বিবৃতি
ক্যাব-এনআরসির বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জোরদার করুন

১৪ ডিসেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে সিপিআই(এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, দেশজুড়ে উদ্বেগ উত্তেজনা ও হিংসার পরিবেশ সৃষ্টির চক্রান্ত করছে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং আরএসএস।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র নামে ভারতের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা, ঐক্য-সম্প্রীতি ও গণতন্ত্রের উপর হামলা শুরু করেছে মোদী-অমিত শাহ জুটি। এর ফলে আসাম থেকে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা থেকে উলুবেড়িয়া থেকে সাঁকরাইল। সর্বত্র হয় আগুন জ্বলছে নতুবা অবরোধ ও হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী কেন্দ্রের সরকার এবং এনআরসি ও ক্যাব বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।

আমরা সমস্ত সম্প্রদায়ের, সমস্ত শ্রমজীবী গণতান্ত্রিক জনগণের কাছে আবেদন করব, সরকার বিরোধী আন্দোলন যেন কোনোভাবেই জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত না হয়। শেষ বিচারে তা সরকার ও প্রতিক্রিয়ার হাতকেই শক্তিশালী করবে। এনআরসি এবং ক্যাব হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত গরীব মানুষের সর্বনাশ করবে তাই নয়, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে। তাই ক্যাব এনআরসি বিরোধী আন্দোলন কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের নয়। বিজেপি চেষ্টা চালাচ্ছে, এই আন্দোলন যেন একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আন্দোলনে পর্যবসিত হয়, তাহলেই ভাগ করে শাসন করার শাসকের নীতি কার্যকরী করা যাবে। আন্দোলনরত জনগণের কাছে আমাদের আবেদন, বিজেপি ও আরএসএস-এর ফাঁদে পা দেবেন না। আন্দোলনকে সহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের শক্তি বিজেপি আরএসএস এবং কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত করুন। শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধকে জোরদার করুন। শাসক নয়, জনগণই শেষ কথা বলবে।

পার্থ ঘোষ ১৭ ডিসেম্বরের প্রেস বিবৃতিতে বলেন, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ ও আন্দোলন নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। জনগণের ব্যাপক অংশ এতে অংশগ্রহণ করছেন। সরকারের দমন-পীড়ন যত বাড়ছে আন্দোলন তত জোরদার হচ্ছে। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশী বর্বরতা রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইয়ের ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করছে। দিশাহারা মোদী অমিত শাহ জনগণকে বিভক্ত করার জন্য আন্দোলনকারী জনগণকে সাম্প্রদায়িক রং দিতে চাইছেন। আরএসএস মুখপাত্রের ঢঙে খোদ প্রধানমন্ত্রী পোশাক বিতর্ক শুরু করেছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং প্রধানমন্ত্রীকে এর জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ।

আমাদের রাজ্য পশ্চিমবাংলাতেও এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদে জনগণের বিভিন্ন অংশের অংশগ্রহণ যেমন জোরদার হচ্ছে তেমনি নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এনপিআর স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনে যুক্ত কর্মী সমর্থক দরদীদের হুমকি, হেনস্থা, আটক, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের যে অভিযান শুরু হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা করি এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবি জানাই।আমরা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের কাছে আবেদন জানাই, কোন প্ররোচনায় পা দেবেন না। সম্প্রীতি বজায় রাখুন। লড়াই জোরদার করুন।

খণ্ড-26
সংখ্যা-41