পরিচয় যেন কত যুগ আগে। তবে কবে, কার মাধ্যমে — এখন আর তা স্মরণ করতে পারছি না। মনে পড়ছে — নবদ্বীপ ‘ইউনাইটেড কালচারাল সার্কেল’ বা ইউসিসি-তে একদল তরতাজা যুবক-যুবতী গান কবিতায় মেতে আছেন। জরুরি অবস্থা নেই, কংগ্রেস পরাজিত। রাজনৈতিক জগতে মুক্ত বাতাস বইছে। তখন এরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলছে ইউসিসি। ওরা ‘সমীক্ষা’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করেন, তাতে গান, কবিতা, প্রবন্ধ থাকে। নিজেরা তর্ক বিতর্ক করে আবার একসাথে রাস্তায় হাঁটে। যুথিকাদি বিনয়ী, নম্র, একটু চাপা, কিন্তু সবার খবর রাখেন। জটিল বিতর্ক, ঝগড়ায় ভীষণ উত্তেজনা — যেন সব কিছু ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে ইউসিসি-র ‘ছোড়দির’ হস্তক্ষেপে সবাই শান্ত হয়ে যেতেন।
এরপর ইউসিসি-র পরিধি বাড়তে থাকে। নদীয়ায় দাঙ্গা। ইউসিসি গানের দল নিয়ে গ্রামে ঘুরছে, যুথিকাদিও তার সঙ্গী। একদিন শুনলাম নীতীশ ও যুথিকাদি ঘর বেঁধেছেন। অল্প সময়ের জন্য ফুটফুটে এক সন্তান এসেছিল ওদের জীবনে। এই সন্তান হারানোর ব্যথাকেও বুকের মাঝে একান্তে রেখে দিতেন, কাউকে বুঝতে দিতেন না।
হঠাৎ শুনলাম যুথিকাদি কালান্তক ব্যাধিতে আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছে, দেখা হলে হেসে বলতেন ‘ভালো আছি’। রোগ যন্ত্রণায়ও প্রবল জীবনীশক্তি নিয়ে বেঁচে থাকার এক কঠিন লড়াই তিনি চালিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত শোক, দুঃখ, বেদনাকে গোপন রেখে অবশেষে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কমরেড যুথিকাদি লাল সেলাম।