নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ সংসদে পেশ হতে চলেছে শুনে আমরা ব্যক্তিগতভাবে, দেশের নাগরিক হিসেবে, এই বিবৃতি জারি করছি আমাদের আতঙ্ক ব্যক্ত করতে। বর্তমানরূপে বিলটিতে ঠিক কী কী কথা লেখা আছে তা আমরা জানি না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত লেখাপত্র ও এর আগে জানুয়ারি ২০১৯এ লোকসভায় পাশ হওয়া বিলটির ভিত্তিতে আমাদের এই বিবৃতি। এতদসত্বেও আমরা এই বিবৃতি জারি করতে বাধ্য হচ্ছি কারণ বিলটি এই সপ্তাহে সংসদে পেশ হতে চলেছে এবং সংসদের উভয় কক্ষে তা নিয়ে ভোটাভোটি হতে চলেছে।
একথা আমরা বুঝতে পারছি যে বিলটি আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসিক ও খ্রীষ্টানদের নাগরিকত্ব দিতে চায়। বিলটির ঘোষিত উদ্দেশ্য হল প্রতিবেশি দেশেগুলির উৎপীড়িত সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেওয়া। এই প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যকে আমরা সমর্থন করি, কিন্তু গভীর সমস্যার বিষয় হল বিলটি ভারতীয় নাগরিকত্বে ধর্মপরিচিতিকে আইনী শর্ত বানিয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ‘স্বাধীন ভারত’-এর যে ধারণা উদ্ভূত হয়েছিল এবং আমাদের সংবিধানে লিখিত হয়েছিল তা দেশের সমস্ত ধরনের বিশ্বাসসম্পন্ন মানুষের প্রতি সম আচরণ করতে চায়। নাগরিকত্বের শর্ত হিসেবে ধর্মবিশ্বাসের শর্ত আরোপ করাটা আমাদেরকে সেই ইতিহাস থেকে মূলগতভাবে বিচ্যুত করবে এবং আমাদের সংবিধানের সাথে তা সাযুজ্যপূর্ণ হবে না। বিশেষত আমরা ভয় পাচ্ছি যে বিলের আওতা থেকে সযত্নে মুসলমান সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টা আমাদের দেশের বহুত্ববাদী বুনটে ফাটল ধরাবে।
আমরা নজরে এনেছি যে ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদ “ভারতের সীমানার মধ্যে কোনও ব্যক্তিকে আইনের চোখে সমান আচরণ ও আইনের দ্বারা সমভাবে সুরক্ষা দেওয়া” থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে রাষ্ট্রকে নিষেধ করেছে। বর্তমান বিলটি সংবিধানে লেখা অক্ষরগুলি অমান্য করছে কি না তা আইন বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবেন, কিন্তু আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে বিলটি সংবিধানের মর্মবাণীকেই অমান্য করছে।
উপরে উল্লিখিত কারণগুলির ফলেই আমরা চাই অবিলম্বে এই বিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক এবং তার বদলে যথাযথ আইন আনা হোক যা শরণার্থী ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করবে কোনওরকম বৈষম্য না করে।