তরাই-ডুয়ার্স জুড়ে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গত ১ জুলাই চা বাগানে দ্রুত ন্যূনতম মজুরি চালুর দাবিতে তরাই ডুয়ার্স জুড়ে বিক্ষোভের কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে জয়েন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে শিলিগুড়িতে নর্থবেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স এসোসিয়েশনের অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়। মালিকপক্ষের অফিসে পৌঁছানোর আগে বিধান রোডে শ্রমিকরা জমায়েত হন। সেখান থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিল শহরের প্রধান অঞ্চলগুলি পরিক্রমা করে মালিকদের এসোসিয়েশন দপ্তরে শেষ হয়। জয়েন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে এআইসিসিটিইউ-র অন্তুর্ভুক্ত তরাই সংগ্রামী চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাসুদেব বসু, সিটুর সমন পাঠক, গৌতম ঘোষ, আইএনটিইউসি-র অলোক চক্রবর্তী মালিক পক্ষের সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত করে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত অন্তবর্তীকালীন ১৭৬ টাকা মজুরি কার্যকরী করার দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিতে জানানো হয় —

১। উল্লেখিত দৈনিক মজুরি ও মাসিক বেতন হারের তিন বছরের মেয়াদকাল ৩১ মার্চ, ২০১৭ অর্থাৎ প্রায় ২ বছর ৩ মাস পূর্বেশেষ হয়েছে। ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে নতুন মজুরি বেতন হার নির্ধারণ বা বলবৎ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে শিল্প সম্পর্কিত নিয়ম অনুসারে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে এযাবৎকাল কার্যত আপনারা অস্বীকার করে চলেছেন।

২। রাজ্যের চা শ্রমিক কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি আইন ১৯৪৮ অনুযায়ী মজুরি ও বেতন হার চূড়ান্তকরণ ও অধ্যাদেশ জারী করতে রাজ্য সরকারের তরফে বিলম্বজনিত কারণে শ্রমদপ্তর থেকে ন্যূনতম মজুরি রূপায়ণ সাপেক্ষে অন্তবর্তীকালীন বৃদ্ধির নিম্ন নির্দেশিকা যথাযথ রূপায়ণের চূড়ান্ত অবহেলা বা ইচ্ছামত রূপায়ণ করে চলছেন, যা এককথায় শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ও চরম বে-আইনী। ১ জানুয়ারি, ২০১৮ থেকে না দিয়ে দৈনিক ১৭.৫০ টাকা বা ৩১.৩.১৭-র মোট মাসিক বেতনের ১৮% বৃদ্ধি আপনি ৩.৩.১৮ থেকে চালু করেন। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ১৫০ টাকার সাথে দৈনিক ১০ টাকা বা মোয় বেতনের আনুপাতিক এবং ১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ১৬০ টাকার সাথে ৭ টাকা বা মোট বেতনের আনুপাতিক কোনোটি আপনি করেননি। ২০১৮ থেকে মজুরির রেশন বাবদ দৈনিক ৯ টাকাও প্রদান করেননি। প্রতিটি অন্তবর্তীকালীন বৃদ্ধির দ্রুত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে প্রাপ্য বকেয়া মজুরি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে।

৩। সংশোধিত ভবিষ্যনিধি ও অন্যান্য আইন ১৯৫২ মোতাবেক উপযুক্ত প্রাপ্য পেনশন থেকে বঞ্চনা বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে সকলের অবসরকালীন বয়স ৫৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬০ বছর করতে হবে এবং কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের কাজ অনুসারে নির্ধারিত গ্রেড এবং গ্রেড অনুযায়ী প্রাপ্য মজুরি বা বেতন দিতে হবে।

৪। সংশোধিত ভবিষ্যনিধি ও অন্যান্য আইন ১৯৫২ অনুযায়ী সকল শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত এবং গ্র্যাচুইটি আইন ১৯৭২ সঠিকভাবে রূপায়ণে অনেকাংশে আপনাদের চরম বে-আইনী ভূমিকায় শ্রমিকেরা তাদের আইনী অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আধার লিংকের নামে প্রাপ্য পিএফ ও পেনশন আটকে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে

৫। মালিকপক্ষের তরফে শ্রম আইন ভঙ্গ করে শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুন্ন করার পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ লুট বাগানের সুস্থ শ্রমসম্পর্কনষ্ট করার বে-আইনী ভূমিকা বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুত বন্ধ অচল চা বাগানগুলিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

৬। শ্রমিক পরিবারের বাসস্থান, চিকিৎসা ও জ্বালানি সংক্রান্ত প্রাপ্য নির্ধারণে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সমগ্র তরাই-ডুয়ার্স জুড়ে দ্রুত এই দাবিগুলির সমাধানে এক বৃহত্তর আন্দোলনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-19