আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দলীয় মদতপুষ্ট অপরাধীরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস ও হিংসার পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। কঠোর হাতে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা না হলে এ রাজ্যের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। চিন্তার বিষয় হল, এই পরিবেশে সাম্প্রদায়িক উন্মাদরা জনগণের মধ্যে বিভেদ, বিদ্বেষ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে চলেছে। এর চরম প্রকাশ দেখা যাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দল অঞ্চলে। নির্বাচনের পর একমাস হয়ে গেল, সন্ত্রাস ও বিদ্বেষের রাজনীতি সমগ্র অঞ্চলের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে চলেছে। সমস্ত এলাকা যেন বাহুবলীদের হাতে চলে গেছে। প্রতিদিন পালা করে বোমাবাজি চলছে। বাজার-হাট, স্কুল-কলেজ প্রায় বন্ধ। চটকলগুলো কিছুদিন চালু হওয়ার পর আবার বন্ধ হওয়ার মুখে। সংখ্যালঘু মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত। অনেকেই ঘরছাড়া হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই সন্ত্রাস চলছে। অপরাধীরা বস্তুত অবাধেই এসব করে চলেছে। এলাকায় শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখতে আমাদের সিপিআই(এমএল) লিবারেশন লাগাতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ জুন আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে এক বিশাল শান্তি মিছিল সমগ্র অঞ্চল পরিক্রমা করে এবং জগদ্দল থানার আইসি-র কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। এরও পূর্বেজেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পার্টির বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্ত পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি স্বাভাবিক জনজীবন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আশু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে আলোচনা করার প্রতিনিধিদলে ছিলেন রাজ্য সম্পাদক পার্থঘোষ, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্ত, এআইসিসিটিইউ-র উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক নবেন্দু দাশগুপ্ত এবং আরও ৩ জন।
প্রস্তাব :
(১) অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হোক।
(২) অঞ্চলে ক্রিয়াশীল সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের বৈঠক ডাকা হোক।
(৩) এসডিও-র উদ্যোগে অঞ্চলের সমস্ত স্কুলক্লাব-ব্যবসায়ী সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের সম্মিলিত শান্তি-সম্প্রীতি মিছিল সংগঠিত হোক।
(৪) প্রশাসনের উদ্যোগে অঞ্চলের নাগরিকদের নিয়ে সম্প্রীতি সভা/বৈঠক সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
(৫) ক্যাম্প করে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি ও দ্রুত জরুরিভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ বন্টন এবং বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করা হোক। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হোক।
(৬) যারা ঘর ছাড়া তাদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা, ঘরহারাদের পুনর্বাসনে প্রশাসন উদ্যোগী হোক।
প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি :
(১) রাজ্য পুলিশের ডিজি সপ্তাহে অন্তত একবার অঞ্চল পরিদর্শন করুন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করুন।
(২) বারুইপাড়া সহ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়া, ধর্মীয় স্থান ও বাজারগুলিতে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করে পাহারার ব্যবস্থা করা হোক এবং তার দায়িত্বে উচ্চপদস্থ অফিসার নিয়োগ করা হোক, যাতে কোনো ঘটনা ঘটলে নীরব দর্শক হয়ে নয়, যিনি তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
(৩) আইবি এবং সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ককে সক্রিয় করা হোক। সমস্ত ফেক নিউজ প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
(৪) বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেফতার করতে তল্লাশি করা হোক।
(৫) অপরাধীদের নামে হুলিয়া জারি এবং প্রয়োজনে সম্পত্তি ক্রোক করা হোক।
(৬) গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে ও অঞ্চলের শান্তি পুনরুদ্ধারের কাজে ‘উদাসীন’ পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
(৭) ধর্মীয় বা প্রাদেশিক বা ভাষাগত বিভাজনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে কড়া হাতে বন্ধ করা হোক।
(৮) এই সংঘর্ষ ও উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করার পিছনে অঞ্চলের যে সমস্ত জনপ্রতিনিধির মদত ও উস্কানি আছে তার প্রমান সংগ্রহ করে সরকারের তরফে মামলা রুজু করা হোক, যাতে তারা ঐ অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারে।