গত ৭ ফেব্রুয়ারি, বিকেল ৫টায়, গড়িয়ার কাছে, বারুইপুর ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের অন্তর্গত নরেন্দ্রপুর থানার অধিকার ক্ষেত্রের মধ্যে, কামালগাজি মোড়ে, এআইএসএ, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, একুশের ডাক, এপিডিআর সহ বিভিন্ন সংগঠন ও মঞ্চ একটি প্রতিবাদসভা আয়োজন করে। উল্লেখ্য, দলিত আন্দোলনের কর্মী শরদিন্দু উদ্দীপন, সম্প্রতি ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কিত একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্ট করার জন্য শরদিন্দু উদ্দীপনকে গ্রেপ্তার এবং হেনস্থার বিরুদ্ধে এবং মত প্রকাশের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি কামালগাজি মোড়ে সংগঠিত হওয়া সভার একমাত্র লক্ষ্য।
বিকেল ৫.৩০টা - ৬.৩০টা
সভা শুরুর সাথে সাথে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ সভায় উপস্থিত কমরেডদের উপর নামিয়ে আনে পুলিশী সন্ত্রাস। আইসা’র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট প্রেসিডেন্ট রুদ্র প্রভাকর দাস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সদস্য আকাশ গুপ্তা, যাদবপুরের প্রাক্তনী, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটি সদস্য চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী সহ মোট ৬জন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করে।
রাত ৭.৩০ টা - ৯.৩০টা
সংগ্রামী সাথীদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনে জড়ো হন পড়ুয়া, সামাজিক ও রাজনৈতিক গণআন্দোলনের কর্মীরা। বেশ কিছু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ব্যক্তিগত বন্ডে, গ্রেপ্তার হওয়া সাথীরা ছাড়া পাওয়ার পর, তাদের সংহতিতে অভিবাদন জানাতে যাদবপুরের পড়ুয়ারা স্লোগান দেন। স্লোগান দেওয়ার সাথে সাথে তাদের উপর নেমে আসে, পুলিশের অকথ্য অত্যাচার। চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে, এলোপাথাড়ি লাঠি, লাথি, ঘুষি, বুট দিয়ে মাথা মাটিতে চেপে ধরা এসব চলতে থাকে। অশ্রাব্য গালিগালাজ, এবং এই অমানবিক লাঠিপেটার মূল কারণ হিসাবে পড়ুয়াদের ‘লাল সেলাম’ স্লোগানকে পুলিশ দর্শায়। আবারো গ্রেপ্তার করে ১১জনকে। ওই রাতে দুজন ছাড়া পেলেও, বাকি ৯ জনকে আটকে রাখা হয় এবং থানা লকআপের ভেতরেই চলে রাত ধরে বাকি ৯ জন পড়ুয়ার ওপর অকথ্য-অমানবিক ধমকি, মারধর। গ্রেপ্তার হওয়া সাথীদের পরদিন বারুইপুর কোর্টে আনে পুলিশ, জানা যায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, অপরাধমূলক কাজে উস্কানি, ইত্যাদি ধারায় মামলা লাগু হয়েছে। বারুইপুর কোর্টে হাজির করার সময় কোমরে দড়ি বেঁধে আনা হয়। পুলিশের মিথ্যে, ভুয়ো অভিযোগের ভিত্তিতে খারিজ হয় ধৃতদের জামিনের আবেদন। বারুইপুর আদালত, পুলিশকে একটা দিন সময় দেয় কেস ডায়েরি ফাইল করতে। পরদিন অর্থ্যাৎ বুধবার, বিকেল ৪টার সময় জামিন মঞ্জুর হয় বর্ষা এবং সৌমীর। ওইদিনই বাকি সাথীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থী সমাজ। #RELEASEJU9 এই হ্যাশট্যাগ সামনে রেখে মিছিল বেরোয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪নং গেট থেকে এবং যাদবপুর থানা হয়ে সেই মিছিল শেষ হয় যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে। মিছিল শেষে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে ওই চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতি পুলিশের এহেন ঘৃণ্য আচরণ এবং নির্বিচার আক্রমণের প্রতিবাদে জ্বালানো হয় মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকা। রাস্তা অবরোধ তুলতে সেখানেও নেমে আসে পুলিশের আক্রমণ। পুলিশের মারের মুখে অজ্ঞান হয়ে আইসা রাজ্য কমিটি সদস্য ত্রিয়াশাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আইসা এবং মহিলা সমিতির দুজন সদস্যা বর্ষা এবং সৌমি বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বাকি পড়ুয়াদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পড়ুয়ারা।
আইসা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালনের ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি ইত্যাদি জেলায় জেলায় গর্জে ওঠে পড়ুয়া থেকে অভিভাবক, গণতান্ত্রিক-মানবাধিকার-মত প্রকাশের লক্ষ্যে লড়তে থাকা মানুষেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সাথীদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪নং গেট বন্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভ চালায়। এবার #RELEASEJU7, এই দাবিতে আবারও অবরুদ্ধ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজা এসসি মল্লিক রোড। অবরোধ অবস্থানের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বর্ষা দৃপ্ত কণ্ঠে জানান দেন, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ, এবং শেষ পর্যন্ত এটাই বলবো ইনকিলাব জিন্দাবাদ”। ৯জন পড়ুয়ার সংহতিতে এসএফআই, ডিএসও, পিডিএসএফ, রিফ্রাকশন, আরএসএফ, এপিডিআর সহ বিভিন্ন বাম ও গণতান্ত্রিক মহল পাশে দাঁড়ায়।
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দাঁড়ায়, বার্তা ছড়ায়। এছাড়াও ১১ তারিখ আইসা দিল্লীতে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীছাত্রদের ওপর পুলিশী হামলা, হেফাজতে বন্দী রাখা ও মামলা চাপানোর বিরুদ্ধে; মুক্তির দাবিতে রাজ্য সরকরের ‘বঙ্গ ভবন’ অভিযান করে ডেপুটেশন দেয়।
পরদিন শুক্রবার বৃহত্তর গণতান্ত্রিক জনশক্তির চাপে, যার কেন্দ্রে ও আত্মঘোষণায় রত ছাত্ররা, এই সম্মিলিত শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে মুক্তি পায় বাকি ৭ সাথী সাগুণ, রুদ্র, জিত, সৌমেন্দু, সোহেল, আকাশ এবং মুজতবা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন পড়ুয়া হয়তো মুক্তি পেয়েছে, তবে মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করার আন্দোলন এখানেই শেষ হওয়ার নয়। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে যেভাবে শিক্ষা ও কাজের দাবিতে আন্দোলনের উপর নেমে এসেছে বিজেপি সরকারের অকথ্য আক্রমণ, তারই পুনরাবৃত্তি যেন আমরা দেখলাম বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা যাদবপুরের পড়ুয়াদের উপর তৃণমূল সরকারের পুলিশের এহেন আচরণের মধ্যে। বিজেপি-আরএসএস যেভাবে এই দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক পরিসর ধ্বংস করার অপচেষ্টায় নেমেছে, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর বারংবার দমন-পীড়ন নামিয়েছে, সেই পদ্ধতিই যেন অনুসরণ করছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। এহেন আচরণ করে টিএমসি নিজেই তার বিজেপি বিরোধিতার উদ্দেশ্যকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। তৃণমূল শাসনে বারবার গণতান্ত্রিক পরিসরের উপর, বাক-স্বাধীনতার উপর নেমে আসছে পুলিশের মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত আক্রমণ, এমনকি ব্রাহ্মণ্যবাদী ও পুরুষতান্ত্রিক আচরণ।
এই আন্দোলনের দাবি খুব পরিষ্কার,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার হওয়া পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে সমস্ত ভুয়ো মামলা প্রত্যাহারের কর!
নরেন্দ্রপুর থানার সমস্ত দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চাই!
নরেন্দ্রপুর থানার ওসি এবং সেকেন্ড অফিসারকে বরখাস্ত করতে হবে!
সরব হোন। বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করুন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের শুরুতে বিগত দিনে প্রয়াতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এইসময়ে প্রয়াত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পার্টি নেতা ও কর্মী — যথাক্রমে উড়িষ্যার বর্ষীয়ান প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ক্ষীতীশ বিসোয়াল, বিহারের প্রবীণ প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য পবন শর্মা, পশ্চিমবাংলার গৌরীশঙ্কর দত্ত, অমিতাভ দে (ফুচকন) (হাওড়া), কুহেলী বসু (উঃ চব্বিশ পরগণা), নিমাই মন্ডল (পূর্ব বর্ধমান), বানের শেখ (নদীয়া), হারাধন আদক (হুগলী), বাবু মজুমদার (জলপাইগুড়ি), হরেন মন্ডল, ঝুমা দাস, বিশ্বনাথ নস্কর, দিলীপ পাল (কাঁদন), শম্ভু সরকার, লিয়াকত মোল্লা (দঃ ২৪ পরগণা)।
ঐ বৈঠকে বিশেষ করে চলমান পরিস্থিতির উপযোগী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১) দেউচা-পাঁচামী খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্পের বিরোধিতায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বহুমুখী উদ্যোগ নেবে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দিশায় ঐ এলাকার আদিবাসী জনগণের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সেখানকার সমস্ত গরিব মানুষের সাথে একাত্মতা গড়ে তোলা, রাজ্য জুড়ে বিশেষত কলকাতায় নানাবিধ শক্তির সাথে এই সর্বনাশা প্রকল্প বিরোধী জনমত সংগঠিত করা ও আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে যৌথ কার্যকলাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বীরভূম জেলায় পার্টি সংগঠন ও অন্যান্য শক্তিকে সমাবেশিত করে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে পরিস্থিতির বিকাশের সাথে সঙ্গতি রেখে সময়োপযোগী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। আশু দুটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার মৌলালী যুবকেন্দ্রে সম্প্রতি গঠিত যৌথমঞ্চের পক্ষ থেকে গণকনভেনশন হবে, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দেউচা-পাঁচামী এলাকায় আক্রান্ত মানুষের উদ্যোগে গঠিত সংগঠনের আহ্বানে সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে যাওয়া হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষিত হবে। দেউচা-পাঁচামী এলাকায় কাজের জন্য পার্টি গণসংগঠনগুলিকে বিশেষ করে পার্টির উদ্যোগে গড়ে ওঠা আদিবাসী সংগঠন ও অগ্রণী কর্মীদের ঐ এলাকায় যেতে হবে। তৃণমূল সরকারের মিথ্যাচার, দ্বিচারিতা, শঠতা ও সমস্ত রীতি পদ্ধতি আইনকানুনকে নস্যাৎ করে নামিয়ে আনা সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকা, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
২) শহরাঞ্চলে কাজের সম্প্রসারণ, নতুন নতুন এলাকা ও শক্তির মধ্যে যাওয়ার লক্ষ্যে আসন্ন পৌর নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) গুরুত্বের সাথে অংশগ্রহণ করবে। বর্তমান রাজ্য পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি ধাক্কা খাওয়ার পর বামপন্থীদের পরিসর কিছুটা বাড়ছে। একে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে হবে। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট বিজেপি’র সর্বাত্মক বিরোধিতা অব্যাহত রেখে তৃণমূলের অপশাসন, স্বৈরাচার, জনমোহিনী কর্মসূচির আড়ালে গরিব মেহনতী মানুষের প্রতি প্রতারণা ও অধিকারহরণের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের বার্তা তুলে ধরে চলবে। সারা রাজ্যে বামপন্থীদের নির্বাচিত করার আহ্বান জানাবে। নির্বাচনের নামে প্রহসন, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা, চরম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাবে। নির্বাচনী প্রচারে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জনমুখী উন্নয়নের বিষয়গুলিকে তুলে ধরবে। এছাড়া গণতন্ত্রের প্রশ্নকে ফোকাসে রেখে নাগরিকদের অধিকার, নিরাপত্তা, পুরসভার স্বশাসন প্রভৃতি প্রশ্নগুলিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত মেহনতী মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলি অগ্রাধিকারে থাকবে। উঃ ২৪ পরগণার ৫টি পৌরসভায় ১টি করে ওয়ার্ডে, হুগলীর ৪টি পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ডে, বাঁকুড়ার ১টি পৌরসভার ২টি ওয়ার্ডে, নদীয়ার ১টি পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডে, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১টি পৌরসভার ১টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হচ্ছে। বাঁকুড়া ও নদীয়া জেলায় সিপিআই(এম)-এর সাথে আসন বোঝাপড়া হয়েছে। তবে সেখানে পার্টি স্বাধীনভাবে প্রচার ও নির্বাচনী কর্মকান্ড চালাবে। বামদলগুলির সাথে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মাত্রা অনুযায়ী যুক্তভাবে নির্বাচনী কাজ চালানো হবে।
৩) আগামী ২৮-২৯ মার্চ সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে ট্রেডইউনিয়নগুলির কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে সমগ্র পার্টি সংগঠনকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। কৃষক ও কৃষিমজুর সংগঠনগুলি ঐ একই দিনে গ্রামীণ ভারত বনধের আহ্বান জানিয়েছে। ধর্মঘটকে সফল করে তুলতে সমস্ত গণসংগঠনগুলিকে যুক্তভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
৪) নরেন্দ্রপুর থানায় ও লকআপের ভেতরে পুলিশের সুপরিকল্পিত নৃশংস হামলা মোকাবিলা করে ছাত্র ও মহিলা সংগঠনের কর্মীদের বলিষ্ঠ ও সাহসী প্রতিরোধ অত্যন্ত ইতিবাচক। আক্রান্ত কর্মীদের এই উজ্জ্বল ভূমিকাকে পার্টির রাজ্য কমিটি সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে। ছাত্র ও মহিলা সংগঠন সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পার্টি, গণসংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও ধিক্কার কর্মসূচি সংগঠিত করা হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে হবে। ইতিমধ্যে এই নির্মম পুলিশী সন্ত্রাসের জন্য দায়ী পুলিশ অফিসারদের বরখাস্তের দাবিতে জাতীয় ও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনের কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হচ্ছে।
মোদী সরকার যখন প্রতিবাদী শক্তিগুলিকে ‘আরবান নকশাল’ বলে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনছে, তখন তৃণমূল সরকারও মতপ্রকাশ এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর পুলিশী হামলা নামিয়ে আনছে। এটা দেখিয়ে দেয় নকশালপন্থা শাসকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। এই ইতিবাচক দিকটিকে ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে আমাদের পার্টি ও গণসংগঠনগুলি উদ্যোগ বাড়িয়ে তুলবে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রয়াসী হবে। আক্রমণকারী পুলিশ অফিসারদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
তৃণমূল চলন-বলন-শরীরী ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছে বিন্দুমাত্র কোনোরকম সমালোচনা বা বিরোধিতার তোয়াক্কা না করে স্বৈরাচারের পথ অনুসরণ করে চলার পক্ষপাতী। তার আরও একবার ন্যক্কারজনক প্রমাণ পাওয়া গেল সদ্য অনুষ্ঠিত এককালীন চার পুরনিগমের নির্বাচনে এবং কয়েকটি পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল নেওয়ার মধ্যে। টিএমসি-র পৌর বিজয়রথজবরদস্তি ছোটানোর এটাই শুরু নয়। প্রথমবার এই অপরাধ করল তা নয়। যে কলকাতা মহানগরীকে দলনেত্রী ‘ঝাঁ চকচকে’ বিজ্ঞাপিত করতে শুরু করেছেন তার কর্পোরেশনও উপর্যুপরি কব্জায় আসা পুরোপুরি নিরামিষভাবে হয়নি। ‘কর্পো-ক্ষমতা’য় একদশক থাকা হয়ে যাওয়ার পরেও বর্ষা এলেই জীবন নরক করে তোলে পচা জল জমে থাকা পথঘাট, ঘরদুয়ার,হাটবাজার। উপরন্তু, মাঝেমধ্যেই গরিব-নিম্নবিত্তদের তাড়া করে পানীয় জলের সংকট। বঞ্চনার বিস্তারিত খতিয়ান জনমানসে রয়েছে। একটু কান পাতলেই শোনা যায়। সেই ট্র্যাডিশন চলছে সমানে। দুর্নীতি একেবারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আজও ‘চোরপরেশন’ ব্যঙ্গ শুনতে হয়। টিএমসি কলকাতা কর্পোরেশন চালায় কর্পোরেট কায়দায়। কয়েক হাজার পদ শূন্য হয়ে রয়েছে, নিয়োগ হয় না, নিয়োগ না হওয়া মানে পরিষেবা প্রদানের পুঁজি বরাদ্দে ও পরিকাঠামোয় প্রবল সংকোচন। কিছু আপ্ত বাক্য আউরে নাগরিক সমাজকে ধোঁকা দেওয়া হয়। ‘পৌর উন্নয়নের’ ভাগ্য ঠিক করে দেওয়ার মালিক শাসকের দলতন্ত্র। পরিষেবা সরবরাহে ক্রমেই বাড়ছে আউটসোর্সিং বরাত, ঠিকেদার-ঠিকা চুক্তির সমীকরণ সর্বস্বতা। এতো সমস্যার মধ্যেও যে বিশাল আসন সংখ্যার ব্যবধানে সিএমসি জিতে নিয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে অন্য খেলা খেলে। তৃণমূল যেভাবে কলকাতা নির্বাচন সেরেছে, সেই ধারাতেই মরীয়া হচ্ছে — মরীয়া হবে বাকি সব পৌর নির্বাচন দখলে। দুটি পুরসভা জিতে নিয়েছে তথাকথিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, চারটি পুরনিগমের দখল নিয়েছে মূলত সন্ত্রাসের অনেক কারসাজি করে — যেমন, জলের লাইন, বিদ্যুতের খুঁটি যাবে না, এই সুবিধা হবে না — ঐ সুবিধা পাবে না। বিজেপি’র ‘ডবল ইঞ্জিন’ ধারণাকে টিএমসি রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ও পৌরসভায় নিজের মতো করে চালাতে বেপরোয়া। তার জন্যই যাবতীয় পৌর ক্ষমতা বিরোধী শূন্য একচেটিয়া করে নিতে চাইছে। ধমকি-হুমকিতে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিতে, প্রত্যাহার করাতে বাধ্য করাই টিএমসি-র মূল প্রবণতা। এই প্রতিযোগিতায় উন্মত্ত করে তোলা হচ্ছে গোটা দলকে, করে দেখাতে পারলে ‘পুরস্কার’। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঠিক এই মারমুখো আগ্রাসন চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন দলের বীরভূমের ‘বীর নেতা’। তার বিনিময়ে ‘বীরের’ শিরোপা পেয়েছিলেন দলনেত্রীর কাছ থেকে। এবার পৌর নির্বাচনের আগে সেই ডাকসাইটে মাথা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এক মামলায় হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ জোগার করেই দলকে একের পর এক পৌর চ্যাম্পিয়ন করার ‘খেলা’ দেখাতে নেমেছেন। ‘পুরস্কার’ও মিলেছে দলের ‘জাতীয় কর্মসমিতি’তে পদোন্নতির। মমতা সরকার একদিকে এই সবই ‘মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদ’ বলে ধূর্তামি আর অন্যদিকে ‘নম্র ও দায়িত্বশীল’ হওয়ার লোকদেখানো ভন্ডামী করছে।
এরাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ট্র্যাজেডি চলার এক বিশেষতা হল, একদিকে ফ্যাসিবাদী বিজেপির বিরোধিতার মহিমা আত্মসাৎ করতে অনেকবেশী সফল টিএমসি, সেই আবরণে স্বৈরাচার কায়েম করছে; অন্যদিকে, তৃণমূলের বিপরীতে বিজেপি এখনও প্রধান বিরোধী পক্ষের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারছে, যদিও গত বিধানসভা নির্বাচনে উচ্চাকাঙ্খায় ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্নতা ও গোষ্ঠীভাঙনের মধ্য দিয়ে চলছে।
এহেন ট্র্যাজিক পরিস্থিতি আপনা আপনি পাল্টে যাবে না। এই অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার জন্য সব ধরনের বাম শক্তিসমূহকে দায় স্বীকার করতে হবে। সেসব নিয়ে অকপট আত্মানুসন্ধান, পর্যালোচনা, চিন্তাশীল স্বাস্থ্যকর তর্ক-বিতর্ক চলবে, চলুক। তবে বাম পুনরুজ্জীবনের চ্যালেঞ্জ নেওয়াকেই পাখীর চোখ করতে হবে। সেটা সম্ভব আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে প্রাথমিকতা দিয়ে। নিরন্তর জনগণের কাছে যাওয়া, জনগণকে সংগঠিত করা, সমাবেশিত করার ধারা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতিতে আশার শর্তগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন মাত্রায় বিকাশমান হচ্ছে। স্কুল শিক্ষায় শিক্ষক কর্মপ্রাথীদের লাগাতার আন্দোলন, যা যুব আন্দোলনেরই এক জীবন্ত রূপ, দেউচা-পাঁচামীর উচ্ছেদের আশঙ্কায় প্রতিবাদ শুরু আদিবাসী মানুষেরা, আক্রান্ত ছাত্রছাত্রী ও মহিলাদের রুখে দাঁড়ানো, এবং আরও কিছু সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। এই নতুন নতুন বিষয়গুলোতে নিছক হস্তক্ষেপের রাজনীতি নয়, আলোড়ন তোলার উদ্যোগ ও সক্রিয়তা প্রয়োজন। বাকি পৌরসভাগুলোর নির্বাচনও লড়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
সংসদে বাজেট অধিবেশনের শেষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে, সমস্তক্ষেত্রে সরকারি অকৃতকার্যতার সমালোচনার কোন উত্তরই দেওয়া হল না। অভূতপূর্ব বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি, এবং কোভিড মোকাবিলায় চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মত চূড়ান্ত অপরাধ যার বলি হয়েছেন অজস্র মানুষ — এসব অভিযোগেরও কোনও জবাব মেলেনি। তথাকথিত ‘অমৃত কাল’ এবং ‘ভারত@১০০’র মতো দায় এড়ানো চমকদার বাজেট-বুলির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির দাবি জানালে, সে প্রশ্নেও তিনি নিরুত্তর থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন! উল্টে তিনি সব বিপর্যয়ের দায় বিরোধীদের কাঁধে চাপিয়ে, ডাহা মিথ্যে বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করলেন যেটা এসব ক্ষেত্রে তার বহু ব্যবহৃত অতি চেনা এক কৌশল।
২০২২-কে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির স্মারক ‘অমৃত বর্ষ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই ২০২২’র জন্য ২০১৫-তে প্রধানমন্ত্রীর তরফে এবং বাজেটে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে ছিল কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা, সহজ ঋণের জন্য দেশ জুড়ে পোস্ট অফিসগুলিকে পেমেন্ট ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত করা, ভারতের প্রতিটি গৃহস্থের জন্য পানীয় জল, শৌচাগার, বাড়ি, ২৪/৭ বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সড়ক সংযোগ সুনিশ্চিত করা। ২০২২-এ, বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী — এইসব প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতা প্রসঙ্গে একেবারে নীরব। বরং ঐ প্রতিশ্রুতিগুলিকেই ‘তাজা’ ঘোষণা হিসেবে উগড়ে দেওয়া হল, অর্থাৎ নতুন মোড়কে হাজির করা হল! একমাত্র ফারাক হল ২০১৫-তে ২০২২-কে ‘অমৃত বর্ষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিল ঐ বছরের মধ্যে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে; আর ২০২২’র বাজেটে ঘোষণা করা হল আমরা সবাই ‘অমৃত যুগে’ প্রবেশ করেছি এবং সব প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে ‘ভারত@১০০’তে অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষে! সুতরাং সত্যিকারের উন্নয়ন এবং কাজের ক্ষেত্রে মোদী সরকারের ন্যূনতম দায়বদ্ধতার কোন চিহ্ন নেই এই বাজেটে। শুধু লক্ষ্যস্থলের এক চটকদার নাম দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিশ্রুতিপূরণকে ২৫ বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে!
২০২২’র বাজেটে ৬০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোথা থেকে সেই চাকরি আসবে সে ব্যাপারে বিশদে কিছুই বলা হয়নি! সরকারি ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ পূরণের ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই — দেশের শিক্ষিত তরুণ বেকার সম্প্ররদায় বছরের পর বছর যে দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু জুটছে শুধু পুলিশের মার। বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি, মনরেগা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জনস্বাস্থ্যেরও বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পেগাসাস সফ্টওয়্যার, যা ভারতীয় নাগরিকদের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, তারজন্য সরকার কোষাগারের কত অর্থ কাজে লাগিয়েছে, সে বিষয়ে আদৌ কোনও স্বচ্ছতা নেই। কিন্তু এসব বিষয়ে যে কোন প্রশ্নেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া হল প্রশ্নকর্তাদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে দেগে দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী তার বিরোধী পক্ষকে ‘আরবান নকশাল’, ‘টুকরে টুকরে গ্যাঙ’ বলে অভিহিত করেছেন — যে অভিধাগুলো তার প্রচার-মিডিয়ার দেওয়া যা বলতে চায় — সমস্ত সমালোচকরা দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল, সরকারের কোভিড মোকাবিলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্জলা মিথ্যা বলা। কোভিড ছড়িয়ে পড়ার জন্য তিনি দিল্লীর আপ এবং মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করেছেন — তাদের অপরাধ, তারা লকডাউনে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছিল! নির্লজ্জভাবে তিনি এটা বলছেন, এমনকি যখন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তার রাজ্যের ভোটারদের কাছে মিথ্যা দাবি করছেন যে একমাত্র তিনিই নাকি আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য ঠিক লকডাউনের শুরুতেই বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন! ঠিক যেমন বিহার নির্বাচনের সময় বিজেপি ভোটদাতাদের কাছে জাঁক করে মিথ্যা বলেছিল — বিজেপি’ই নাকি “পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে এনেছিল”!
সংবাদমাধ্যমের প্রভাবশালী অংশ প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাকথাগুলো ঢাক পিটিয়ে প্রচার করতে পারে। কিন্তু চারপাশটা একটু নজর করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, গরিব মানুষের বাড়ি নেই, পানীয় জল, শৌচাগার, রাস্তা, কাজ, ঋণ, বিদ্যুৎ কিচ্ছু নেই; কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়নি; সত্যি বলতে কি, বেকারত্ব, ক্ষুধা এবং কৃষকদের কষ্ট আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। প্রত্যেকের মনে আছে, অতিমারির সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা (পুলিশের) মার, অসুস্থতা এবং রাস্তাতেই মৃত্যু — এসব সহ্য করেও কীভাবে হেঁটে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রত্যেকের স্মরণে আছে, কোভিড ছড়ানোর জন্য পরিযায়ী শ্রমিকরা দায়ী নন; প্রধানমন্ত্রীর গোঁ ধরা জেদে অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলা এবং বাংলার নির্বাচনী জমায়েতগুলোই ভারতে কোভিড’এর ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ে এত মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর তাদের এটাও স্মরণে আছে যে, অক্সিজেন ও হাসপাতালে শয্যার মারাত্মক সংকট যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হওয়া উচিত, সেটাই বেশির ভাগ মৃত্যুর কারণ!
মানুষ নির্বাচনে এবং রাস্তায় (আন্দোলনে) প্রধানমন্ত্রীর এই মিথ্যা কথা ও বাজেট-বিশ্বাসঘাতকতার হিসাব রাখছেন।
(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২)
হাওড়া
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা দিবসে হাওড়া জেলায় আড়ুপাড়া-কামাড়ডাঙ্গা অঞ্চলে প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা কমিটি’র নেতৃত্বে পথসভা হয়।
এই সভায় মহিলাদের উপর চলা মৌলবাদী ও রাষ্ট্রীয় হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, মেয়েদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কাজ-নিরাপত্তার দাবিতে এবং ন্যায়, স্বাধীনতা ও সমতার দাবির লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান রাখা হয়। এরসাথে গণতন্ত্রের মুখোশধারী তৃণমূল সরকারের পুলিশের নরেন্দ্রপুর থানা লকআপে আইসা ও আইপোয়া সাথীদের উপর বর্বর পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং অত্যাচারী পুলিশ অফিসারদের বরখাস্তের দাবি জানানো হয়।
আগামী ২৮-২৯ মার্চ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ভারত বনধ্ সফল করে তোলার আহ্বান জানিয়ে শ্লোগান দিয়ে সভা শেষ করা হয়।
শুরুতে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন জেলার মহিলা সমিতির নেত্রী সুষমা ব্যানার্জী, বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদিকা কল্যানী গোস্বামী, এআইসিসিটিইউ’র জেলা সম্পাদিকা মীনা পাল এবং সিপিআই(এমএল)-এর জেলা নেতা প্রণব মন্ডল। সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্ত ও জেলা নেত্রী সবিতা কোলে।
হুগলি
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ২৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস ১২ ফেব্রুয়ারি পালিত হল প্রতিবাদ ও দাবি দিবস রূপে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার নরেন্দ্রপুর থানায় মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত আইপোয়া এবং আইসা’র নেতা-কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত নিপীড়ন ও গ্রেফতারির বিরুদ্ধে। সভা থেকে থানার ওসি এবং আরেক অপরাধী অফিসারকে বরখাস্ত ও অন্যান্য দোষী পুলিশদের শাস্তির দাবিও তোলা হয়। বলা হয়, এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সমস্ত দায় মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীকেই নিতে হবে।
এছাড়া সমগ্র ভারতে নারীর স্বাধীনতা, সমতা, নিরাপত্তার দাবি এবং মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সমিতির ১২ দফা দাবির জাতীয় কর্মসূচি নিয়ে কর্মীসভায় আলোচনা হয় তিনটি ব্লকে। ধনিয়াখালির জয়হরিপুর অঞ্চলে সভা পরিচালনা করেন অর্পিতা রায়, বলাগড়ে একতারপুর অঞ্চলে হেনা সুলতানা এবং পান্ডুয়ার তিননা অঞ্চলে জেলা সম্পাদিকা শিপ্রা চ্যাটার্জী ও চৈতালি সেন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে সমিতির দাবি ও প্রতিবাদ জনগণের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগণা
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি ‘আইপোয়া’র ২৯তম প্রতিষ্ঠা দিবসে সাম্য স্বাধীনতা এবং সমতা’র স্লোগানকে সামনে রেখে বারাসাত স্টেশনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পথসভায় বারাসাত, খড়দহ, অশোকনগর, বসিরহাট, কদম্বগাছি, দমদম অঞ্চল থেকে আইপোয়া’র সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তব্য রাখেন আইপোয়া’র রাজ্য নেত্রী অর্চনা ঘটক, জয়শ্রী দাস, মিতালি বিশ্বাস এবং আইসা’র নেত্রী অন্বেষা। বক্তব্যে উঠে আসে সারা দেশ জুড়ে মহিলাদের উপর পিতৃতান্ত্রিক এবং হিন্দুত্ববাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে মহিলা সমাজের লড়াইয়ের কথা। সাম্প্রতিককালে কর্নাটকে হিজাব পরা মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ইসলামোফোবিক চিন্তাকে আইপোয়া ধিক্কার জানায়। বক্তারা বলেন এটি অংসাবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি আইপোয়া এবং আইসা কর্মীদের উপর নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ থানা লকআপে এবং রাস্তায় ফেলে যে নৃশংস অত্যাচার চালায় তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। আইপোয়া-আইসা দাবি জানায় স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকারকে কেন্দ্র করে একটি মিছিলে মমতা সরকারের পুলিশের এই নির্মম অত্যাচার এবং ছাত্রীদের রেপ থ্রেট দেওয়ার বিরুদ্ধে নরেন্দ্রপুর থানার ওসি অনিবার্ণ বিশ্বাস ও আরেক অফিসার সুশোভন সরকার সহ সমস্ত দোষী পুলিশ অফিসারকে অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে।
সভায় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী এবং গণসাংস্কৃতিক পরিষদের নেতা অনুপ মজুমদার। আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক এবং মহিলা আন্দোলনের কর্মী শোভনা নাথ। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন আইপোয়া সদস্যা সোনালি।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
আইপোয়া’র প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন বজবজে বিড়লাপুর পার্কের সামনে আয়োজিত পথসভায় সদ্য ঘটে যাওয়া নরেন্দ্রপুর থানার ওসি’র পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। মহিলাদের কেজি থেকে পিজি শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক করা হোক। শ্রমজীবী মহিলাদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এছাড়া মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস করা ইত্যাদি বিভিন্ন দাবিতে বক্তব্য রাখা হয়। নরেন্দ্রপুর থানায় পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠে। সবশেষে একটি মিছিল হয়।
নদীয়া
যাদবপুরের ছাত্র ও মহিলাদের উপর
থানা লকআপে পুলিশের নৃশংস অত্যাচার এবং
মিথ্যা অভিযোগে জেলবন্দী করা হলো কেন
তৃণমূল সরকার জবাব দাও।
দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চাই প্রভৃতি স্লোগান তুলে ধরে কৃষ্ণনগরে সদর মোড়ে ১২ ফেব্রুয়ারি এক প্রচারসভা সংগঠিত হয়। আইপোয়া’র প্রতিষ্ঠা দিবসের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা অপু কবিরাজ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী তাপস চক্রবর্তী, আরওয়াইএ’র রণজয় সেনগুপ্ত, এআইসিসিটিইউ’র অমল তরফদার, জীবন কবিরাজ এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জয়তু দেশমুখ প্রমুখ।
আজকের দাবি
* মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর!
* গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৫০০ টাকা ধার্য কর!
* শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইনকে সম্প্রসারিত কর। বয়স সীমা বাড়িয়ে ১৪ থেকে ১৮ কর!
* কেজি থেকে পিজি স্তরের মেয়েদের অবৈতনিক ও উৎকৃষ্ট মানের শিক্ষা দিতে হবে!
* মেয়েদের শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কাজ, সুরক্ষা সংক্রান্ত সংবিধান প্রদত্ত অধিকার গুলি নিশ্চিত কর!
* সমস্ত প্রকল্প কর্মীদের সরকারি কর্মচারি হিসেবে ঘোষণা কর!
* জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মেয়েদের উপর মৌলবাদী ও রাষ্ট্রীয় হামলা বন্ধ কর!
নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশী বর্বরতা, এআইএসএ এবং এআইপিডব্লিউএ কর্মীদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে, মিথ্যে মামলায় গ্রেপ্তার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ ও বাখরাহাটে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হয়।
৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ গ্রাম অঞ্চলে এআইএসএ, এআইপিডব্লিউএ, এআইএআরএলএʼর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) জেলা নেত্রী দেবযানি গোস্বামী, শ্যামসুন্দর গোস্বামী, অঞ্জনা মাল, আইসা নেত্রী অনিন্দিতা মালিক, যুবনেতা আশুতোষ মালিক সহ আরো অনেকে।
১০ ফেব্রুয়ারি বজবজ শহরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার, জেলা নেতা ইন্দ্রজিৎ দত্ত, এআইপিডব্লিউএ জেলা সম্পাদিকা কাজল দত্ত, আরওয়াইএ রাজ্য কমিটির সদস্য সেখ সাবির (রাজা) সহ আরো অনেকে।
ঐ দিন বাখরাহাটে আরওয়াইএ, আইসা, এআইপিডব্লিউএ, সিপিআই(এমএল)-এর নেতৃত্বে মিছিল সংগঠিত হয় স্থানীয় পার্টি অফিস থেকে। মিছিল শেষে বাখরাহাট স্কুল মোড়ে বক্তব্য রাখেন আরওয়াইএ-র রাজ্য কমিটি সদস্য শুভদীপ পাল। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) জেলা নেতা দিলীপ পাল, লোকাল সম্পাদক নিখিলেশ পাল, এআইপিডব্লিউএ জেলা নেত্রী পূর্ণিমা হালদার, যুবনেতা সন্দীপ ধাড়া সহ আরো অনেকে।
শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে পোড়াঝাড়-কাওয়াখালি এলাকায় নির্মীয়মান উপনগরী ‘উৎসধারা’ গড়ে তোলার বিরুদ্ধে জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষক ও অন্যান্য বাসিন্দাদের আইনসঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পুলিশ দিয়ে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বাধা দিতে তৎপর রাজ্য প্রশাসন।
১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পোড়াঝাড়-কাওয়াখালি ভূমিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে অবস্থানরত ১৪ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করে নিউ জলপাইগুড়ি থানায় সারাদিন বন্দী করে রাখে। অজুহাত হিসাবে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর আগমন পথে বাধা সৃষ্টির কথা মৌখিকভাবে তুলে ধরা হয়। বেঙ্গল অম্বুজার মতো একটি কর্পোরেট কোম্পানিকে সরকারি খাসজমি ও রেকর্ডধারী অনিচ্ছুক মালিকদের জমি গায়ের জোরে কেড়ে নিয়ে প্রচুর মুনাফা পাইয়ে দিতে উদ্যত রাজ্য সরকার।
এই অযাচিত পুলিশী সন্ত্রাসের তীব্র বিরোধিতা করে এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবিলম্বে অনিচ্ছুক জমি মালিকদের জমি ফেরত দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয় অখিল ভারতীয় কিষাণ মহাসভা, দার্জিলিং জেলা কমিটি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে পুলিশের হেফাজতে অত্যাচারের প্রতিবিধান দাবি করে এক অভিযোগ পত্র পেশ করেন চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী। তিনি প্রগতিশীল মহিলা সমিতির রাজ্য স্তরের অন্যতম নেত্রী। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে —
“আমি চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, ২১/১/১ ক্রিকরো, কলকাতা-১৪, আপনার কাছে বারুইপুর পুলিশ জেলার অন্তর্গত নরেন্দ্রপুর থানার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন (শারীরিক ও মৌখিক যৌন হেনস্থা, পুলিশ হেফাজতে শারীরিক অত্যাচার, পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চনা)-র অভিযোগ জানাতে এই চিঠি পাঠাচ্ছি।
৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কামালগাজি ব্রিজের নিচে একটি যৌথ প্রতিবাদসভায় আমি যোগ দিতে গেছিলাম। আমি সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির একজন কর্মী। নরেন্দ্রপুর থানাকে এই কর্মসূচি সম্পর্কে আগাম অবগত করা ছিল। সব মিলিয়ে আমরা ২০-২২ জন একত্রিত হয়েছিলাম। একজন পুলিশ এসে আমাদের প্রতিবাদ বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে বলে। আমরা অসম্মত হলে তিনি বলেন যে বড়বাবু আর মেজবাবু আসছেন। একথা বলে তিনি চলে যান। আমরা টোটোতে বাঁধা মাইকে আমাদের বক্তব্য বলতে বলতে এগোতে থাকি। আমি মিছিলের সামনের দিকে ছিলাম। এক মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই দেখতে পাই একজন সাধারণ পোশাক পরিহিত ব্যক্তি একজন প্রতিবাদী রুদ্র প্রভাকর দাসের চুলের মুঠি ধরে মারতে শুরু করেছে। রুদ্র প্রভাকর দাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক। তিনি মিছিলের আগে আগে ফেসবুক লাইভ করতে করতে এগোচ্ছিলেন। রুদ্রকে মারতে দেখে আমি ছুটে যাই। লক্ষ্য করি আরও একজন ব্যক্তি আরেক ছাত্র আকাশ গুপ্তাকে মারছে। আমাকে রুদ্রর দিকে ছুটে যেতে দেখে পুলিশ আমাকে আটকায়, বলে, আপনি চলে যান। আমি প্রতিবাদ করায় বলে, “এই এটাকেও তোল”। দুইজন মহিলা আমাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে, আমার হাতের প্ল্যাকার্ড কেড়ে নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দেয়।
বেশ কিছুটা হাঁটিয়ে নিয়ে আলোকমালায় সজ্জিত একটি বিয়ে বাড়িতে আমাকে এবং রুদ্র ও আকাশ সহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে ঢোকে পুলিশ। পরে বুঝতে পারি এটাই নরেন্দ্রপুর থানা। থানায় ঢুকে রুদ্র প্রভাকর দাস ও আকাশ গুপ্তাকে তাদের জীবন ও কেরিয়ার নষ্ট করে দেবার হুমকি দিচ্ছিল পুলিশ। এই সময় আমার মাসিক চলছিল বলে আমি থানার মহিলা পুলিশদের কাছ থেকে স্যানিটারি প্যাড চাই। মহিলা পুলিশরা প্যাড দিতে অস্বীকার করে। সেই অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার সময় ব্যাক্তিগত বন্ডে আমি সহ আটক ৬ জনকে ছাড়া হয়। আমরা যখন থানার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম আমাদের ছাড়া পাওয়ার জন্য অপেক্ষারত বন্ধুরা স্লোগান দিয়ে আমাদের অভিবাদন জানাচ্ছিলেন। স্লোগান দিতে দিতে থানার চত্ত্বর থেকে আমরা চলে যাচ্ছিলাম। দুঃখজনক ভাবে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই নরেন্দ্রপুর থানার অফিসার ইনচার্জ অনির্বান বিশ্বাস নেতৃত্বে, থানার মেজবাবু সুশোভন সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী আমাদের সকলকে নিশানা করে লাঠি, ঘুঁষি, লাথি মারতে শুরু করে। ছাত্র, যুব, মহিলা ও বয়স্ক মিলিয়ে প্রায় ২০ জন মানুষের উপর নির্বিচারে পুরুষ পুলিশ এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে থানার সামনে রাস্তার উপরে ফেলে। ঐ রাস্তা দিয়ে অটো ও গাড়ি চলাচল করছিল। রাস্তায় মারবার সময় পুলিশ অশ্লীল নারীবিদ্বেষী গালাগাল দিচ্ছিল। আমার স্বামী মলয় তেওয়ারী ওই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন। ওনাকে চুলের মুঠি ধরে চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে, ওনার মাথা বুট দিয়ে পিষে দিচ্ছিল পুলিশ। আমি তাঁকে বাঁচাতে যাই। তখন আমাকে দুইজন পুরুষ পুলিশ লাথি মারতে থাকে আর চুলের মুঠি ধরে হেঁচরাতে থাকে থানার দিকে। আমি জিজ্ঞেস করি, “আমাদের এভাবে কেন মারছেন?”। প্রত্যুত্তরে ওই পুলিশরা আমাকে যৌন-হেনস্থামূলক গালাগালি দিতে থাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার হুমকি দেয়। এই অবস্থায় আমি দেখতে পাই, জমায়েতে উপস্থিত সৌমী জানা মলয় তেওয়ারীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার পিছনে এলোপাথাড়ি লাথি মারা হচ্ছিল। এই অবস্থায় থানার সিঁড়ি দিয়ে চুলির মুঠি দিয়ে হেঁচরাতে হেঁচরাতে তোলা হয়। আমার মাসিকের রক্ত-ক্ষরণ খুব বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত ও অসুস্থ বোধ করছিলাম। পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও থানার মধ্যে মহিলা পুলিশ আমার পেটে লাথি মারে। আমার সামনেই আমার স্বামী আর বন্ধুদের একই ঘরে লাঠি আর লাথি দিয়ে মারধর করতে শুরু করে পুলিশ। পুলিশের দুজন বারবার আমাদের “খানকি” বলে উল্লেখ করছিল। মলয় তেওয়ারি তার প্রতিবাদ করায় তাকে গুলি করে মেরে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং সৌমী, বর্ষা ও আমাকে "দেখাচ্ছি তোদের" বলে হুমকি দিতে থাকে। এই হুমকি দেওয়ার সময় একজন পুলিশ বারবার নিজের জামা কোমর থেকে উপরে তুলছিল। স্পষ্টতই ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিল তারা। আমাদের ফোন কেড়ে নিয়ে ফোনের পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য লাথি মারে পুলিশ। আমরা চরম আতঙ্ক বোধ করে চুপ হয়ে গেছিলাম।
রাত ১২টার পরে আমাকে আর মলয় তেওয়ারীকে মেডিকেল চেক-আপের জন্য স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পৌঁছানোর পর আমাদের সরাসরি জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই অবস্থায় আমরা দুজনেই হাঁটতে পারছিলাম না। খোঁড়াতে খোঁড়াতে আমরা জরুরী বিভাগে ঢুকি। সেখানে ডাক্তার আমাদের কোনো প্রশ্ন বা পরীক্ষা না করেই আগে থেকে তৈরি করা মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেটে আমাদের নাম বসিয়ে দেয়। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশ ওখানেই আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। চাপা হুমকি দিতে দিতে আমাদের গাড়িতে করে আবার থানায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। ফিরে আসার পর আমাদের বলা হয় যে ব্যক্তিগত বন্ডে আমাকে আর মলয় তেওয়ারীকে জামিন দেওয়া হচ্ছে৷ আমাদের বন্ডের কাগজ পড়ার সময় না দিয়ে সই করতে বলা হয়।
আমার আর মলয় তেওয়ারীর বাজেয়াপ্ত করা ফোন ফেরত দেওয়ার সময় জোরজবরদস্তি আমাদের দিয়ে ওই দিনের সমস্ত ছবি আর ভিডিও ডিলিট করানো হয়।
আমার উপর হওয়া পূর্ববর্ণিত সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুবিচার প্রার্থনা করে আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি।”
বারুইপুর ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের সদরে এস পি'র কাছে ১৬ ফেব্রুয়ারি সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, সিপিআই(এমএল) এনডি, সিপিআই(এমএল) রেডস্টার, পিসিসিপিআই(এমএল), এমকেপি, ইয়ং বেঙ্গল ও স্বরাজ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ডেপুটেশনে৷ উল্লেখ করা হয়, “গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ নরেন্দ্রপুর থানার সামনে এবং থানার ভেতরে পুলিশ কয়েকজন ছাত্রী, ছাত্র এবং মহিলা ও পুরুষ রাজনৈতিক কর্মীকে নৃশংসভাবে মারে, ছাত্রী ও মহিলাদের যৌন হেনস্থা করে এবং সকলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজায়। পুলিশ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অপরাধমূলক কাজ করেছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
পুলিশ যা করেছে তা সংক্ষেপে নীচে তুলে ধরা হল
১। থানা হেফাজতে নিয়ে তিনজন মেয়েকে পুলিশ যৌন হেনস্থা করে। চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি, সৌমি জানা ও বর্ষা বড়ালকে অত্যন্ত কদর্য নারীবিদ্বেষী গালি দিতে দিতে কয়েকজন পুরুষ পুলিশ মেঝেতে ফেলে বুকে ও তলপেটে বারবার লাথি মারে এবং “খানকি” বলে সম্বোধন করে “তোদের দেখাচ্ছি” বলে হুমকি দেয়। হুমকি দেওয়ার সময় পুরুষ পুলিশেরা নিজেদের জামা তুলে ধর্ষণের ইঙ্গিত করছিল। (চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি ও সৌমি জানার বয়ান এই স্মারকলিপির সাথে সংযুক্ত করা হল)।
২। ঋতুস্রাবের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন দিতে অস্বীকার করে পুলিশ। প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরির ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল। তিনি মহিলা পুলিশের কাছে স্যানিটারি প্যাড চাইলেও তা দিতে অস্বীকার করে পুলিশ। রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ মুক্তি পেয়ে বাইরে বেরনোর সাথে সাথে পুলিশ আবার মারতে মারতে থানার ভেতর নিয়ে যায়। এই সময় তাঁর রক্তস্রাব বেড়ে যায়, কিন্তু তিনি প্যাড চেয়েও পাননি। রক্তক্ষরণের কথা বলে পুলিশের কাছে আকুতি জানানোর পরও পুলিশ তাঁকে গালিগালাজ সহ লাথি মারতে থাকে।
৩। থানার বাইরে মারার সময়ও মেয়েদের যৌন হেনস্থা করে পুলিশ। উপরুক্ত তিন মহিলাকে লাথি মারার সময় বারবার যৌন হেনস্থামূলক গালি ও ভেতরে নিয়ে ‘দেখিয়ে দেওয়া’র হুমকি দিচ্ছিল পুলিশ। আরেকজন ছাত্রী সায়নি সাহাকে মারার সময় একজন পুরুষ পুলিশ নির্দেশ দিচ্ছিল ছাত্রীটির নিম্নাঙ্গে লাঠি চালোনোর। পুলিশ সায়নির নিম্নাঙ্গে লাঠি চালায়। (সায়নির মেডিক্যাল রিপোর্ট সংযুক্ত করা হল)।
৪। থানার বাইরে এবং থানায় হেফাজতে নিয়ে মহিলা ও পুরুষদের নৃশংসভাবে মারে পুলিশ। (কয়েকজনের প্রাথমিক মেডিক্যাল রিপোর্ট সংযুক্ত করা হল)।
৫। “মেডিক্যাল ফিটনেস”-এর জাল সার্টিফিকেট বানায় পুলিশ। চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি ও মলয় তেওয়ারিকে গভীর রাতে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কোনরকম পরীক্ষা না করে আগে থেকে লেখা মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেটে নাম বসিয়ে পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়। আহত ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করায় ওখানেই তাঁদের মেরে দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ। এই দুজনকে ভোর রাতে পিআর বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের কারও মেডিক্যাল টেস্ট করায়নি পুলিশ। সৌমি জানার ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন হয়। বারবার সেকথা বলায় তাঁকে পুলিশ হেনস্থা করে এবং শেষে হাসপাতালে নিয়ে জোর করে কোভিড ওয়ার্ডে ঢুকিয়ে দেয়।
৬। সকলের স্মার্ট ফোনের সমস্ত ভিডিও ও ছবি জোর করে মুছে দেয় পুলিশ।পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকার করায় একজন মেয়ের বুকে লাথি মারে পুলিশ।
৭। আটক প্রতিবাদীদের কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। আরেকবার স্পষ্ট বোঝা যায় যে প্রতিবাদীদের নানাভাবে লাঞ্ছিত অবমানিত ও হেনস্থা করাটাই ছিল পুলিশের প্রকৃত মনোভাব।
নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ যা করেছে তা আপনার জেলার পুলিশ ব্যবস্থার অত্যন্ত উদ্বেগজনক চেহারা তুলে ধরেছে। প্রতিবাদসভা, মিছিল বা বিক্ষোভ প্রদর্শন যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এইসব গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ যাতে স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে তা নিশ্চিত করা পুলিশ প্রশাসনের অন্যতম কর্তব্য। অথচ এক্ষেত্রে পুলিশ কদর্য অপরাধী দলের মতো আচরণ করল। প্রথমবার কামালগাজি ব্রিজের নিচ থেকে প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার করার সময়ও পুলিশ কোনরকম বাদানুবাদ ছাড়াই মেরে আটক করে। পরে যখন আটক ব্যক্তিরা ছাড়া পাচ্ছেন তখন ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুক্তি পাওয়া সাথীদের অভিনন্দন জানিয়ে শ্লোগান দিতেই মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। মুক্ত সাথীদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা চলে যাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ কোনোরকম কথাবার্তারও সুযোগ না দিয়ে মারতে শুরু করে। থানার ভেতরে ও বাইরে মারার সময় পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিদের সাথে সাধারণ পোশাকের ব্যক্তিরাও ছিল। সব মিলিয়ে একটা অপরাধী দলের মত আচরণ করল তারা। সকলকে মারল ও মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি সহ যৌন হেনস্থা করল। তারপর আবার ছাত্রছাত্রীদের নামেই মারাত্মক ধারা সম্বলিত মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে পুলিশ।
আমরা আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি অবিলম্বে নরেন্দ্রপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ইনস্পেক্টর ও সেকেন্ড অফিসারকে বরখাস্ত করে সমগ্র বিষয়টির তদন্ত করুন এবং ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উপরোক্ত নিগৃহীত ছাত্রছাত্রী ও মহিলারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সহ অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন ও সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সদস্য।
(প্রতিবেশী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক প্রেস বার্তা পাঠায়)
ভারতের কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসুচি চলাকালীন সময়ে এআইএসএ, এআইপিডব্লিউএ সহ বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের বর্বর হামলা ও ৯ জনকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দলিত অধিকারকর্মী শরদিন্দু উদ্দীপন’এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া বিষয়ে পুলিশী হেনস্থা ও মামলা দায়ের করায় এর বিরুদ্ধে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নরেন্দ্রপুর থানার সামনে প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করছিল এআইএসএ সহ বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সেই কর্মসুচিতে পুলিশ বর্বর হামলা চালায় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে অজামিনযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে দুইজনকে জামিন দেওয়া হলেও বাকিরা এখনও বন্দী অবস্থায় আছেন। আমরা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি দমন-পীড়ন কোনও গণতান্ত্রিক শাসনের উদাহরণ হতে পারে না। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ছাত্র ও যুবসমাজকে সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করেন এবং চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করেন।
পাটনার ছাজ্জুবাগে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের বিধান পরিষদীয় পার্টি অফিসে ৪ ফেব্রুয়ারি এআইএসএ-আরওয়াইএ’র কার্যনিবার্হীদের একটি বৈঠকে সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, বিহারে সম্প্রতি ছাত্র-যুবদের যে উত্থান দেখা গেল তার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষক আন্দোলনের পরে ছাত্র এবং যুবরা বিহার থেকে উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব তথা সারা দেশে সংগঠিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যখন রেল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রকে বেসরকারি করে চাকরির সুযোগ সংকুচিত করছে তখনই প্রয়োজন এক নির্ণায়ক সংগ্রামের জন্য বিশাল ফ্রন্ট গড়ে তোলা। বিহারের রয়েছে ছাত্র-যুব আন্দোলনের সেই উজ্জ্বল ইতিহাস। আজ বিহার প্রস্তুত সেই উজ্জ্বল অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে।
দীপঙ্কর বলেন, রেলের আরআরবি-এনটিপিসি’র নিয়োগ এবং গ্রুপ-ডি’র পরীক্ষা নিয়ে এআইএসএ-আরওয়াইএ’র ডাকা বিহার বনধ্ সারা দেশের নজর কেড়েছে। পাঞ্জাব যেমন কৃষক আন্দোলনের কেন্দ্র, বিহার তেমন বেকারত্বের কেন্দ্র। এই প্রেক্ষিতে এআইএসএ-আরওয়াইএ’র রয়েছে গুরুদায়িত্ব। আমাদের ওপর ছাত্র-যুবদের যে আস্থা অর্পিত হয়েছে তা সফল করতে ব্যাপকভাবে গণআন্দোলন গড়ে তুলে বিজেপি’র ফ্যাসিস্ত আক্রমণকে প্রতিহত করতে হবে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে প্রধান ইস্যু ছিল চাকরির দাবি এবং ছাত্র-যুবরা বিজেপি-জেডিইউ সরকারকে প্রায় ক্ষমতাচ্যূত করে ফেলেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। ইউপি’তেও চাকরির দাবিই জোরালো হয়েছে। বিহারের ছাত্র যুবদের আন্দোলনের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। ইউপি’র নির্বাচনের ফলাফলের দিকে সবার নজর এখন। ইউপি’তে পরাজয় হলে ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনে স্বৈরতান্ত্রিক মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে গণআন্দোলনে জোয়ার আসবে এবং সারা দেশে এক পরিবর্তিত পরিস্থিতি দৃশ্যায়মান হবে।
এই আর্থিক বছরের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার চাকরির ইস্যুতে জুমলাবাজির পুনরাবৃত্তি করল। সরকারের পলিসি হল রেলওয়েকে ধাপে ধাপে বেসরকারি করা। রেল সেক্টরে সর্বাপেক্ষা বেশি কর্মসংস্থান হয়। তাই এই সেক্টরে যদি চাকরি না হয় তাহলে আর কোথায় হবে? ব্যাঙ্ক, বীমা ইত্যাদি ক্ষেত্রকেও বেসরকারি করা হচ্ছে। এখন যুবরা অস্থায়ী চাকরিই পাচ্ছেন — যেখানে কাজের বোঝা খুব বেশি, কিন্তু মাইনে হতাশাজনক কম। দেশে পূর্ণ-বেকার এবং অর্ধ-বেকারের সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে বিজেপি’র মতো ফ্যাসিস্তরা এই শক্তিকে ভুল দিকে যাতে পরিচালিত করতে না পারে। এআইএসএ-আরওয়াইএ’র কর্মীবাহিনী এই শক্তিকে সঠিক দিশায় পরিচালিত করে সরকারের কর্মসূচির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে যেন পরিচালিত করে।
২৩ জানুয়ারি উড়িষ্যার জগৎসিংপুর জেলার ধিনকিয়া গ্রামে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের একটি টীম পরিদর্শনে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাস্তা থেকে কোর্ট পর্যন্ত গণ আন্দোলন করবে গ্রামবাসীদের ওপর পুলিশী উৎপীড়নের বিরুদ্ধে এবং গ্রামবাসীরাও আন্দোলন ও সংহতির জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তদন্তকারী টিম দেখেছেন ধিনকিয়া গ্রামবাসীদের ওপর জেলা প্রশাসন ও পুলিশের মিলিত অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে। প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র, রেশন ইত্যাদির প্রয়োজনে গ্রামের বাইরে যাওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুমতি ভিক্ষা করতে হচ্ছে।
তদন্তকারী টীমে রয়েছেন সিপিআই(এমএল) বিধায়ক বিনোদ সিং (ঝাড়খণ্ড), মার্কসবাদী কো-অর্ডিনেশন কমিটি নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চ্যাটার্জী, আদিবাসী সংঘর্ষ মোর্চার জাতীয় আহ্বায়ক দেবকীনন্দন বেদিয়া, সিপিআই(এমএল) ওড়িশা রাজ্য কমিটির সদস্য ও শ্রমিক নেতা মহেন্দ্র পরিদা এবং মধুসূদন ও অন্যান্যরা। এঁদের নজরে এসেছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গ্রামবাসীদের ওপর পুলিশের পাশবিকতা। গ্রামবাসীরা বলেছেন, পুলিশ তাদের ওপর লাগাতার উৎপীড়ন করছে, লাঠি চার্জের ফলে মহিলা ও শিশুসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। উড়িষ্যা হাইকোর্ট এই ব্যাপারে অবগত হয়ে গত ২০ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন এই অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ করতে ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জনকল্যাণ কর্মসূচি পুনরায় চালু করার জন্য।
২৩ জানুয়ারি তদন্তকারী টীম গ্রামে পৌঁছে দেখেন উচ্চ পদাধিকারী পুলিশ অফিসাররা এক প্ল্যাটুন পুলিশ নিয়ে প্রতিবাদী স্থানীয় নেতাদের ঘিরে ফেলার আয়োজন করছে। নেতাদের থেকে টীম জানতে পারেন যে সেই দিনও তিনজন প্রতিবাদী নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
৬৫ বছরের এক বৃদ্ধা শান্তিলতা মালিককে প্রাতঃকৃত্যের সময় পুলিশ তাড়া করে এবং তিনি ভয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কাছের জঙ্গলে লুকিয়ে পড়েন। পরে পুলিশ তাঁকে হুমকি দেয় সামনে না এলে খারাপ ফল হবে। তদন্তকারী টিম পুলিশকে কড়া প্রশ্ন করেন এবং হাইকোর্টের আদেশনামা দেখান, বাধ্য হয়ে পুলিশ পিছু হটে।
পুলিশের আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং গ্রামবাসীদের সংহত করার জন্য তদন্তকারী টিম গ্রামের ভিতর তাদের নিয়ে একটি মিছিল করেন। সেখানে পুলিশের অত্যাচার নিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়। লুকিয়ে থাকা ভীত গ্রামবাসীরা একে একে বেরিয়ে আসেন ও সমাবেশে যোগ দেন।
হাইকোর্টের আদেশ সত্বেও পুলিশের অত্যাচার কমেনি। পুলিশী অত্যাচারে পানচাষিদের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাদেরকে দিয়ে জোর করে সাদা কাগজে সই করানো হচ্ছে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য। লাঠিচার্জে আহত ব্যক্তিদের দূরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে। বৃদ্ধরা যেতে পারছেন না। রাত্রে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। যুবকরা ভয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকছে। গ্রামবাসীরা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে জর্জরিত।
এত অত্যাচারের কারণ হল একটি সরকারী প্রকল্পের জন্য এই গ্রামের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। ৫ বছরের বেশি হয়ে যাওয়ার পরও ঐ জমিতে প্রকল্প শুরুই হয়নি। জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং রিসেটেলমেন্ট আইন ২০১৩ অনুযায়ী কোন অধিগৃহীত জমি/ভূমি পাঁচ বছরের বেশি অব্যবহৃত থাকলে তা মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সরকার বেআইনিভাবে এই অধিগৃহীত জমি ‘ভূমি ব্যাঙ্কে’ (ওড়িশা শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন ব্যাঙ্কে) জমা রেখেছে এবং পরিকল্পনা করছে এই জমি ‘জেএসডব্লিও’- কে হস্তান্তর করবে। প্রায় দশ বছর ধরে এই জমি অধিগৃহীত আছে।
ভালো সেচ ব্যবস্থার জন্য এই উপকূলীয় জমি উচ্চ ফলনশীল। এখানে ভালো ধানচাষ, পান, মাছচাষ হয়। বহু শতক ধরে এখানকার মানুষ বসবাস করছেন, গ্রামকে গড়ে তুলেছেন। সরকার ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘পসকো’ কোম্পানিকে ৪,০০০ একর জমি দেওয়ার চুক্তি করে। গ্রামবাসীরা কেউ কেউ ক্ষতিপূরণও পান। কিন্তু অধিকাংশ গ্রামবাসীরা ‘পসকো’-র বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন এবং ‘পসকো’ পিছু হটে ও চলে যায়। সরকার এতে রাগান্বিত হয়ে জমিহারাদের তাদের প্রাপ্য “বন্দোবস্তি পরচা” দিতে অস্বীকার করে। পরিবর্তে সরকার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের বন্ধুস্হানীয় জিন্দাল কোম্পানিকে শিল্প স্থাপনের জন্য ২,৯০০ একর উর্বর জমি দেয়। এরমধ্যে বর্তমানে ধিনকিয়ার প্রায় ১,০০০ একর জমি স্টীল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জিন্দালকে দেওয়া হয়। জনগণ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে সরকার বিশেষ পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করে। ১৪ জানুয়ারি পুলিশ প্রচন্ড লাঠিচার্জ করে, ফলে মহিলা ও শিশুসহ বহু মানুষ আহত হন। নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ, পানচাষ ধ্বংস করে ও গ্রামবাসীদের ওপর সন্ত্রাস সৃষ্টি করে গ্রামত্যাগের জন্য চাপ দেয়।
দেশে অনাহারে মৃত্যু নিয়ে কেন্দ্রের কাছে সাম্প্রতিক তথ্য চাইল সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে ক্ষুধার সমস্যার মোকাবিলা করতে একটি মডেল প্রকল্প তৈরি করতে বলেছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চের বক্তব্য, ‘‘এখন ভোটের সময়। কেন্দ্র নীতি তৈরি করে বাড়তি খাদ্যশস্য জোগালে রাজ্যগুলিও রান্না করা খাবার জোগাতে উৎসাহী হবে।’’
একটি মামলায় এদিন প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চে অনাহারে মৃত্যু সম্পর্কে ২০১৫-১৬ সালের তথ্য পেশ করে কেন্দ্র। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আপনারা বলতে চান দেশে কেবল একজন অনাহারে মারা গিয়েছেন? এই বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য?’’ বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারগুলি অনাহারে মৃত্যুর কথা জানাচ্ছে না। কিন্তু তা হলেই কি মেনে নিতে হবে যে অনাহারে মৃত্যু হচ্ছেনা? কেন্দ্রের অফিসারকে আমাদের অনাহারে মৃত্যু নিয়ে সাম্প্রতিকতম তথ্য দিতে হবে।’’
বিচারপতিরা বলেন, ‘‘এখন ভোটের সময়। আপনারা ক্ষুধা মেটানোর জন্য জাতীয় স্তরে নীতি তৈরি করে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য সরবরাহ করলে রাজ্যগুলিও রান্না করা খাবার জোগাতে উৎসাহী হবে।’’ এরপরে সব রাজ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয়স্তরে কমিউনিটি কিচেনের একটি মডেল প্রকল্প তৈরি করতে বলে বেঞ্চ। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা অপুষ্টির বৃহত্তর সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। ক্ষুধা মেটাতে হবে। সকলেই মেনে নিচ্ছেন একটা সমস্যা আছে। আপনাদের অফিসারদের সঠিকভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে বলুন।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা বলছিনা যে আপনারা ক্ষুধা বা অনাহারে মৃত্যু রুখতে কিছু করছেন না। কিন্তু জাতীয়স্তরে মডেল প্রকল্প তৈরির কথা বিবেচনা করুন। প্রকল্পের খসড়া তৈরি করুন, তা চূড়ান্ত করুন ও বাকিটা রাজ্যগুলির উপরে ছেড়ে দিন।’’
অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল জানান, কেন্দ্র আদালতের বক্তব্য বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা প্রকল্প তৈরি করতে পারি। রাজ্যগুলিকে ২ শতাংশ বাড়তি খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে। রাজ্যগুলি হলফনামা দিয়ে জানাক, এই প্রকল্পের জন্য বাড়তি ২ শতাংশ খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রস্তাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য।’’
এই মামলার শুনানি দু’সপ্তাহের জন্য স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যগুলি অপুষ্টি, ক্ষুধা ও অন্য সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করতে পারে।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯ জানুয়ারি ২০২২
গতবছর জুন মাসে পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষাঋণ প্রকল্প, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে রাজ্য। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বহু ব্যাঙ্ক তা দিচ্ছেনা। কারণ তারা এখনও প্রকল্পে শামিলই হয়নি। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে কৃষি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্ত প্রকল্প সম্পর্কে ব্যাঙ্ক এবং ঋণদাতা অন্যান্য আর্থিক সংস্থাগুলিকে সচেতন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে সচেতন করা দরকার রাজ্যবাসীকেও।
রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক, তাদের অনুমোদিত কেন্দ্রীয় এবং জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড মারফত ছাত্র-ছাত্রীদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষাঋণ দেওয়ার কথা। এজন্য বন্ধক রাখতে হবে না। গ্যারান্টরের দায়িত্ব পালন করবে সরকার। পড়াশোনার জন্য সহজে টাকার বন্দোবস্ত করাই প্রকল্পটির লক্ষ্য। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণে অসহযোগিতার অভিযোগ বহু।
আগামী অর্থবর্ষে (২০২২-২৩) শিক্ষাখাতে নাবার্ডকেও ঋণদানের অঙ্ক বাড়াতে বলা হয়েছে। নাবার্ড জানিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে এরাজ্যে ২.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দানের লক্ষ্য তাদের। যা আগের বছরের থেকে ১২% বেশি। অর্থবর্ষের শুরু থেকে যাতে ঋণদান শুরু করা যায় সেজন্য গোটা প্রক্রিয়ায় নজরদারি করতে নাবার্ডের শাখা সংস্থা নাবার্ড কনসালট্যান্সি সার্ভিসেসকে (ন্যাবকন) নিয়োগ করা হয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্কের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই এই খাতে ৪৬৬ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। গত অর্থবর্ষে বাংলায় সামগ্রিকভাবে ঋণ দানের যে লক্ষ্য ছিল তার ৭৮% পূরণ হয়েছে।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সৌমিতা দাস চৌধুরী। ডাক নাম মেধা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী। ছোট থেকেই সমাজ মনস্ক। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই প্রতি বছর আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব এমনকী শিক্ষিকার কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় বিলি করত। বছর দুয়েক আগে আমফানের পরপরই তৈরি করে ‘গাছের জন্য গান’ নামে একটি সংগঠন। উদ্দেশ্য, গাছের পর গাছ আর গাছ লাগিয়ে দূষণ মুক্তি ঘটাবে। যাদবপুর ও রবীন্দ্রভারতীর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তোলে সংগঠন। ৩৫,০০০ গাছ লাগিয়েছে ওরা সুন্দরবন অঞ্চলে। তারপর জনসচেতনতার জন্য গানের অ্যালবাম করে প্রচারের উদ্যোগ নিল। নিজেরাই গান লিখত, গাইত আর প্রচার করত। ১২ ফেব্রুয়ারি হাবরাতে অ্যালবামের জন্য শ্যুটিং ছিল। ছটার মধ্যে পাঁচটা গানের শ্যুটিং শেষ। শেষ গানের লিড সিঙ্গার মেধা। প্রস্তুতি চলছে। একটা নারকেল গাছের নীচে চেয়ারে বসেছিল মেধা গিটার হাতে। মুহূর্তে ভেঙে পরে গাছটি। নাক, কান, মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি মেধা। যেতে যেতেই সব শেষ।
অফুরন্ত প্রাণশক্তি ছিল মেধা। অনেক আশা ছিল ওকে নিয়ে।
মলয় দাস চৌধুরীর ছোট মেয়ে ছিল মেধা। দিদি আদৃতা, মা শুভ্রা, এই নিয়ে ওরা। ঠাকুমা বয়সের ভারে ক্লান্ত ।
সান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই। ওর স্মরণ অনুষ্ঠান করবে ওর প্রিয় বন্ধুরা, ওর সংগঠনের প্রিয় সাথীরা। আপনাদের জানাবে।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে হুগলি জেলার ৪টি পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন; ৩টি করে কোন্নগর ও উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভায়, বাকি ২টি চাঁপদানি ও হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায়।
বন্ধ ডানলপ কারখানার কঙ্কাল ছুঁয়ে শুরু হয়েছে হুগলি-চুঁচুড়া পৌরসভা, অচল হয়ে পড়া হিন্দমোটর কারখানা দাঁড়িয়ে আছে কোন্নগর ও উত্তরপাড়া পৌরসভার মাঝে। আর চাঁপদানি পৌরসভা জুড়ে জুট শিল্পের হাহাকার। এখানে লকডাউনের পর থেকেই অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকরা চরম অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন। নির্মাণ থেকে হকারি, হকারি থেকে টোটো চালক — এক পেশা থেকে অন্য পেশায় ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছেন অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মেহনতি মানুষেরা।
এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব এই সবকটি পৌরসভাতেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রার্থী নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দলবদল, রাস্তা অবরোধ এমনকি নির্দল বা বেশ কিছু আসনে দলত্যাগ করে কংগ্রেস দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়া অবধি গড়িয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সারা রাজ্যের মতো হুগলি জেলাতেও বিজেপি’র হতোদ্যম অবস্থা এখনও তেমন কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
সিপিআই(এমএল) যে অল্প কিছু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে নগরোন্নয়নের মানচিত্রে ঠাঁই না পাওয়া অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিক সহ প্রান্তিক মানুষদের দাবিগুলোকে জোরের সাথে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে প্রচারে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। চাঁপদানিতে যে আসনে আমরা লড়ছি সেটি জুট শিল্পের শ্রমিক মহল্লায় অবস্থিত এবং আমাদের প্রার্থীও এক জুট শ্রমিক নেতা কমরেড সুদর্শন প্রসাদ সিং, উত্তরপাড়া ও কোন্নগর মিলিয়ে ৬টি আসনের ৪টিতে আমাদের প্রার্থীরা মহিলা, বাকিরা শ্রমিক ও সংগঠক, চুঁচুড়াতে যিনি দাঁড়িয়েছেন তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে থাকা যুবক। অল্প সময় হাতে থাকলেও কর্মীরা উৎসাহের সাথে এবং দ্রুত দেওয়াল লিখনে নেমে পড়েন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থীকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু হয়েছে।
পরিষ্কার রাস্তাঘাট, জল কিম্বা নর্দমা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার নগরোন্নয়নের যে চালু মডেল তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বন্ধ কারখানার সমস্যা, শহরাঞ্চলের বেকার যুবক-যুবতীর সমস্যা কিংবা অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিগুলোকে নগরোন্নয়নের সাথে যুক্ত করার দাবি নিয়ে আমরা শহরাঞ্চলেও একশো দিনের কাজ, গরিব মেহনতি মানুষদের জন্য আবাসন, মাইক্রো ফিনান্স সংস্থাগুলোর জুলুমবাজির বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন যেমন হয়েছে তেমনি এগুলোকেই প্রচারের মূল বিষয় করা হচ্ছে। বিজেপি’কে একচুলও ছাড় না দিয়ে টিএমসি’র দুর্নীতি-দলতন্ত্র-সন্ত্রাস, সাম্প্রতিককালে পুলিশি জুলুমের ঘটনাকে তুলে ধরে গণতান্ত্রিক মানুষকে জোটবদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। নারীদের দাবি নিয়ে মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে মহিলা প্রার্থীদের কেন্দ্রগুলিতে আলাদা ভাবে প্রচার চলবে, যা নিয়ে প্রাথমিক বৈঠক হয়ে গেছে, একইভাবে আরওয়াইএ’র পক্ষ থেকেও প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চুঁচুড়া শহরে লিটল ম্যাগাজিন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা মিলে আমাদের প্রার্থীর সমর্থনে এক আবেদন পত্র প্রকাশ করেছেন, তাঁদের এবং আরও গণতান্ত্রিক মানুষদেরকে আমাদের পক্ষে এবং প্রচারে নামানোর চেষ্টা চলছে। এই প্রচারে আমাদের মুখপত্র দেশব্রতীকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অন্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত দেশব্রতী নিয়ে আসা হচ্ছে।
শহরাঞ্চলে বামপন্থার বার্তা নিয়ে অসংগঠিত শ্রমিক, কর্মহীন যুবক-যুবতী, বন্ধ কারখানার শ্রমিক, মহিলাদের মধ্যে প্রচারকে জোরালোভাবে নিয়ে যাওয়া ও তাদের সংগঠিত করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা বজায় থাকবে এই নির্বাচনী সংগ্রামেও।
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর পৌরসভা নির্বাচনে ৫নং ও ৬নং ওয়ার্ডে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন লড়ছে। প্রার্থী যথাক্রমে বিল্টু ক্ষেত্রপাল ও ফারহান হোসেন খান। সিপিআই(এম) সহ অন্যান্য বামপন্থী দল এই দুই ওয়ার্ডেই লিবারেশন প্রার্থীকে প্রকাশ্যে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। অন্যান্য ওয়ার্ডগুলিতে লিবারেশনও বামপন্থী প্রার্থীদের সক্রিয় সমর্থন দিচ্ছে। ৬নং ওয়ার্ডে পার্টির রাজ্য কমিটি সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের সংগঠক ফারহান হোসেন খান লড়ছেন তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এই টিএমসি নেতার বিরুদ্ধে মানুষের বিবিধ ক্ষোভ আছে। এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক লিড নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপি’র বিধায়ক পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দেন। এই দুইয়ের বিপরীতে ফারহান হোসেন খান দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বহুবিধ জনমুখি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অগ্রণী ভূমিকা রেখে এসেছেন; শ্মশান সংস্কার থেকে শুরু করে রাস্তার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি, যুবদের ওপর পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হোক বা এলাকার পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে, অথবা পৌরসভার কর্মচারিদের অধিকার অর্জনের লড়াই। দিনে-রাতে যেকোনো সময় মানুষের বিপদে দাঁড়ানো, কোভিডের সময় খাবার বা ওষুধ সহ মানুষের কাছে থাকা, গরিব ঘরের বাচ্চাদের স্কুল চালানো, দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি দেখে ওয়ার্ডের যুবকদের অনেকেই ফারহানের হয়ে প্রচারে নেমেছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র হয়ে খেটেছিল এমন বেশ কয়েকজন যুবকও বিজেপি ছেড়ে লিবারেশনের প্রচার করছে। বাড়ি বাড়ি প্রচার চলছে। প্রতিদিন ১৫-১৮ জন পাড়া প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। অপরদিকে এসসি সংরক্ষিত ৫নং ওয়ার্ডের প্রার্থী বিল্টু ক্ষেত্রপাল এলাকার জনপ্রিয় যুবক, উচ্চশিক্ষিত, পরিশ্রমী এবং গৃহশিক্ষক হিসেবে সম্মানিত। এই ওয়ার্ডটি মূলত মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষের ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডেও পার্টির বাইরের বেশ কিছু যুবক বিল্টু ক্ষেত্রপালের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। বিল্টু ও ফারহানকে নির্বাচিত করার আহ্বান রেখে একটি প্রচারপত্র বানিয়ে বিলি করছেন এলাকার বিশিষ্ট নাগরিকেরা। পৌরসভার সাফাইকর্মীদের ইউনিয়ন জোরালোভাবে লিবারেশন প্রার্থীদের পক্ষে আছে। নির্বাচনী প্রচারে নাগরিক পরিষেবা ও গণতান্ত্রিক অংশীদারিত্বের প্রশ্নের সাথে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসছে পুরসভার এইসব কর্মীদের নির্দিষ্ট দাবিগুলিও। সব মিলিয়ে বিষ্ণপুর পুরসভা নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রাজনৈতিক সংগ্রামকে প্রসারিত করছে।
কামারহাটি পুরসভায় ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৫, সিপিআই(এমএল) একমাত্র ২৭নং ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছ। দেওয়াল লিখন, পোষ্টারিং, স্কোয়াড মিছিল, সভা এবং বাড়ি বাড়ি প্রচার চলছে। কামারহাটি পৌরসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন ‘ভোট দেওয়া’ যাবে? ভোটের নামে প্রহসন হওয়ার সম্ভাবনাই থাকছে। তৃণমূলের অনেকেই নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। কয়েকজন নাম প্রত্যাহার করেছে, আবার অনেকের নাম থেকে গেছে।
শিখা গুহ রায় কামারহাটি পৌরসভার ২৭নং ওয়ার্ডে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের প্রার্থী হিসাবে উদীয়মান সূর্য চিহ্ন নিয়ে প্রতদ্বন্দ্বিতা করছেন। শিখা গুহ রায় এআইসিসিটিইউ পরিচালিত ‘পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়ন’এর প্রতিষ্ঠিত নেত্রী। তিনি রন্ধনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতি, মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা, বোনাস সহ অন্যান্য দাবি নিয়ে রন্ধনকর্মীদের সংগঠিত করে, শিক্ষামন্ত্রী, জেলা শাসক, মহকুমা শাসক ও পৌরসভার চেয়ারম্যানের কাছে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তিনি ‘সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি’র অন্যতম নেত্রী। মহিলাদের অধিকারের জন্য ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সবসময়ই সরব। শিখা পার্টির লোকাল কমিটির সদস্যা। পার্টি, গণসংগঠন ও যৌথ কর্মসূচিতে সামনেই থাকেন।
বাংলার মানুষ বিধানসভা নির্বাচনে বিভেদকামী, বিভাজন সৃষ্টিকারী ফ্যাসিবাদী বিজেপি’কে পরাস্ত করেছে। নির্বাচনে টিএমসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে। ওয়ার্ড অফিসগুলো দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে চলেছে। দাদাগিরি, প্রমোটারদের দাপট লাগাম ছাড়া। এলাকার বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলো ধুঁকছে বা বন্ধ হয়েছে। করোনাকালে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়েছে। বিগত দিনের পুর কর্তৃপক্ষ অর্থাভাবে জর্জরিত মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানদারদের আর্থিক অনুদান দেয়নি। বিপরীতে জমি বাড়ির ট্যাক্স বাড়িয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স ফি ১০-১২ গুণ বৃদ্ধি করেছে। ১০০ দিনের কাজে কর্মরতদের বসিয়ে দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ করেছে। এই প্রশ্নে স্বজন-পোষণের অভিযোগ উঠছে। এই ওয়ার্ডটি মধ্যবিত্ত, সংগঠিত-অসংগঠি শ্রমিক এবং আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাক্তিবর্গের বাস। ওয়ার্ডের পুকুর, পার্কের দীর্ঘদিন কোনও সংস্কার হয়নি। রাস্তা বহুলাংশে ভাঙাচোরা, কয়েকটি পাড়ায় পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট আছে। এমন কি অন্য ওয়ার্ডগুলোতে যে ‘প্রসাধনী প্রলেপ’ দেখা যায়, এখানে তাও হয়নি। এই সব নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে।
পার্টির প্রচার
পার্টির পক্ষ থেকে ২৮নং ওয়ার্ডের ভাগাড় সংস্কার ও আধুনিকীকরণের জন্যে স্থানীয় মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে চেয়ারম্যানকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া “আপনাদের ভাবতে হবে না, আমরা আছি”। ২০২০-তে যখন কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষ আতঙ্কিত, আমাদের ছাত্র সংগঠন আইসা গড়ে তুললো ‘কোভিড ভলান্টিয়ার্স’। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সংক্রমিতদের কাছে পৌঁছে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, রোগীর বাড়ি সংক্রমণ মুক্ত করা, খাবার, অক্সিজেন, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে থাকে। ব্যয়বহুল শিক্ষাব্যবস্থা এবং অনলাইন শিক্ষা অনেকেরই হাতের বাইরে চলে গেছে। তখন সোনার বাংলায় ‘আলাপ’ টেক্সট বুক লাইব্রেরী ছাত্ররা গড়ে তুলেছে। করোনাকালে রক্তের সঙ্কটে ছাত্র-যুবরা প্রতিবছর স্বেচ্ছায় রক্তদান করে, মানুষকে সচেতন করে চলেছে। পার্টির পক্ষ থেকে লকডাউনের সময় আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলিকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এই কাজগুলো সম্পর্কে স্থানীয় মানুষ ওয়াকিবহাল।
বামপন্থী কর্মীদের কাছে আবেদন করা হয় ৫-৭ বছর ধরে সিপিএম এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন কেন্দ্র বিরোধী ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভন্ন সময় যৌথ কর্মসূচি পালন করেছে। যেমন ভারত বনধ্ / বাংলা বনধ্, রেল রোকো, রাস্তা অবরোধ, সাগর দত্ত হাসপাতালে শুধুমাত্র কোভিড নয়, অন্যান্য চিকিৎসা চালু রাখার দাবিতে আন্দোলন ইত্যাদি ছোট-বড় বহু ইস্যুতেই। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব নিয়ে সিপিএমের সাথে রাজনৈতিক মতবিরোধ শুরু হয়, তা সত্ত্বেও কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে প্রকাশ্য সভা করেন। ভোটের ফলাফল নিয়ে বিচার করার সময় এটা নয়, আপনাদের কমিটেড ভোট কোথায় গেল তার মূল্যায়ন আপনারাই করবেন। পুরসভা নির্বাচনে সিপিএম নেতৃত্ব চরম রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিয়েছেন। পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি ফ্যাসিবাদ ও রাজ্যের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের ঐক্য গড়ে তোলা বা আসন সঝোতার প্রশ্নে সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন। সিপিএমের ভূমিকা বামপন্থীদের ঐক্য ও গণআন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কেন্দ্রের ফ্যাসিবাদী সরকারের নানা উৎপীড়ন এবং রাজ্যে স্বৈরাচার, দুর্নীতি বিরুদ্ধে এবং সিপিএম নেতৃত্বের চরম রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
প্রচার চলছে, ভোটের দিন বোঝা যাবে বাংলায় গণতন্ত্র কতটা সুরক্ষিত।
অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এলাকার জনপ্রিয় গণ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী, সমাজ সেবক তথা সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের লোকাল সম্পাদক অনুপ মজুমদার (বাবুনি)। ৬ হাজারের অধিক ভোটারের বেশিরভাগের বাড়ি পৌঁছে গেছেন তিনি। মূলত: পৌর উন্নয়নে নাগরিকদের অংশ সুনিশ্চিত করার বার্তা নিয়ে তাঁর প্রচার। শ্রমজীবী অধ্যুষিত এই এলাকায় অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক নানা প্রকল্পের প্রতি রাজ্য সরকারের বঞ্চনা, জল নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি, সংখ্যালঘু এলাকায় পৌর উদ্যোগে কবরস্থান তৈরি, জলাশয়গুলির উন্নয়ন, শহুরে বেকারদের জন্য ১০০ দিন কাজ চালু, ওএনজিসি প্রকল্পে স্থায়ী/অস্থায়ী কর্মী নিয়োগে পৌরসভার নিরপেক্ষ তদারকি প্রভৃতি দাবি প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে। গত ১৬ তারিখ নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে আরো নিবিড় প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। বাম ঐতিহ্য সম্পন্ন এই ওয়ার্ডের বাম আন্দোলনকে পুন:জাগরণ ঘটাতে এই নির্বাচনকে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
নৈহাটি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থী সরিৎ চক্রবর্তী (বাবলী)-কে উদীয়মান সূর্য্য চিহ্নে ভোট দিন — এই আবেদন জানিয়ে প্রচারে ওয়ার্ড চষে ফেলা হচ্ছে। নাগরিক জনতার প্রতি উদাত্ত আবেদন জানিয়ে বলা হচ্ছে, এসো হাতে হাত ধরি, নতুন সমাজ গড়ি।
প্রকাশ করা হয়েছে, নাগরিক ইস্তাহার।
• দুর্নীতি-স্বজনপোষন রুখতে ওয়ার্ডের উন্নয়ন, পরিষেবা ও প্রশাসনিক কাজে নাগরিকদের তদারকি ও অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা।
• প্রতি তিনমাস অন্তর ওয়ার্ডে ‘মানুষের কথা শোনো’ বৈঠক আয়োজন করা।
• বিভেদ-বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্প্রীতির ঐক্যকে সুদৃঢ় করা।
• অঞ্চলে সুস্থ সংস্কৃতির বাতাবরণ গড়ে তুলতে নবীন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা।
• পরিবেশ রক্ষার্থে পুকুর ও জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে সংস্কারের ব্যবস্থা করা।
• প্রকৃতি বাঁচাতে ও শব্দ-বায়ু-জল দূষণ নিয়ন্ত্রণে পৌরসভায় কার্যকর পরিবেশ দপ্তর চালু করা।
• গরিফা হেল্থ সেন্টারের উন্নয়ন ও ২৪ ঘন্টা ডাক্তার, ওষুধ, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা।
• ছোটো ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফী প্রত্যাহার করা।
• মহিলাদের গার্হস্থ হিংসা থেকে রক্ষা ও নির্ভয় স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে ওয়ার্ডে মহিলা সেল গঠন।
• মিড-ডে-মিল রন্ধনকর্মীদের পরিচয়পত্র ও উৎসব ভাতা চালু করা।
• নির্মাণ সহ অসংগঠিত শ্রমিকদের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সুনিশ্চিত করতে ওয়ার্ডে সহায়তা কেন্দ্র চালু করা।
• পৌরসভায় কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা ও অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ। অঞ্চলের যুবদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
• প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তার পঠন-পাঠন উন্নত করতে বিশেষ জোর দেওয়া। দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যয়ভার গ্রহণ করা।
• গৌরীপুর সহ বন্ধ কারখানার শ্রমিক পরিবার ও অঞ্চলের দুঃস্থ মানুষদের খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।
• কাজহারা ও বেকারদের জন্য শহরে ১০০ দিনের কাজ চালু করা।
• কোভিডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো।
• প্রথম শ্রমিক নেত্রী সন্তোষ কুমারী দেবী সহ গরিফা অঞ্চলের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের স্বর্ণালী স্মৃতি ও গৌরবময় ইতিহাস সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।
বনগাঁ পৌরসভা ১৬ নং ওয়ার্ডে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংগ্রামী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক কমরেড শ্যামল সরদার, ‘ভজা’ নামে তিনি বেশ জনপ্রিয়। এই ওয়ার্ডের ভোটারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। ইছামতী নদীর ধার ঘেষে এই ওয়ার্ডে অন্যান্য সম্প্রদায় ছাড়াও সংখ্যালঘু, দলিত, তপসিলি উপজাতির মানুষ বাস করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রার্থী পরিচয় শুরু হয়েছে। প্রচার চলছে কাছের মানুষ, কাজের মানুষ, গরিবের বন্ধু প্রার্থী ‘ভজা’। লোকমুখে এই কথার স্বীকৃতি আছে। ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কলঘাট (মন্দিরতলা) মোড়ে বড আকারের প্রচার সভা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন শহরগুলিকে “চকচকে-ঝকঝকে” করে দেওয়া হবে এবং সেটাই নাকি উন্নয়ন! কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পৌর পরিষেবার প্রায় সমস্ত মৌলিক ক্ষেত্রগুলির বেহাল দশা, সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নমধ্যবিত্ত গরীব মানুষের জীবন জীবিকা চরম বিপর্যস্ত, উন্নয়নের নামে চলছে ঠিকাদাররাজ! পৌরসভার কাজে নাগরিকদের কোন অধিকার নেই। ভিন্ন মতপ্রকাশের কোন পরিসর নেই, নিরাপত্তা নেই। অন্তঃসারশূন্য উন্নয়নের এই মডেলের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করার স্বার্থে নবদ্বীপে পৌর নির্বাচনে লড়ছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। মোট ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে।
৩নং ওয়ার্ডে দেবাশীষ সিংহ, ৭নং ওয়ার্ডে পূজা মল্লিক দেবনাথ, ১০নং ওয়ার্ডে কৃষ্ণা কর্মকার, ১৯নং ওয়ার্ডে পরীক্ষিৎ পাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই চারটি আসনে বামদলগুলির মধ্যে আসন বোঝাপড়া হয়েছে। বাকি আসনগুলিতে বামপন্থী প্রার্থীদের সমর্থন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকান্ডের প্রক্রিয়ায় এলাকায় বামপন্থী শক্তির সাথে একটা স্তরে পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে উঠছে। স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারকাজ শুরু হয়েছে।
বাড়ি বাড়ি প্রচারে প্রধান যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে তা হল, নবদ্বীপকে হেরিটেজ সিটি ঘোষণা করা হলেও সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত কোনও তৎপরতা নেই, বিপরীতে উন্নয়নের নামে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি-স্বজনপোষন। বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে উন্নয়ন,পরিষেবা ও প্রশাসনিক কাজে কোনও স্বচ্ছতা নেই, নাগরিকদের কোনও তদারকি বা অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। প্রচারে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা সরকার ও পুরসভার দায়িত্ব, তার জন্য কেন টাকা নেওয়া হবে? গঙ্গার পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহে রাজ্যের কোনও পৌরসভা টাকা নিতে পারে না, অথচ নবদ্বীপে নেওয়া হল কেন? নবদ্বীপ হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে কেন সর্বদাই “রেফার” করে দেওয়া হবে? কেন ২৪ ঘন্টা ডাক্তার, ওষুধ, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হবে না? সেখানে সাধারণ একটা ইসিজি করার মতো ব্যবস্থা নেই কেন? নবদ্বীপে হেরিটেজ বা ঐতিহ্য ছিল তাঁত শিল্প, কাঁসা শিল্প, মৃৎশিল্প — এইসমস্ত ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ শেষ। সেগুলির পূনরুজ্জীবনে সরকারের উপযুক্ত কোনও পরিকল্পনা নেই। পাওয়ার লুমের উন্নয়নের নামে ঘোষণা করা হয়েছে অবাস্তব পরিকল্পনা, যাতে মেহনতী তাঁত শ্রমিকরা কোন সুবিধাই পাবে না। কাজহারা ও বেকারদের জন্য শহরে ১০০ দিনের কাজ চালু করার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু পৌরসভা তার কোনও ব্যবস্থা করেনি।
সিপিআই(এমএল) প্রার্থীদের জন্য সমর্থন চেয়ে ১০ দফা নাগরিক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তার কয়েকটি হল —
পানীয় জল সরবরাহের জন্য কোনোরকম কর নেওয়া চলবে না। ছোট ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফী, নাগরিকদের বর্ধিত পৌর কর প্রত্যাহার করতে হবে। জলনিকাশী ব্যবস্থা সম্পর্কে সার্বিক পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তা কার্যকরি করতে হবে। শহরে ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। সেগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন, ২৪ ঘন্টা ডাক্তার, ওষুধ, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। নবদ্বীপ হাসপাতালকে বিশেষ মানে উন্নীত করতে ন্যূনতম ২৫০ শয্যার ব্যবস্থা করতে হবে। বিভেদ-বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে, সম্প্রীতি ও জনগণের ঐক্য সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে নবদ্বীপের যে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতির বাতাবরণ গড়ে তুলতে ও যুক্তিবাদী ভাবনাগুলির প্রচার প্রসারে নবীন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। সমস্ত সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির স্বার্থে শহরের রবীন্দ্র সাংস্কৃতিক মঞ্চে অস্বাভাবিক বর্ধিত হারে চার্জ নেওয়া চলবে না। বিবেকানন্দ মুক্তমঞ্চের সংস্কার করা ও তার ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে প্রভৃতি।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের সম্পদ বিক্রি, বেকারী, মূল্যবৃদ্ধি সৃষ্টিকারী নীতি গ্রহণ করেছে। রেল, ব্যাংক, বীমা সহ সমস্ত সরকারি ক্ষেত্র কর্পোরেট-পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ওদের মুনাফা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আম জনতার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে করের বোঝা। ব্যাপক মানুষ ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বিভাজন ও বিদ্বেষ ছাড়া বিজেপির আর কোনও রাজনীতি নেই।
রাজ্যের তৃণমূল সরকার কয়েকটি প্রকল্পে ছিটে ফোটা সুবিধার কথা বলছে, বাস্তবে গরিব মানুষের কাজ খাদ্য স্বাস্থ্য শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। চলছে বঞ্চনা প্রতারণা। জনগণের প্রাপ্য অধিকারগুলিকে সরকারি দান বা অনুগ্রহ বলে তুলে ধরা হচ্ছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। চলছে সরকারি ও শাসকদলের সন্ত্রাস।
এই অবস্থায় বামপন্থী পরিসরকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুন নতুন এলাকায় ও শক্তির মধ্যে যাওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। পৌরসভায় নাগরিকদের কন্ঠস্বরকে তুলে ধরতে প্রচার চলছে।
- জয়তু দেশমুখ