হঠাৎই প্রয়াত হলেন চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ২৪ জানুয়ারি ২০২২ কলকাতার বাড়িতেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে প্রয়াত হন তিনি। শিল্পীর জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৫১, লক্ষ্নৌতে। লক্ষ্নৌয়ে জন্ম হলেও কলকাতা ছিল শিল্পীর কর্মভূমি। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, নিজের ছবির মাধ্যমে মানুষের গভীর আবেগের কথা ফুটিয়ে তোলাই তাঁর ছবি আঁকার উদ্দেশ্য। বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরও ছবি এঁকেছিলেন তিনি। যত সময় গিয়েছে, কলকাতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছেন ওয়াসিম। প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের একটি ছিমছাম বাড়িতেই থাকতেন শেষদিন পর্যন্ত। বাংলার শিল্পীমহলে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। শৈশবকাল আর পাঁচটা শিশুর মতো কাটেনি ওয়াসিম কাপুরের। মাত্র ৬ মাস বয়সে খাট থেকে পড়ে চোট পান তিনি, এরপর বারো বছর বিছানাতেই দিন কেটেছে। জানালা দিয়ে শুয়ে শুয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতেন, মনের খাতায় সেগুলো প্রথমে ফ্রেমবন্দী করতেন, তারপর সেগুলো খাতায় আঁকতেন। ছেলের এই ঝোঁক দেখে বাড়িতে আঁকার শিক্ষক রাখেন ওয়াসিম কাপুরের বাবা। সেই শুরু। শৈশবের শিক্ষক অমর নন্দনই তাঁকে ভর্তি করান আর্ট কলেজে, সেই প্রথম বাইরের জগতের সঙ্গে সরাসরি পরিচয়। ক্রাচে ভর দিয়ে কলেজ যেতেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনও দিন তাঁর ভাবনায় দেওয়াল তুলতে পারেনি। তাঁর স্বপ্নের ক্যানভাস ডানা মেলে উড়ত। এরপর দেবী প্রসাদ চৌধুরী, অতুল বসু, যামিনী রায়, মকবুল ফিদা হুসেন, পরিতোষ সেনদের মতো নামীদামী শিল্পীদের সান্নিধ্যলাভ করেন। কলেজের প্রথমবর্ষেই তাঁর আঁকা ছবি জায়গা করে নিয়েছিল প্রদর্শনীতে। এরপর দেশে-বিদেশে শুরু হয় তাঁর চিত্র প্রদর্শনী, সর্বত্রই সমাদৃত ওয়াসিম কাপুরের ভাবনা। ভারতের সংসদ ভবন, উর্দু অ্যাকাডেমি, ললিতকলা অ্যাকাডেমি সর্বত্র রয়েছে তাঁর আঁকা ছবি। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া বাংলার শিল্পী ও অনুরাগী মহলে।