আমরা প্রত্যেকেই এই বিষয়ে একমত হব যে বর্তমানে ভারতের ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামো বিপুল অনাদায়ী ঋণের বোঝায় আক্রান্ত। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই কারণ গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে অনাদায়ী ঋণ। এখন তার পরিমান প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকার উপর। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এরকম যে ৫০০টি শীর্ষস্থানীয় অনাদায়ী ঋণকে সুচিবদ্ধ করেছে তাদের অধিকাংশই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সুপারিশে ঋণ দান হয়েছে। এ ব্যাপারে বহু আলোচিত মুখ অনিল আম্বানি, গৌতম আদানি, বিজয় মাল্য, ভূষণ স্টীল, লানকো ইত্যাদি যারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাঙ্কের মোট অনাদায়ী ঋণের ৮৫ শতাংশ অধিকার করে আছে। এই অনাদায়ী ঋণ শুধু ব্যাঙ্কগুলি নয়, সারা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তথা আম জনতার স্বার্থে আঘাত হানছে।
এখন সরকার ব্যাংকের এইসব অনাদায়ী ঋণের দায় ছেড়ে দিতে বদ্ধপরিকর এবং আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের কাঁধে এই দায়ভার দেওয়ার উদ্দেশ্যে যে বিল পাশ করাতে চলেছে, তার নাম এফআরডিআই ২০১৭ বিল (ফাইনান্সিয়াল রেজোলিউশন এন্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স)। এই বিলে একটি নতুন কর্পোরেশন গঠন করে, তাকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়ে আর্থিক সংস্থাগুলির সম্পদ ও দায় প্রত্যর্পন করা হয়। সংস্থাটিতে ১১ জন সদস্যর মধ্যে ৭ জনই হবে সরকারের প্রতিনিধি। ‘বেইল ইন’ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক সহ আর্থিক সংস্থায় অনাদায়ী বড় বড় ঋণ খেলাপিদের মুক্ত করে দিয়ে তাদের ঋণের দায়ভার আমানতকারীদের কষ্টার্জিত উপার্জনের গচ্ছিত টাকার থেকে তোলার প্রচেষ্টা থাকবে। এছাড়া একীকরণ ও অধিগ্রহনের ফলশ্রুতিতে ব্যাঙ্কগুলির বেসরকারিকরণের আশঙ্কা তো থাকছেই। মানুষের ঘাম ঝরানো সঞ্চয়ের টাকায় হাত পড়ার আশঙ্কা স্পষ্ট। সমস্তটাই রেজলিউশন কর্পোরেশনের হাত ধরেই হবে। সংসদের দায়বদ্ধতার কোন সুযোগ থাকছে না। রেজলিউশন কর্পোরেশনের কোনো সিদ্ধান্তকে আদালতেও চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঋণ গ্রহণকারী কর্পোরেটগুলির উপর কার্যকারী নিয়ন্ত্রণ নেই, অতএব ব্যাঙ্কগুলিকে বেরিয়ে আসতে গেলে তার দায়ভার চাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হল ‘বেইল ইন’। এই নতুন আইনে সুদ তো দূর অস্ত, আপনার মূল বিনিয়োগই ফেরত পাবেন তার কোনো গ্যারান্টি থাকছে না। আপনার ১৫ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট যা হয়ত ছেলের উচ্চশিক্ষা বা মেয়ের বিয়ের খরচের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল, সেটা ভাঙাতে গিয়ে দেখলেন যে আপনি ফেরত পাচ্ছেন মাত্র ১ লক্ষ টাকা বা তারও কম।
সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিশ্বাসঘাতকতার জঘন্যতম উদাহরণ ‘এফআরডিআই বিল ২০১৭’ পাশ করিয়ে নিতে চায়। ব্যাঙ্ক, বিমাশিল্পের সাথে যুক্ত অফিসার, শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনগুলি এর সর্বাত্মক বিরোধিতা করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে সাধারণ মানুষের স্বার্থে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ অনেক বড়, সামনে লড়াই অনেক কঠিন। তাই এই বিরোধিতায় টেনে আনতে হবে দেশের আপামর মানুষকে। আত্মসমর্পণের অর্থ ভবিষ্যতের মৃত্যু। এ লড়াই বাঁচার লড়াই। আসুন সবাই মিলে এর তীব্র বিরোধিতা করি, একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে সামিল হই।
ব্যাঙ্ক, বিমা কর্মচারী ও দেশের সাধারণ মানুষের ঐক্য জিন্দাবাদ।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন, পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রতিবেদন
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখা
সৌম্য দত্ত সঞ্জয় দাস
সভাপতি সম্পাদক
(হোয়াটস অ্যাপের পাতা থেকে)