দমদম কাজীপাড়া বোমা বিস্ফোরণের অনুসন্ধান রিপোর্ট

৯ অক্টোবর সি পি আই (এম এল) লিবারেশনের উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে শিব শঙ্কর গুহরায়, সুরজিৎ দত্তরায় এবং উল্লাসকর ব্যানার্জী নাগের বাজার, কাজিপাড়া মোড়ে ২ অক্টোবর ২০১৮ যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে তা সরেজমিনে দেখতে যান। অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল কারণ স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ মুখ খুলতে চাইছিলেন না এবং এখনও তারা বেশ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

কাজিপাড়া মোড় থেকে ২০ ফুটের মধ্যে বাসন্তী সুইটস তার পাশে একটা বন্ধ দোকানের সামনে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। যেখানে বোমা ফাটে ঠিক তার উল্টো দিকে কাজিপাড়া উন্নয়ন পরিষদ এবং তৃণমূল (পাচু রায় গোষ্ঠী) কার্যালয় আছে। এলাকার দুটো চায়ের দোকানে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেল —

(১) মাস খানেক আগে একবার গোষ্ঠীগত গোলমাল হয়ে ছিল।

(২) স্থানীয় খবরে প্রকাশ যে এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রচুর টাকা এসেছে। পৌরসভার চেয়ারম্যান পাচু রায়ের সাথে তার বিরোধী গোষ্ঠীর এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।

(৩) এলাকায় মুখে মুখে ঘুরছে তবে কি টাকার বখরা নিয়েই বিস্ফোরণ? আর তাই যদি হয় তা হলে কোন গোষ্ঠী বিস্ফোরণ ঘটাল? আর একটা কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হল, পাচু রায়কে হত্যা করার জন্যই নাকি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

(৪) চেয়ারম্যান পাচু রায় প্রত্যেক দিন সকাল ৯টায় উন্নয়ন পরিষদের অফিসে চলে আসেন, কিন্তু ঐদিন তিনি আসেননি। বিস্ফোরণ হয় সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে।

(৫) এখানে একটা প্রভাবশালী ক্লাব আছে, উন্নয়ন পরিষদ এই ক্লাবটা দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনও করে উঠতে পারেনি।

(৬) স্থানীয় সাধারণ মানুষের প্রশ্ন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষ মারা যাবে কেন? ৮ বছরের শিশু বিভাস ঘোষের ঐ দিন জন্মদিন ছিল। মা বাবার সাথে আনন্দ করার কথা ছিল, আর ঐ দিনই তার মৃত্যু হল। এবং তার মা আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। সুস্থ হয়ে উঠলেও হয়তো তিনি আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন না।

সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে দাবি করছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের। পুলিশের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই, কারণ স্থানীয় থানার আই সি-র নির্দেশে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণের স্থলটি ও রক্তের দাগ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। অভিজ্ঞদের মতে এর ফলে অনেক নমুনা সচেতনভাবে নষ্ট করে ফেলা হল।

অনুসন্ধানকারী দলের মতে আলোচনার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাই উঠে এসেছে —

(১) ঘটনায় আহত ও নিহতরা এলাকার বাইরের লোক হলেও ঘটনা বাইরের কোনো লোক ঘটায়নি।

(২) রাজনৈতিক রেষারেষি, এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম, আর কাজীপাড়া উন্নয়ন পরিষদে আসা বিপুল অর্থের উপর দখলদারীর জন্য সুপরিকল্পিত ঘটনা।

এতে কার কি লাভ হতে পারে —

(১) এলাকার পুজোর দখল ক্লাবের হাত থেকে উন্নয়ন পরিষদে আনার চেষ্টা।

(২) বিরোধী রাজনীতিকদের বার্তা দেওয়া যে সামনে নির্বাচনে এসবই হবে।

(৩) বিরোধী গোষ্ঠীকে সমঝে দেওয়া।

(৪) এলাকার প্রমোটিং সংক্রান্ত দূর্নীতি নিয়ে কিছ বেনামী পোষ্টার পড়ছিল সেই কন্ঠস্বরটাকেও বন্ধ করে দেওয়া।

(৫) এই সুযোগে মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান তাকে হত্যার চক্রান্ত বলে সহানুভূতির ঢেউ তোলার চেষ্টা। এই ঘটনা পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক ছকের ঘটনা, যার সঙ্গে সমাজবিরোধী তত্ত্বের কোনো যোগ নেই।

খণ্ড-25
সংখ্যা-32