগর্জন। বিদেশ থেকে কালো টাকা ধরে এনে সাধারণ নাগরিকের একাউন্টে ভরে দেওয়ার গলাবাজি বন্ধ হয়ে গেছে। পরন্তু মোদী সরকারের ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকার সুযোগ নিয়ে দেশের ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচারকারীরা সকলেই মোদী ঘনিষ্ঠ অতি ধান্দাবাজ কারবারের পুঁজিপতির দল, যারা থাকত মোদীর লাগাতার বিদেশ ভ্রমণের নিত্যসঙ্গী। অবশেষে ফাঁস হয়ে গেছে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে বরাত পাওয়ার বিষয়টির সরকারি ক্ষেত্র থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রে হস্তান্তর হওয়ার সযত্নে লালিত গোপন তথ্যটি। যার সাথে জড়িয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গায়েও লেগেছে দুর্নীতির গন্ধ। আত্মরক্ষার্থে একটি মিথ্যা ঢাকতে একগুচ্ছ মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে মোদীকে, আর মানুষজন মনে করতে শুরু করেছেন সন্দেহের মধ্যেই রয়েছে সত্য। কেন্দ্রে ক্ষমতায় অভিষেকের গোড়াপত্তনের সময়ে মোদী নিজেকে বিজ্ঞাপিত করতেন ‘চা-ওয়ালা’! মেয়াদ শেষের শুরুতে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে নিজেকে দাবি করছেন ‘চৌকিদার’! একইসময়ে ঘটনা ও প্রবণতার প্রকাশে কি আশ্চর্য সমাপতন! গত পাঁচ বছরে মোদীর মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৫২ শতাংশ! একি বিশ্বাসযোগ্য যে, এত অল্প সময়ে এত সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েছে কেবল মন্ত্রীত্বের বেতন ও ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া সুদ থেকে! এই গল্প দাঁড়ায় না। মোদীর কোর্টেই এখন বলের চাপ। সামলাক মোদীর দল সামলাক।