টিটাগড় অঞ্চল তথা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল দুষ্কৃতিদের নানা তাণ্ডবের জন্য প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনামে আসে। কিন্তু গত শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর এই অঞ্চলের একটি স্কুলে ক্লাস চলাকালীন বোমাবাজির যে ঘটনা ঘটল তা নানা তাণ্ডবের মধ্যেও বিশেষভাবে ব্যতিক্রমী।
এদিন উত্তর ২৪ পরগণার টিটাগড়ের সাউথ স্টেশন রোডের ফ্রি ইন্ডিয়া হাই স্কুলে বোমাবাজি হয়। ক্লাস চলাকালীন তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে সাউথ স্টেশন রোডের ফ্রি ইন্ডিয়া হাই স্কুল। আতঙ্কে সিঁটিয়ে যান পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা। পরে দেখা যায় স্কুলের ছাদে সিঁড়ির অংশে বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় স্কুলের ছাদের একটি অংশ উড়েও যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় টিটাগড় থানার পুলিশ। দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্প্লিন্টার। কে বা কারা এই বিস্ফোরণে যুক্ত, তা নিয়ে শুরু হয় তদন্ত।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে, তাঁদের মধ্যে একজন ওই স্কুলেরই প্রাক্তনী। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, মজা করতে গিয়ে বোমা ছুড়েছিলেন স্কুলের ছাদে! যে চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ধৃতদের নাম মহম্মদ আয়রন, শেখ বাবলু, মহম্মদ সাদিক এবং রোহন।
সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে পুলিশি জেরায় প্রত্যেকেই বোমাবাজির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে কাউকে আহত বা নিহতের উদ্দেশ্যে নয়, ‘খেলার ছলে’ বোমা ছুড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ধৃতেরা। কিন্তু কোথায় পেলেন বোমা, কী কারণে বোমা ছুড়লেন, পুরনো রাগ নাকি অন্য কোনও কারণে বোমাবাজি তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। সেইসব কিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে।
টিটাগড় অঞ্চল তথা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দুষ্কৃতিরা রাজনৈতিক মদত ও পুলিশের একাংশের প্রশ্রয়েই যে তাদের অন্ধকার জগতের কাজকারবার চালিয়ে যায়, সেকথা ওয়াকিবহাল মহল জানেন। বছরের পর বছর একই ট্রাডিশন চলছে। আইন শৃঙ্খলার নিরিখে রাজ্য ও দেশের অন্যতম এই ‘ব্ল্যাক স্পট’টিতে খুন জখম বোমাবাজির ঘটনাগুলি ঘটার পর কিছুদিন সোরগোল চলে সংবাদ মাধ্যমে, তারপর আবার সব আগের মতোই চলতে থাকে। সরকার, পুলিশ প্রশাসন — কেউই স্থায়ী সমাধানে উৎসাহী নয়। এর কারণ এই দুষ্কৃতিতন্ত্র তাদের স্বার্থরক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়।
এইবারের ব্যতিক্রমী ঘটনার পরও এরকমই হবে বলে এলাকার মানুষ মনে করছেন। বোমা, গুলির শব্দর সঙ্গে সহবাস করতে করতে তারা এটাকেই তাদের ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন। তারা মনে করেন পুলিশ, প্রশাসন, সরকার সব জেনেবুঝেই যেখানে দুষ্কৃতিদের মদত দেয়, তখন সাধারণ মানুষ নিতান্ত অসহায়। এখানকার রাজনীতিই লুম্পেনতন্ত্রর সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে চলে। তাই ধৃতরা অক্লেশে বলতে পারে মজা দেখার জন্য তারা ক্লাস চলাকালীন স্কুলে বোমা ছুঁড়ে স্কুলের ছাদ উড়িয়ে দিয়েছে ও ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। বারুদের ওপর বসে আছে এই গোটা অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। পুলিশ প্রশাসন কবে তাদের উপযুক্ত কাজে নামবে?