সিপিআই(এমএল) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদক পার্থ কর্মকার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান — সারা রাজ্যে ও উদয়পুরে শাসক বিজেপির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিরোধী দলের লাগাতার কর্মসূচি চলছে। ফলে জনগণ ক্রমশ ভয়মুক্ত হয়ে রাস্তার লড়াইয়ে বেশি করে সামিল হচ্ছেন। আবার বিরোধীরা সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে জোটের বার্তা দিয়েছে। তা দেখে বিজেপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। গতকাল, ৩ জানুয়ারি পালাটানা ও খিলপাড়াতে দু’টি পদযাত্রা করেছে বামেরা। তাতে শত শত মানুষ অংশ নিয়েছে। আজ জামজুরী রাজধরনগরে সিপিআই(এম)-এর কর্মসূচি উপলক্ষে রাস্তায় দলীয় পতাকা লাগানো হয়। তাই বিরোধীদের আটকাতে হতাশাগ্রস্ত বিজেপি নেতা-কর্মীরা গতকাল সন্ধ্যা-রাতে কারকাকড়াবন থানাধীন জামজুরী রাজধরনগর গ্রামে ফ্যাসিবাদী কায়দায় আক্রমণ সংগঠিত করেছে। আনুমানিক রাত ৮টায় রাজধরনগরের স্থায়ী বাসিন্দা নবীকুল ইসলাম তাঁর নিজ দোকানে একা বসে ছিলেন। তখন বিজেপির বাইক বাহিনী তাঁর দোকানে ঢুকে হামলা করে। তিনি আহত হন। তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। বাইক ভাংচুর করা হয়। তাঁকে একা পেয়ে মারতে দেখে এলাকার মানুষ বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি ও ভাংচুর হয়। তাতে ঘটনাস্থলের পাশাপাশি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গ্রামের বাড়িতে আসা গাড়িতেও ভাংচুর হয়। আর তখন আরএসএস ও বিজেপি, স্থানীয় ও বহিরাগতদের এনে জমায়েত করে। নবিকুল ইসলামের দোকান, মোটরবাইক, একটি চা দোকান সহ আরো কয়েকটি দোকান জ্বালিয়ে দেয়। অগ্নি নির্বাপক গাড়ি ও কর্মীদের আগুন নেভাতে বাঁধা দেয়। মিশ্র বসতি এলাকায় সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উস্কানিমূলক শ্লোগান দিয়ে জনগণকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে। পুলিশের সামনেই সব বেআইনি কার্যকলাপ চলতে থাকে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার ফলে বিজেপিকে বহিরাগতদের জমায়েত করে আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়। যার ফলে এলাকায় ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। পরে চাপের মুখে ও উপায় না দেখে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার ফলে বিরোধীদের ও সাধারণ জনগণের জীবন সম্পত্তির আর ক্ষতি হয়নি ও ঘটনা আর বেশিদূর গড়ায়নি। বিজেপির নির্দেশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একাংশ সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম পরের ঘটনাটিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে ও গোয়েবলসীয় কায়দায় প্রচার করা হয়। ঘটনার জন্য বিরোধী সিপিআই(এম) দলকে ও নেতাদের দায়ী করা হয়। পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উস্কানি দেওয়া হয়। এই ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র দেখা যায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পরে বাইকবাহিনী রাত ১০টায় শহরে জগন্নাথ চৌমুহনীতে সিপিআই(এম)-এর একটি অফিসঘর ভেঙে সবকিছু বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। সারারাত ব্যাপী বাইকবাহিনী তান্ডব চালায়। যাতে করে জনগণ ভয়মুক্ত হতে না পারে। অথচ এদিকে একই দিনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আছে জানতে পেরে সিপিআই(এম) তার কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে।
সিপিআই(এমএল) মনে করে বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান লাগাতার কর্মসূচি ও জোটের বার্তায় আতঙ্কিত বিজেপি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। জনগণও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তাই রাজধরনগর গ্রামে বামপন্থী কর্মী নবীকুল ইসলামের উপর বিজেপির এই ফ্যাসিবাদী কায়দায় আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। এলাকায় শান্তি, সম্প্রীতি ও জনগণের জীবন সম্পত্তি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়। নীচুতলায় গ্রামে গ্রামে ও পাড়ায় পাড়ায় বিরোধী দলের কর্মীদের মধ্যে ঐক্যকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানায়। বিরোধী জোট ও জনগণের মধ্যে আরও একাত্মতা শক্তিশালী করার আহ্বান জানায়।