প্রয়াত হলেন নদীয়ার বিশিষ্ট নকশালপন্থী নেতা বর্ষীয়ান কমরেড চন্ডী সরকার। আমৃত্যু বিপ্লবী আদর্শের প্রতি তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। নকশালবাড়ী আন্দোলনের সময়কাল থেকে কয়েকদশক ধরে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া, দীর্ঘ জেলজীবনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা করা, সহজ সরল জীবন যাত্রা, সহকর্মী ও অসংখ্য মানুষের সাথে একাত্মতা গড়ে তুলে তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগর তথা নদীয়া জেলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এক বিপ্লবী নেতা। পার্শ্ববর্তী মুর্শিদাবাদ জেলাতেও তিনি কাজ করেছিলেন। নকশালবাড়ি আন্দোলনের সূচনা পর্বেরেলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নদীয়া জেলায় বিপ্লবী কৃষক সংগ্রাম গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এই কর্মকান্ডে তাঁর সাথে আমাদের পার্টির বেশ কয়েকজন নেতৃত্বের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি ছিলেন অসমসাহসী, কর্মীদের প্রতি আন্তরিক, সারল্যে পরিপূর্ণ, দৃঢ়চেতা এক বিপ্লবী সংগঠক। পরবর্তীকালে জেল জীবনে মতাদর্শগত ভিন্নতা দেখা দেয়। তিনি কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পার্টি ইউনিটি গোষ্ঠীর নেতা হয়ে ওঠেন। জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর বিভিন্ন মতপার্থক্য স্বত্বেও তিনি আমাদের সাথে যৌথ কার্যকলাপ, এমন কী যুক্তভাবে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়কালে তিনি সিপিআই(মাওবাদী) সংগঠনের নেতা হয়ে ওঠেন। এই সময়কালে পুনরায় জেলে বন্দী অবস্থায় তিনি আমাদের পার্টিনেতা বিমান বিশ্বাসকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিষয়ে এক চিঠি পাঠান। তাতে লেখেন,
“রাজনৈতিক মত ও পথ নিয়ে আজ আমাদের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবুও আমি মনে করি সেই পুরানো স্বপ্নকে আজও তুমি একই রকম আন্তরিক ভাবেবহন করে চলেছো... আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বন্দীমুক্তির দাবিতে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলার প্রশ্নে তোমার সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। আমরাচাই নদীয়া জেলায় সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুক, তুমি এ প্রশ্নে সক্রিয় ভূমিকা নাও, বাকি বন্ধুদের কাছে রাজনৈতিক বন্দীদের এই বার্তা পৌঁছে দাও”
ভিন্ন সংগঠনের নেতা হলেও কৃষ্ণনগর শহরে তাঁর বাড়িতে তিনি আমাদের পার্টির পত্রিকা নিয়মিত নিতেন, আমাদের বেশ কয়েকজন কর্মীদের সাথে সম্পর্করাাখতেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তাঁকে বেশ কিছু দিন রোগশয্যায় থাকতে হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল রাতে কৃষ্ণনগরের বাড়িতে তিনি চির বিদায় নিলেন। বিপ্লবী নেতা কমরেড চন্ডী সরকারকে জানাই লাল সেলাম। তাঁর স্মৃতি অবিনশ্বর হয়ে থাকবে।
নদীয়া জেলা কমিটি
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন
৬ এপ্রিল ২০২৩