খবরা-খবর
‘‘ফেমিনিস্ট ইন রেজিস্ট্যান্স’’

গত ২২ ডিসেম্বর এনপিআর, এনআরসি, সিএএ-র বিরুদ্ধে ‘ফেমিনিস্ট ইন রেজিস্ট্যান্স’ সংগঠনের ব্যানারে আমাদের কয়েকজন সহযোদ্ধা গাঙ্গুলীবাগান এলাকায় চলমান প্রচার করছিলেন। গাঙ্গুলিবাগানের ভিতরে সদ্য গজিয়ে ওঠা বিজেপি আরএসএস অফিসের সামনে থেকে গোপনে দুষ্কৃতীরা তাদের ফলো করতে শুরু করে। প্রচারদল যখন বাঘাযতীন আই ব্লক মোড়ে তাদের কাজ শেষ করেন, তখন মুখে কাপড় বাঁধা কয়েকজন, মানুষ মারা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে দিতে, তাদের আক্রমণ করে। ভয়াবহভাবে আহত হন কিছু সাথী। এলাকাবাসীদের সহযোগীতায় পাল্টা প্রতিরোধে ঘটনাস্থলেই একজন দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলা হয় এবং পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাতে যাদবপুর থানায় ছাত্রছাত্রীরা এসে জমা হয় এবং অভিযোগ দায়ের করা হয়।

এই ঘটনার প্রতিরোধে ও প্রতিবাদে পরদিন সন্ধ্যায় আই ব্লক মোড়ে শতাধিক ছাত্রছাত্রী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিক সমবেত হন। দৃপ্ত স্লোগান আর এনআরসি, এনপিআর, সিএএ বিরোধী বক্তব্য এলাকার বিজেপি সহানুভূতিশীলদের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির সৃষ্টি করে। অবশেষে আই ব্লক থেকে মিছিল শুরু হয়ে গাঙ্গুলিবাগানের সেই বিজেপি অফিসের সামনে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সারাটা পথের দৃপ্ত শ্লোগানে এলাকাবাসীরা যথেষ্ট সাড়া দেন এবং কয়েকশো মানুষের মিছিল প্রতিরোধী জনগণের কার্নিভ্যাল হয়ে ওঠে। গানে স্লোগানে লড়াকু বিদ্রোহের বার্তা এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। মৌসুমী ভৌমিকের গানে গলা মিলিয়ে গাঙ্গুলীবাগান মোড় পর্যন্ত মিছিল করে এই প্রতিরোধের কার্নিভ্যাল শেষ হয়।

বাঘাযতীন এলাকায় বেশ কিছুদিন যাবৎ পার্টি ব্রাঞ্চের উদ্যোগে অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে যৌথভাবে ধারাবাহিক পাড়া প্রচার চলছে।হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য ও প্রচারপত্র সহ প্রচার এবং জনে জনে কথা বলা। ৮ ডিসেম্বর গড়িয়া আজাদ হিন্দ লাইব্রেরিতে একটি কনভেনশন এবং ১৭ ডিসেম্বর গড়িয়া মোড়ে প্রচারসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গণসংগঠনগুলির যৌথ উদ্যোগে। ২৪ ডিসেম্বর বিজয়গড় বাজার এলাকায় অনুরূপ প্রচার কর্মসূচী চলে। এনআরসি ও সিএএ-র বিরুদ্ধে এই ধারাবাহিক প্রচার এলাকায় চর্চার বিষয় হয়েছে এবং বিজেপির চক্ষুশুল হয়ে ওঠে। এই অঞ্চলটি কলোনি এলাকা, অর্থাৎ বৃহৎ অংশের মানুষই একদা বাংলাদেশ/পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষ। সত্তর দশকে সমগ্র এলাকাটিই ছিল নকশাল বিপ্লবীদের ঘাঁটি। অন্যদিকে, এখানে আরএসএস-ও একদা উদ্বাস্তুদের মধ্যে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা বহুদিন ধরেই চালিয়ে আসছে। ফলত এই এলাকায় গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলির প্রচারে আশঙ্কিত হয়ে ২২ ডিসেম্বরের হামলাটি করে বসে বিজেপি-আরএসএস, যদিও তেমন জনসমর্থন ওদের নেই। ২৩ ডিসেম্বরের প্রতিরোধ মিছিল স্থানীয় মানুষের সমর্থন পেয়েছে। এই মিছিলে বাঘাযতীন পার্টি ব্রাঞ্চের কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। বিক্ষোভে এপিডিআর নেতা রঞ্জিত শুর সহ আরও কয়েকজনের সাথে সাথে আইসার পক্ষ থেকে ছিলেন রুদ্র প্রভাকর এবং প্রগতিশীল মহিলা সমিতির পক্ষে চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী।

খণ্ড-26
সংখ্যা-42