তামিলনাড়ুর কাবেরী নদীর অববাহিকার জেলাগুলিতে হাইড্রোকার্বন প্রজেক্ট নির্মাণের বিরুদ্ধতা করতে এক কনভেনশন হয়ে গেল গত ৬ জুলাই তাঞ্জাভুরে। কনভেনশনটি সংগঠিত করে এআইএআরএলএ এবং এআইকেএম। কনভেনশনে আলোচনার সূচনা করেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের তামিলনাড়ু রাজ্য সম্পাদক এন কে নটরাজন। তিনি জোরের সাথে বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে মোদী ও তাদের এনডিএ জোট তামিলনাড়ুতে যে প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তার পিছনে কারণ ছিল মেথানে, স্টারলাইট প্ল্যান্ট, ৮ লেনের গ্রীন করিডোর ইত্যাদি কর্পোরেট প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে জনগণের লাগাতার শক্তিশালী সংগ্রাম। এখন কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার ফের জনগণের স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে এবং কর্পোরেটদের স্বার্থে কাজ করে চলেছে। এর বিরুদ্ধে তাই শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এই লক্ষ্যে এআইএআরএলএ এবং এআইকেএম প্রচেষ্টাকে সাবাশ জানিয়ে নটরাজন গ্রামীণ মজুর ও কিষাণদের গণ উদ্যোগকে তীব্র করে তোলার কথা বলেন।
কনভেনশন থেকে একপ্রস্থ দাবি গৃহীত হয়। কেন্দ্রের মোদী সরকার ও তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে সরকারের প্রতি তীব্র ধিক্কার জানানো হয়। হাইড্রোকার্বন প্রকল্পটি অবিলম্বে বাতিল করার দাবি উঠেছে। কারণ এই প্রকল্পটি নির্মীত হলে আটটি জেলার প্রায় ১ কোটি মানুষ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এক প্রাথমিক সমীক্ষায় মনে করা হচ্ছে ১৪ লক্ষ একর কৃষি জমি ও ধান উৎপাদনের পুরোপুরি সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাছাড়া পুমবুহার, তরঙ্গমবাড়ি, বেদরান্যাম পাখিরালয়ের মতো ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্যস্থানগুলিও নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে পড়বে। কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোপণ্যের অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতার যুক্তি দিয়ে তেল অনুসন্ধান প্রকল্প তৈরী করতে চাইছে, কিন্তু এর পরিণামে ধান উৎপাদনের সর্বনাশ ঘটানোর মূল্য চোকাতে হবে, আর তা খাদ্য সংকটই ডেকে আনবে।
ভারতে যেখানে তেল ও গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা প্রায় ২০,০০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন, সেখানে উপরোক্ত প্রকল্পে অনুমিত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে খুব বেশি হলে ২০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। কিন্তু তার ফলে ধান উৎপাদনের ক্ষতি হবে ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। এই ক্ষতি কখনই মেনে নেওয়া যায় না।
কনভেনশন উপলক্ষে এআইএআরএলএ-র তামিলনাড়ু রাজ্য সভাপতি এবছর সিপিআই(এমএল) গঠনের ৫০ বছর ও কমরেড চারু মজুমদারের জন্মশতবর্ষের উল্লেখ করে বলেন, এই পার্টি তার জন্মলগ্ন থেকেই শক্তিশালী কৃষক সংগ্রাম সংগঠিত করে এসেছে। আর এহেন কৃষক সংগ্রামই দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। তাই হাইড্রোকার্বনের মতো বহুজাতিক কর্পোরেট প্রকল্পকে থামাতে হলে গ্রামীণ গরিব ও কৃষকদের শক্তিশালী সংগ্রামের পাহাড়প্রমাণ গুরুত্ব রয়েছে। তিনি প্রসঙ্গত বিধানসভায় দেওয়া মন্ত্রীর সারবত্তাহীন প্রতিশ্রুতি সাপেক্ষে সিপিআই, সিপিএমের ৯ জুলাই বিক্ষোভ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমালোচনা করেন। তিনি জোরের সাথে আরও বলেন, মন্ত্রী যতই ছলচাতুরি করে নির্ধারিত কর্মসূচী ভেস্তে দেওয়ার অপচেষ্টা চালান এআইএআরএলএ এবং এআইকেএম প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে।
কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন এআইকেএম-এর তামিলনাড়ু সাধারণ সম্পাদক এ চন্দ্রমোহন। বক্তাদের মধ্যে অারও ছিলেন এআইকেএম-এর তামিলনাড়ু রাজ্য সভাপতি এ সিম্পসন, এআইএআরএলএ রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য রাজশংকর ও ধাবাচেলভেন।