গত ৪ নভেম্বর ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক পার্থ কর্মকার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, ২০০২-এ বিজেপি শাসিত গুজরাটে গণহত্যা, তারপর দেশজুড়ে মব লিনচিং, রাজ্যে রাজ্যে সাজানো সংঘর্ষে হত্যার পর আজ আসামে গণহত্যা উত্তর-পূর্ব ভারতে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিচ্ছে। এনআরসি-কে বিজেপি সারাদেশে তার সাম্প্রদায়িক এজেন্ডার সাথে যুক্ত করেছে। যার ফলে আসামে ৪০ লক্ষ মানুষকে তাদের নিজদেশে দেশহীন ও রাষ্ট্রহীন করে তুলে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে তীব্র সংঘাত, অবিশ্বাস, ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অসমীয়া ও অ-অসমীয়া বাঙালি জনগণের ঐক্যের ঐতিহ্যকে ভেঙে চুরমার করে দিতে চাইছে।আর একই সাথে ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন (সংশোধনী) বিল, ২০১৬—যা বিজেপি ও আরএসএস কর্তৃক ভারতীয় প্রজাতন্ত্রকে ধর্মের ভিত্তিতে নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হিসেবে বহুজাতিক আসামকে পরীক্ষাগার হিসেবে বেছে নিয়ে তার ওপর প্রয়োগ করছে। যার নির্মম পরিণতি হচ্ছে এই সাদিয়া-ধোলা গণহত্যা। এর আগে এই গ্রামে কখনো হিংসা হয়নি। তাহলে হত্যাকারীরা কারা? তথাকথিত আলফা, আলোচনাপন্থী আলফা কেউই এর দায়ভার স্বীকার করেনি। কিন্তু আলোচনাপন্থী আলফা নেতা মৃণাল হাজারিকা ও জিতেন দত্ত প্রকাশ্যে হুমকি দেন যে, যারা নাগরিকত্ব আইন (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ কে সমর্থন করবে তাদের হত্যা করা হবে। ১৯৮৩ সালে নেলীতে যেভাবে ২০০০ অনুপ্রবেশকারীকে গণহারে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক সেইভাবেই। তাছাড়া হোজাই-এর বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের মন্তব্য “আসামকে কাশ্মীর হতে দেব না, ত্রিপুরা বানাবো।” এই উক্তিগুলি প্ররোচিত করেছে এই গণহত্যা সংঘটিত করতে। শুধু তাই নয়,বিজেপি ও সর্বানন্দ সোনোওয়ালের সরকার এই প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে পরোক্ষে এই গণহত্যা সংঘটিত করতে সহ্যায়তা করেছে। তাই এই গণহত্যা রোধে ব্যর্থতার দায়ে আসামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়ালকে পদত্যাগ করতে হবে। অসমীয়া-বাঙালী বহুজাতিক জনগণের মধ্যেকার সম্প্রীতির ঐতিহ্য কে অটুট রেখে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক বিভেদমূলক সর্বনাশা নীতি ও এই বিল প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় জাতি-জনজাতি-সংখ্যালঘু জনগণের ঐতিহ্যবাহী ঐক্য ও সম্প্রীতিকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। এই সব ধরনের সাম্প্রদায়িক বিভেদমূলক নীতি ও বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যে জনগণের নিকট আহ্বান রাখছে সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি।