বৈঠকের শুরুতে বিগত দিনে প্রয়াত কমরেডদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাজ্য কমিটির সদস্য নদীয়া জেলার বিশিষ্ট কৃষক সংগঠক কমরেড বিমান বিশ্বাস, কমরেড বিশ্বনাথ রায় (দার্জিলিং জেলা), কমরেড মুকুন্দ সিং (হুগলী জেলা), মাজিদার রহমান (কোচবিহার), নদীয়া জেলার কালিগঞ্জের কমরেড হাফিজ উদ্দিন মল্লিক ও কমরেড কাজল রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়। বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সুষ্ঠু আয়োজনে হুগলী জেলার বিশেষত কোন্নগরের কমরেডরা যে সার্বিক উদ্যোগ নিয়েছেন সে জন্য রাজ্য কমিটি জেলা ও এলাকা কমিটির সকলকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে।
বৈঠকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের রিপোর্ট তথা জাতীয় পরিস্থিতির প্রধান দিকগুলি এবং আগামী কর্তব্যকর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যার অন্যতম প্রধান দিক হল — এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আসামের পর এটা নিয়ে বিজেপির পরবর্তী লক্ষ্য হল পশ্চিমবাংলা। এই রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে বিজেপি এ নিয়ে তার অপচেষ্টা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলবে। বিজেপির লক্ষ্য হল কয়েক কোটি মানুষকে “অবৈধ নাগরিক” হিসাবে চিহ্নিত করে দেশের মধ্যে একটা স্থায়ী বিভাজন সৃষ্টি করা। “বাংলাদেশী” জিগির তুলে আর্থিক মন্দা, বেকারি, কৃষিসংকট থেকে মানুষের নজরকে ঘুরিয়ে দেওয়া। তাই এনআরসি নিয়ে এরাজ্যে আমরা যে প্রচারকাজ শুরু করেছি তাকে আরও ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আসামে এনআরসি সারা দেশের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন নতুন করে ওরা ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ রূপে নিয়ে আসতে চাইছে। অর্থাৎ ১৯৫৪ সালের ভূমি-আইনের পরিবর্তনের ফলে দেশের নাগরিকরা যেটুকু আইনী অধিকার পেয়েছিলেন সেটাকেও অকার্যকর করে দেওয়া হবে। অপরদিকে নাগরিক আইন সংশোধনের ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে যে “অভয়বাণী” শোনানো হচ্ছে সেটা তথাকথিত “আচ্ছে দিন”-এর পরিণতি লাভ করবে। মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বিজেপির এই ফ্যাসিস্ট এজেন্ডার বিরুদ্ধে আমাদের জোরালোভাবে পথে নামতে হবে। আর্থিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকার জ্বলন্ত প্রশ্নগুলি তথা বুনিয়াদি ইস্যুগুলি তুলে ধরা এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা — এ দুটি কাজকে সমন্বিত করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
রাজ্য রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এনআরসি পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির অগ্রগতি কিছুটা হলেও থমকে দাঁড়িয়েছে। এনআরসি নিয়ে জনমানসে প্রবল উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা-নিরাপত্তাহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এর ফলে বিজেপি খানিকটা প্রশ্ন ও বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু বিজেপি এরাজ্যে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, নানান অছিলায় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি রাজ্যপালকেও খোলাখুলি ব্যবহার করছে। অপরদিকে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণক্ষোভ কমেছে এমনটাও দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনকে ব্যবহার করে হারানো গণসমর্থন লাভের চেষ্টা করলেও তৃণমূলের দিকে কোনো সামাজিক শক্তির ফিরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তৃণমূল আগেকার মতো সন্ত্রাস করতে পারছে না। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে দেখা গেলো, যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলন বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে ধাক্কা দিতে সমর্থ হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন আংশিক জয় নিয়ে এসেছে, বিজেপি এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারেনি। গ্রামীণ গরিবদের, বিশেষত হুগলী জেলায় আদিবাসীদের সংগঠিত করার প্রচেষ্টা ভালো ফল দিয়েছে। রন্ধনকর্মীদের জমায়েতও লক্ষণীয় প্রভাব ফেলতে পেরেছে। কাশ্মীর ও এনআরসি বিষয়ক পুস্তিকা প্রকাশ ও বিলিবণ্টন বিভিন্ন মহলে ভালো ছাপ ফেলেছে। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে উপরিস্তরে বড় ধরনের কিছু করে ওঠার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকলেও নীচুস্তরে প্রচার-আন্দোলন-সংগঠন গড়ে তুলতে আমরা কিছুটা সাফল্য নিয়ে আসতে পারছি। আমাদের পক্ষ থেকে বিজেপিকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা, অথচ টিএমসিকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সঠিক বলেই প্রতিপন্ন হয়েছে, যা সিপিএম অনুসৃত দেউলিয়া এবং আত্মঘাতী রাজনৈতিক কৌশলের সম্পূর্ণ বিপরীত।
বর্তমানে পরিস্থিতির চাপে সিপিএম কিছুটা বিজেপির বিরোধিতা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা বামপন্থী দলগুলির সাথে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইস্যু ভিত্তিক যৌথ কার্যকলাপ চালাচ্ছি। তবে কংগ্রেসের উপর নির্ভর করার যে লাইন সিপিএম এরাজ্যে অনুসরণ করে চলেছে, তা ঐক্যবদ্ধ বাম আন্দোলনকে দূর্বলই করবে। ইস্যুভিত্তিক যৌথ কিছু কার্যক্রম হলেও আমাদের এককভাবে স্বাধীন কর্মসূচীর উপর জোর দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
“গ্রামে চলো” (জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা, গ্রাম বৈঠক) অভিযান বিভিন্ন জেলাগুলিতে সংগঠিত হয়েছে, এটা আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। গ্রামাঞ্চলে গণসংযোগ গড়ে তুলতে এবং সংগঠকদের কাজের ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এটা খুবই কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে। গ্রামীণ গরিবদের জরুরী দাবিগুলি এই প্রক্রিয়ায় উঠে এসেছে। যথা ১০০ দিনের কাজ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নতুন নতুন কিছু নিয়মবিধির কারণে বাস্তবে বন্ধ হয়ে পড়েছে, ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, মজুরি দীর্ঘ দিন বকেয়া, গরিব মানুষের জমির পাট্টা না থাকা প্রভৃতি। আদিবাসী সহ গরিব মানুষের ভাতা, লোকপ্রসার সহ নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প কার্যকরী না করা, এসটি সার্টিফিকেট নিয়ে বঞ্চনা, হোস্টেল স্টাইপেন্ড তুলে দেওয়া, সর্বোপরি বনাঞ্চলের জমির অধিকার সংক্রান্ত দাবি, মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি অকার্যকরী হয়ে থাকা, গ্রামীণ গরিবদের সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন দাবিগুলিও সামনে আসে। কৃষকদের ফসলের দাম নিয়ে ফড়ে-দালালদের রমরমা কারবার, শস্যবীমা সহ ঘোষিত বিভিন্ন সরকারী প্রকল্প নিয়ে চরম ধোঁকাবাজি প্রভৃতি দাবিগুলিও উঠে আসে। স্থানীয়ভাবে রাস্তা, শৌচাগার নির্মাণ সহ বিভিন্ন প্রশ্নগুলি মানুষ তুলে ধরেন। গ্রামীণ বৈঠকগুলিতে বেশকিছু জায়গায় ভালো সংখ্যক অংশগ্রহণ ছিল। বাড়ি-বাড়ি নিবিড় গণসংযোগ ফলদায়ী হয়েছে। এই পর্যায়ে বিভিন্ন দাবিগুলি নিয়ে ব্লক ও জেলা শাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত হয়েছে। হুগলী ও বাঁকুড়া জেলায় গ্রামীণ গরীব আদিবাসীদের উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো ছিল। উত্তরবঙ্গে চা বাগানে যৌথ মঞ্চের ব্যানারে শ্রমিকদের আন্দোলনে আমরা সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রেখেছি। সম্প্রতি চা শ্রমিকদের জঙ্গী আন্দোলন ও অনমনীয় মনোভাবের কাছে সরকার ও মালিকপক্ষ নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের নিজস্ব ইউনিয়নের স্বাধীন আন্দোলনমুখী কর্মধারা বিকাশের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আগামী দিনগুলোতে ‘গ্রামে চলো’ অভিযান যথাযথ কাজের ধারা অনুসরণ করে সফল করে তোলার লক্ষ্যে রাজ্য কমিটির সদস্যরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবেন, ১০ নভেম্বরের মধ্যে এবিষয়ে রিপোর্ট পাঠাবেন। গ্রামে ও শহরে গরিব মেহনতি মানুষের মধ্যে আমাদের অনুশীলনের ধারায় গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসার লক্ষ্যে এই অভিযানকে আয়ত্ব করতে সমগ্র পার্টি সংগঠনকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বাছাই করা যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো সেই এলাকাগুলোতে গণসংযোগ, প্রচার ও আন্দোলনমুখী উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা নিতে হবে। পশ্চিমবাংলায় পার্টির মধ্যে পরিবেশ পাল্টাচ্ছে, নতুন নতুন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, একে আরও গতি দিতে হবে।
“গ্রামীণ গরিবদের কাজ-মজুরি-সামাজিক মর্যাদা, লোকপ্রসার সহ আদিবাসীদের ভাতা ও বনাঞ্চলের জমি, কৃষকের ফসলের দেড়গুণ দাম ও ঋণমুক্তি চাই” — এই দাবিতে আগামী ১৮ নভেম্বর কলকাতায় রাজ্য সমাবেশ সংগঠিত হবে। কৃষিমজুর সংগঠন, আদিবাসী বিকাশ ও অধিকার মঞ্চ ও কিষাণসভার পক্ষ থেকে এবিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা গৃহীত হবে। পার্টির সমগ্র শক্তিকে এই রাজ্য সমাবেশকে সফল করে তোলার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।
আগামী নভেম্বর মাসে হায়দ্রাবাদে ছাত্র সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একে সফল করে তুলতে ছাত্র সংগঠন প্রচার সংগঠিত করছে, সম্মেলনে এরাজ্য থেকে প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধিত্ব করবে। সম্প্রতি ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যাদবপুরের ছাত্রদের প্রতিরোধ রাজ্য-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক বিকাশ হিসাবে সামনে এসেছে। ছাত্রদের এনআরসি রুখে দেওয়ার আহ্বান, ব্যাপক ছাত্র-শিক্ষক, প্রগতিশীল শক্তির সমাবেশিত হওয়া রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক বার্তা তুলে ধরেছে। আমাদের ছাত্র সংগঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। সংগঠনে নতুন-নতুন ছাত্রছাত্রীদের যোগ দেওয়া, হাওড়া, হুগলী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, কলকাতায় জেলা সম্মেলন সংগঠিত করা খুবই ইতিবাচক। অন্যান্য জেলাগুলিতে ছাত্রদের সংগঠিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা পার্টিকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে। ‘গ্রামে চলো’ অভিযান ও শহরে শ্রমজীবীদের মধ্যে যাওয়ার জন্য ছাত্রদের ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বন্ধ জুট মিল শ্রমিকদের পাশে যাওয়ার প্রশ্নে হুগলীর ছাত্রদের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক।
আগামী ৮-৯ ফেব্রুয়ারী মহিলাদের জাতীয় সম্মেলন রাজস্থানের জয়পুরে অনুষ্ঠিত হবে। একে কেন্দ্র করে মহিলাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। যাকে আরও গতি দিতে হবে। বিভিন্ন জেলায় নানাবিধ কর্মসূচীতে মহিলাদের অংশগ্রহণ দেখা যায়, কিন্তু সেখানে মহিলা সংগঠন গড়ে উঠছে না। এটা জেলা পার্টির পক্ষ থেকে পরিকল্পনার অভাবকেই দেখিয়ে দেয়। তাই মহিলা কর্মীদের সহযোগিতা করতে জেলা পার্টিকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রমজীবী মহিলাদের ইউনিয়নে সংগঠিত করার জন্য বেশকিছু সংখ্যক মহিলা কর্মী রয়েছেন, তুলনায় সাধারণ মহিলাদের সংগঠিত করার কাজে দায়বদ্ধ কর্মীদের সংখ্যা কম। আমাদের এই দুটি কাজকেই মেলাতে হবে। আমাদের ইউনিয়নে যে সমস্ত প্রকল্পকর্মীরা আছেন তারা আপনা-আপনিই মহিলা সংগঠনের সদস্য হয়ে যাবেন না। পৃথকভাবে তাঁদের মধ্যে গিয়ে মহিলা সংগঠনে নিয়ে আসতে হবে। মহিলারা যেখানেই সংগঠিতভাবে আছেন সেখানেই আমাদের যেতে হবে, এক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠী কোনো ব্যতিক্রম নয়।
আগামী বছরের ২-৪ মার্চ নৈহাটিতে ট্রেড ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরাজ্যের কয়েকটা সেক্টরে শ্রমিক আন্দোলনের একটা গতি আছে, সেখানে আমাদের ইউনিয়নের বিশেষ পরিচিতি গড়ে উঠছে। সেই ক্ষেত্রগুলিতে এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে সম্মেলনের ব্যাপক প্রচার শুরু করা যায়। একই সাথে ৮ জানুয়ারী সারা ভারত সাধারণ ধর্মঘটের প্রচারকে মেলাতে হবে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের ইউনিয়নটিকে আমাদের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদিত করার প্রচেষ্টা চলছে। রেলে বেসরকারীকরণ ও পেনশন স্কীমের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী রেল-কর্মচারিদের আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের পাশে সাধারণ নাগরিকরাও সামিল হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, মোদী সরকার রাজনীতিতে সর্বদাই জাতীয়তাবাদের ধূয়ো তুলেছে, কিন্তু অর্থনীতির ক্ষেত্রে গৃহীত হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী নীতি — সার্বিক বেসরকারীকরণ। এটা আজকের দিনে সাধারণ মানুষের কাছে খুবই সংবেদনশীল বিষয়, মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এই দিকটাকে বিবেচনা করে আমাদের বৃহত্তর পরিধিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা নিতে হবে। পরিবহন ক্ষেত্রে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা ভালো সূচনা ঘটাতে পেরেছি। মিড-ডে-মিল রন্ধনকর্মীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নির্মাণ ও চা শ্রমিকদের মধ্যে আমাদের ধারাবাহিক কাজ চলছে, এই ক্ষেত্রগুলিতে প্রচারের বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। জুট মিল এলাকায় সম্মেলন করার কারণে আমরা সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শ্রেণী ঐক্যর উপর জোর দিয়ে প্রচারকাজ চালাবো।
কেন্দ্রীয় কর্মশালার নির্ধারিত দিশায় এআইপিএফ-কে কয়েকটি জেলায় গঠন করা এবং কার্যকরী করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের মোকাবিলার বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও বাম শক্তির এক ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ হিসাবে এই ফোরামকে সক্রিয় করে তোলা বর্তমান পর্যায়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আদিবাসী সংগঠন হুগলী জেলায় উল্লেখযোগ্য শক্তি সমাবেশিত করা এবং আন্দোলনমুখী উদ্যোগের পর বর্তমানে বর্ধমানে কাজ শুরু করেছে। এবছরের শেষ দিকে বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় এক আদিবাসী কনভেনশন সংগঠিত হবে। যেখানে মূল ইস্যু হল বনাঞ্চলের জমি সহ আদিবাসী জনগণের অন্যান্য অধিকার সংক্রান্ত। দিল্লীর বুকে কিষাণ মহাসভার উদ্যোগে আগামী ২১ নভেম্বর এক সর্বভারতীয় আদিবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরাজ্য থেকে তাতে প্রতিনিধিদের পাঠাতে হবে।
আগামী বছরের শুরুর দিকে এক লক্ষ গণসদস্য সংগ্রহের ভিত্তিতে কিষাণ মহাসভার রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি,
সিপিঅাই(এমএল) লিবারেশন