গত ১৪-১৫ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অশোকনগরে সি পি আই (এম এল) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকের শুরুতে প্রয়াত পার্টি কমরেডদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। কোচবিহারের নীলরতন সরকার, দার্জিলিং জেলার মাসি দাস, নদীয়ার মনোরঞ্জন দেবনাথ, প্রতিমা বিশ্বাস, হাওড়া জেলার বাসুদেব দাস, কলকাতার সঞ্জিত দাস। শ্রদ্ধা জানানো হয় বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন, কবি পিনাকী ঠাকুর, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বামপন্থী নেতা নিরুপম সেন, ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত, কবি শ্যামল ভট্টাচার্যের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের রিপোর্টনিয়ে আলোচনা হয় এবং গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি কার্যকরী করার কথা হয়। সদ্যসমাপ্ত রাজ্য সম্মেলনে গৃহীত দলিল ছাপা হবে।
৮-৯ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট প্রসঙ্গে
১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘট এ রাজ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সফল হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগণা, হুগলি, হাওড়া জেলার জুট শিল্পে, উত্তরবঙ্গের চা-বাগানে, রাজ্যের সর্বত্র বেসরকারি পরিবহন ক্ষেত্রের শ্রমিকরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। এই প্রথমবার দার্জিলিং পাহাড়ের চা শ্রমিকরা স্থানীয় ইস্যুতে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। ধর্মঘট সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছিল, সেটা অনেকাংশেই কেটেছে বলা যায়। বাম শক্তিগুলির মধ্যকার ঐক্য নিয়ে যে চর্চাগুলি ছিল ব্যবহারিকভাবে সেটা স্বাভাবিক পরিণতি পেয়েছে। যৌথ কাজের প্রক্রিয়ায় ভালো পরিচিতি পাওয়া গেছে, সব মিলিয়ে এ রাজ্যে বিজেপির উত্থানকে খানিকটা পেছনে ফেলে বামপন্থীরা সামনে এসেছে। ধর্মঘটের গণইস্যুগুলি মানুষের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। বিশেষত, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবীরা ভালো সাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি ছাত্র-যুব শক্তির মধ্যে মোদী বিরোধী প্রচার একটা প্রভাব ফেলেছে। ধর্মঘটের বিরোধিতায় নেমে তৃণমূলের গরীব বিরোধী চরিত্র উন্মোচিত হয়ে গেছে। বেশ কিছু স্থানে তৃণমূলের সন্ত্রাস প্রবলভাবে হয়েছে, পুলিশ-প্রশাসন ধর্মঘট ভাঙতে খুবই সক্রিয় ছিল। সি পি আই (এম এল)-এর ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব, ছাত্র-যুব কমরেডরা, গ্রামাঞ্চলের সংগঠকরাও গ্রেপ্তার হন। তৃণমূল সাধারণ মানুষকে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে পথে নামাতে খুব একটা সফল হয়নি। প্রকল্প কর্মীরা, নির্মাণ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমজীবীরা পথে নেমেছেন। গ্রামাঞ্চলের কৃষক, কৃষিমজুররা ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন, বিশেষত, বিভিন্ন জেলায় পথ অবরোধ, রেল অবরোধে তাদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক।
বড় পরিধি জুড়ে সি পি আই (এম এল)-এর সমস্ত গণসংগঠনগুলি প্রচার করেছে।
লোকসভা নির্বাচনের কেন্দ্রগুলিতে অধিকার যাত্রা
কৃষ্ণনগর, বর্ধমান (পূর্ব), হুগলি এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকাগুলিতে উপর থেকে একটা প্রচার অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে ‘‘কৃষক ও গ্রামীণ মজুর অধিকার যাত্রা’’ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৭-৩১ জানুয়ারি ৫ দিনব্যাপী এই অধিকার যাত্রা নদীয়া জেলার পলাশী থেকে শুরু হয়ে বর্ধমানের কালনা হয়ে হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় শেষ হবে। তিনটি জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় পৃথক পদযাত্রা পরিক্রমা করে মূল যাত্রায় মিলিত হবে। পার্টি, কিষাণ সভা এবং আয়ারলার ব্যানারে এই অধিকার যাত্রা সংগঠিত হবে। কৃষক ও গ্রামীণ মজুরদের প্রতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ধোঁকাবাজির বিরুদ্ধে, ফসলের দেড়গুণ দাম, ঋণমুক্তি, সারা বছর কাজ, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা প্রভৃতি দাবিতে এই অধিকার যাত্রা প্রচার অভিযান চালাবে। ১২ দফা দাবি সম্বলিত প্রচার পত্র ও পোস্টার ছাপা হয়েছে। পশ্চিমবাংলার কৃষি সংকটের বিশেষ বৈশিষ্টগুলি যথা, ফসলের দাম, ফড়ে রাজ, চরম অবহেলিত কৃষি কাঠামো, চুক্তি-লিজ চাষির আধিক্য, এদের প্রতি অবহেলা-বঞ্চনা, সব্জী চাষিদের জন্য কোন সরকারি পরিকল্পনা না থাকা, পরিযায়ী গ্রামীণ বিপুল যুবশক্তি, ১০০ দিনের কাজে চরম দুর্নীতি- দলবাজি প্রভৃতি বিষয়ে বিকল্প বক্তব্য অধিকার যাত্রায় প্রচারে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ শ্রমজীবী-অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিভিন্ন পেশার মানুষের দাবিগুলি, যা সাধারণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে সেগুলিকেও প্রচারে নিয়ে আসা হবে। বিগত রাজ্য সম্মেলনে গৃহীত দিশায় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরা হবে।
মহিলা ও যুব ফ্রন্টের কর্মসূচী
মহিলা ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আইপোয়া (সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি)-র প্রতিষ্ঠা দিবসে জেলা বা এলাকাস্তরে বিভিন্ন কর্মসূচী সংগঠিত হবে। ৮ মার্চ কলকাতায় বৃহত্তর শক্তি সমাবেশিত করে মিছিলের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েেছ।
সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট
সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের বিগত রাজ্য সম্মেলনে আমাদের সংগঠন বহির্ভূত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি, লেখক, শিল্পী সহ নানাবিধ ক্ষেত্রের সৃজনশীল ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ খুবই ইতিবাচক। প্রাণবন্ত আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়ে শাসকের হামলার মুকে ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দিকটি উঠে আসে।
সাংগঠনিক সিদ্ধান্তসমূহ
রাজ্য স্ট্যাণ্ডিং কমিটির সদস্যরা হলেন—পার্থ ঘোষ, কার্তিক পাল, অভিজিৎ মজুমদার, প্রবীর হালদার, সলিল দত্ত, জয়তু দেশমুখ, কল্যাণ গোস্বামী, অনিমেষ চক্রবর্তী, বাসুদেব বসু, সজল পাল, সজল অধিকারী, ইন্দ্রাণী দত্ত, সুবিমল সেনগুপ্ত, অতনু চক্রবর্তী, সুব্রত সেনগুপ্ত, নবেন্দু দাশগুপ্ত ও বাবলু ব্যানার্জী।