খবরা-খবর
ভারত বনধ

বামেদের ডাকা ১০ সেপ্টেম্বরের সারা ভারত ধর্মঘট জনগণের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেল

বাম দলগুলি ১০ সেপ্টেম্বর যে সারা ভারত ধর্মঘটের ডাক দেয়, জনগণ তাতে বিপুল সাড়া দেন। জনগণ মোদী সরকারের নীতিমালা, সাঙাতদের সুবিধা করে দেওয়ার ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের ঘাড়ে চাপানো অর্থনৈতিক বোঝার বিরুদ্ধে তাঁদের ক্রোধ ব্যক্ত করেন। বাম দলগুলির ডাকা ধর্মঘটের দিনই কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল ভারত বনধের ডাক দেয়। সারা দেশেই জনগণ রাস্তায় নেমে পেট্রোপণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা, ক্রমবর্ধমান বেকারি, জমি অধিগ্রহন, কর্পোরেটদের দ্বারা ব্যঙ্কগুলি লুন্ঠন, বিমুদ্রাকরণের নীতি এবং ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে সমাজকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভাজিত করার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে তাঁদের রায় দেন। এই ধর্মঘটের মধ্যে দিয়ে এই বার্তাই বেরিয়ে আসে যে, মোদী সরকারের দিন ঘনিয়ে এসেছে।

বাম দলগুলো বলেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলাটা অর্থনীতিকে মন্থর করে তুলেছে এবং কর্মসংস্থানকে সংকুচিত করছে। সারা দেশেই কৃষক জনগন প্রতিশ্রুত লাভজনক দাম এবং ঋন মকুবের দাবি জানালেও মোদী সরকার নির্দয়ভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করছে। এর বিপরিতে দেখা যাচ্ছে, গত চার বছরে মোদী সরকার কর্পোরেটদের নেওয়া লক্ষ কোটি টাকার ঋন মকুব করে তাদের প্রতি দাক্ষিণ্য দেখাচ্ছে। অনুৎপাদক সম্পদের বৃদ্ধি ঘটিয়ে এবং দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে কর্পোরেট সংস্থাগুলো আমাদের ব্যঙ্কগুলোর রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। রাফাল যুদ্ধ বিমান ক্রয় দুর্নীতি সহ বিভিন্ন লেনদেন-এর মধ্যে পেটোয়া পুঁজিবাদ প্রকট হয়ে উঠেছে।

ধর্মঘটের জন্য অধিকাংশ রাজ্যেই অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্তব্ধ হয়ে পড়ে এবং জনগন রাস্তায় নেমে এসে রেল রোকো, রাস্তা রোকো, বিক্ষোভ প্রদর্শন, ধর্ণার মতো প্রতিবাদী কর্মসূচিগুলি সংগঠিত করেন। দিল্লীতে বাম দলগুলি ধর্ণা সংগঠিত করে এবং একটি মিছিল বার করে। পুলিশ সেটিতে বাধা দিলে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয় যাতে বক্তব্য রাখেন সীতারাম ইয়েচুরি, সুধাকর রেড্ডি, পুরুষোত্তম শর্মা, সন্তোষ রায় ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বনধ চলাকালীন সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য কোডারমায় বনধ সংগঠনে কর্মীবাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিহার বনধ সর্বাত্মক সফল হয়। বনধের আগের দিন ৯ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এমএল) রাজ্যের বিভিন্ন অংশে প্রচার, পথসভা, মশাল মিছিল ইত্যাদি কর্মসূচি সংগঠিত করে বনধকে সফল করে তোলার আহ্বান জানায়। ব্যবসায়ী, শ্রমিক, বুদ্ধজীবী, ছাত্র, যুবক, নারিরা বিজেপি সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দলে দলে রাস্তায় নেমে বনধকে সফল করে তোলেন। পাটনায় প্রতিবাদকারী জনগণের সামনে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদক কুণাল। বিহারের বহু স্থানেই রেল ও রাস্তা অবরোধ করা হয়। পাটনার গান্ধি ময়দান থেকে বাম দলগুলির একটা যৌথ মিছিল বেরোলে জে পি চক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দ্বারভাঙ্গায় আন্দোলনকারিরা ভোর পাঁচটা থেকে রেললাইনের উপর বসে পড়ে রেল অবরোধ করেন এবং ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আরা, নালন্দা এবং অন্যান্য স্থানেও রেল অবরোধ করা হয়। কাটিহার, ওবরা, ভাগলপুর, মুজাফ্ফরপুর, হাজিপুর এবং অন্যান্য বহু স্থানে রাজ্য ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। সারা ভারত কিষান মহাসভা, এআইসিসিটিইউ, এআইপিডব্লিউএ, এআইএসএ এবং অন্যান্য সংগঠন বনধে সক্রিয় অংশ নেয়।

আসামে সিপিআই(এমএল) কর্মীরা বহু স্থানেই রেল ও রাস্তা অবরোধ করে এবং মোদীর কুশপুতুল পোড়ায়। কার্বি আংলং-এ বাজার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকে। রাজস্থানে বনধের ভালো প্রভাব পড়ে, অনেক স্থানেই বনধ সমর্থক জনগন লাল পতাকা নিয়ে মিছিল করেন। জয়পুরে বাম দলগুলির যৌথ মিছিল হয় এবং উদয়পুর ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে দোকান-বাজার বন্ধ থাকে। কর্ণাটকে বাম দলগুলি যৌথভাবে বেঙ্গালুরু, মহিশূর, গঙ্গাবতী প্রভৃতি স্থানে বনধ সংগঠিত করেন।

সিপিআই(এমএল) উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের অনেক স্থানে বনধের সমর্থনে মিছিল, জনসভা সংগঠিত করে। উত্তরাখণ্ডের বিন্দুখাট্টায় একটি প্রতিবাদী মিছিল সংগঠিত হয় এবং যোশীমঠ, গোপেশ্বর, শ্রীনগর এবং অন্যান্য শহরে যৌথ মিছিলগুলি পথ পরিক্রমা করে। হরিয়ানার কার্ণাল ও আসান্ধ, দিল্লীর গোয়ালিয়র, উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ, পিলভিট ও মিরজাপুরে বাম দলগুলির যৌথ কার্যক্রম সংগঠিত হয়।

বনধ চলাকালীন সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য কোডারমায় বনধ সংগঠনে কর্মীবাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিহার বনধ সর্বাত্মক সফল হয়। বনধের আগের এবং অন্যান্য শহরে যৌথ মিছিলগুলি পথ পরিক্রমা করে। হরিয়ানার কার্ণাল ও আসান্ধ, দিল্লীর গোয়ালিয়র, উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ, পিলিভিট ও মিরজাপুরে বাম দলগুলির যৌথ কার্যক্রম সংগঠিত হয়।

খণ্ড-25
সংখ্যা-29