গত ২৮ আগস্ট বিএমপিইইউ হলে কমরেড রবি মুখোপাধ্যায়ের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শ্যামল গুহ, অতনু চক্রবর্তী ও নিত্যানন্দ ঘোষ। স্মরণ শুরু হয় গণশিল্পী নীতীশ রায়ের গান দিয়ে। প্রথম বক্তা (রবিদার পুত্র) সন্দীপ মুখোপাধ্যায় অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় কমরেড হিসেবে, লড়াকু এক মানুষ হিসেবে, নেতা হিসেবে তার বাবার পরিচয় তুলে ধরেন, যিনি অতি সহজ ভাষায় বামপন্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। লেনিনের উক্তি মাথায় রেখেই বলতেন, “এই রাজনীতি বল, বিতর্ক বল, সব জীবন থেকেই শিখেছি। জীবনের কাছে যান কমরেড।” আবার যখন শেষ বয়সে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন করা কেন, তিনি বলেন, “লিবারেশন প্লাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছে যেখানে বহু বর্ণের বহু মনের বামপন্থীদের আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কমিউনিস্ট নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা এই পার্টির মধ্যে আছে বলে এই পার্টিটাকে আঁকড়ে ধরা।”
এই বক্তব্যের পর মুকুল কুমারের শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করে শোনান অতনু চক্রবর্তী। মুকুলের কথায়, যখনই কেউ তাকে জিজ্ঞেস করতেন, কমিউনিস্ট কাকে বলে, উনি সোজা বলতেন কমরেড রবি মুখার্জীকে দেখলেই বুঝবেন কমিউনিস্ট কেমন হয়। শান্তনু ঘোষ বলেন, রবি বাবু শেষ বয়স অবধি একনিষ্ঠ কমিউনিস্ট ছিলেন। তাঁর সংস্কারমুক্ত মন আর তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তি ছিল। আরও অনেকে রবি মুখোপাধ্যায়ের সাহচর্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনিমেষ চক্রবর্তী, রাকেশ (বেণু ঘটক), সাধন চক্রবর্তী, সৌমেন মুখোপাধ্যায়, আহাব মন্ডল, শ্যামল গুহ, বাসুদেব বোস প্রমুখ। জিআইসি-র সৌমেন মুখোপাধ্যায় অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ভাষায় প্রিয় কমরেড রবিদার নেতৃত্বে শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন ও আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন। আহাব মণ্ডল একটি গান গেয়ে শোনান। সাধন চক্রবর্তী বলেন, রবিদার নেতৃত্বে নানান বাধা পেরিয়ে তাঁরা ইউনিয়ন ফ্রন্ট গড়ে তুলেছিলেন। বর্ষীয়ান অশক্ত হয়ে পড়া শ্যামল গুহ তাঁর অগ্রজ বন্ধুস্থানীয় কমরেডের স্মৃতিচারণ করে বলেন, রবিদা বলতেন মানুষের সাথে মিশতে পারার গুণটা থাকা দরকার। পরিবেশ তৈরি করতে হয়। মারা যাওয়ার প্রায় আড়াই বছর আগেও রবিদা তাঁকে দেশব্রতী পৌঁছে দিতেন। তিনি বলতেন, একটি পত্রিকা সংগঠনের কাজ করে। কথা বলা, আলোচনা করার সাহস দরকার।
সবশেষে বাসুদেব বোস বলেন, ঝড়-জল যাইই হোক রবিদা সবার আগে ইউনিয়ন অফিসে এসে বসতেন। তিনি পার্টির দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদ জহর দত্তের বাবা সত্যব্রত দত্তকে একটা সময় রক্ষা করেন। এগুলো হয়তো কোথাও ছাপা হয় না, আলোচনাও হয় না, এগুলো রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়। এইভাবেই কমরেড রবি মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষরা আমাদের মনে ও হৃদয়ে চিরকালের মতো স্থান করে নেন।