তথ্যচিত্র ‘ রাম কে নাম’ প্রদর্শনের ওপর পরপর নিষেধাজ্ঞা জারী হল হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে প্রদর্শনের
এই তথ্যচিত্রের প্রেক্ষাপট হল, বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং সাম্প্রদায়িক অভিযান চলার বিরুদ্ধে। এর নির্মাতা প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আনন্দ পট্টবর্ধন। তথ্যচিত্রটি পুরস্কারও পেয়েছে। তবে দূরদর্শনে প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তারপর আদালতের আদেশে দূরদর্শনে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়েছে। বলাবাহুল্য, হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এই তথ্যচিত্রটিকে বরাবর বিষ নজরে দেখে আসছে। নির্মাতা আনন্দ পট্টবর্ধন একজন দৃঢ় ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব। সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিল করার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর নির্মাণ ও অবস্থান গ্রহণের কারণে তাঁকে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলোর চরম হুমকি শুনতে হয়েছে, তাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। তথ্যচিত্রটি হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শনের জন্য উদ্যোগ নেয় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এআইএসএ এবং এসএফআই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সেমিনার হলে প্রদর্শনের জন্য আবেদন জানালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেন না। তখন উদ্যোক্তারা ব্যবস্থা নেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের শ্রেণীকক্ষে প্রদর্শনের। কিন্তু যেভাবেই হোক, তেলঙ্গানা সরকারের পুলিশ খবর পেয়ে জোরজবরদস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে এবং সোজা হানা দেয় প্রদর্শন কক্ষে। বন্ধ করে দেয় প্রদর্শন। শুধু তাই নয়, যেন ‘অপরাধ’ করা হয়েছে ভাব দেখিয়ে এআইএসএ-এসএফআই সংগঠনের চার-পাঁচজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ধৃতরা হলেন বাবাজান, সোনাল, নিখিল, বিকাশ কুমার ও বিকাশ রাজ। এই ঘটনা ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই কয়েক বছর আগে ‘মুজফফরনগর আভি বাকি হ্যায়’ তথ্যচিত্র প্রদর্শনের চেষ্টা করতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ রোহিত ভেমূলা ও তার সাথীদের প্রতি কেমন হাড়হিম ধরানো আচরণ করা হয়েছিল সেকথা মনে পড়িয়ে দেয়।
সরকার চলছে ভূয়ো খবরাখবরে, ঘৃণা ছড়ানোয় এবং তার প্রচার বিকোয় মিডিয়ায়, আর তাই ঘৃণা ছড়ানোর মেশিনারীর কার্যকলাপ নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রকেই ওদের এত ভয়। ওরা ছবি প্রদর্শনের ওপর বেআইনিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফতোয়া জারী করছে, গ্রেপ্তারীর দমন নামাচ্ছে। কলকাতার প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দাবি, তাদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাত ধুয়ে ফেলতে বলছে, আবেদনের কথা নাকি তাদের জানা নেই! এইভাবে সত্যের অপলাপ করে প্রেসিডেন্সীকে আসলে কাদের উপযোগী করে তোলার অপপ্রয়াস চলছে তা আর বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ভাঙ্গতে একদিকে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দাগিয়ে দিয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ও দমন করতে চাইছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাঠামোয় আনুগত্যের বশংবদ তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।