কবি রঞ্জিত গুপ্ত ২৬ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে পাটনায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা ছিলেন সত্যেন্দ্র কুমার গুপ্ত, মা মমতা গুপ্ত। কবি রঞ্জিত প্রয়াত হলেন ২২ জানুয়ারি ২০২২। তিনি যাদবপুর হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন, আশুতোষ কলেজ থেকে স্নাতক হন। পেশা হিসাবে গৃহশিক্ষকতাকে বেছে নেন। ২০ বছর বয়স থেকে বন্ধু সত্যেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর কবিতার মূল বিষয় ছিল সামাজিক সমস্যা ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম। এছাড়া তিনি প্রেম, প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবি বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন ও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ বৃক্ষ’, দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ভিন্ন আকাশ’, তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মাটির লবন’ এবং ৪র্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মায়াবী তন্তুজ’। একলব্য, অনুষ্টুপ, অনীক, ডুলুং প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় কবির অনেক কবিতার সমালোচনা ও প্রশংসা বেরিয়েছিল। বীরেন্দ্র পুরস্কার পান ২০০০ সালে তাঁর ‘মায়াবী তন্তুজ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। তিনি স্পন্দন পত্রিকায় ১৯৭৫ সালে প্রগতিশীল বাংলা কবিতার অবস্থা সম্পর্কে একটি বিতর্কমূলক রচনার সূত্রপাত করেন এবং দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই বিতর্ক চলে। বিতর্কে পাঠক যেমন ছিলেন, তেমনি অংশগ্রহণ করেন সাগর চক্রবর্তী, সমীর রায়, অমিত দাস, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন বন্দোপাধ্যায়, প্রমুখেরা।
আলোচনার বিষয় ছিল কবিতা লেখার ক্ষেত্রে, সমস্যার কথা বলে, শেষে সমস্যার সমাধানে যথার্থ ব্যবস্থা পাল্টানোর কথা বলা — এটা আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাধানের কথা অবশ্যই বলতে হবে তবে কোনো মতেই যান্ত্রিক হলে চলবে না। অথচ বরাবর এটা ঘটছে। এই আত্মসমালোচনা থেকে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে সমাজসচেতন কবিকুল বিপ্লবী বিষয়বস্তুর উপস্থাপনার পাশাপাশি কবিতার শিল্পরূপ বিষয়েও প্রশ্নপরায়ণ ছিলেন।
- রঞ্জিত গুপ্ত
দিবসগুলি পালিত হয়
শপথগুলি নয়
নকল বুঁদির কেল্লা গড়ে
নকল শত্রু জয়
দিবস তুমি শুধুই ছবি
শুধু পটে লিখা
শপথগুলি হাওয়ায় হারায়
বিলীন জয়টিকা
বারোমাসে তেরো পার্বণ
তবুও বাংলাদেশ
বারোমাস্যার দুঃখিনী তুই
কেঁদে ভেজাস কেশ।
১৯৭৮