১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর আরায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের আগে বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি ছোট পার্কের উদ্বোধন করা হয় যেটির নামকরণ করা হয় ক্রান্তি পার্ক। ওই পার্কে ভোজপুর আন্দোলনের পাঁচ প্রবাদপ্রতীম নেতার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে যাঁরা হলেন কমরেড জগদীশ মাস্টার, রামেশ্বর যাদব ও রামনরেশ রাম এবং সি পি আই (এম-এল)-এর দুই প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কমরেড জহর ও বিনোদ মিশ্র। ঐ পার্কে একেবারে ১৮৫৭-র প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে ভোজপুরের সমস্ত শহীদদের স্মরণে একটি স্তম্ভ নির্মিত হবে।
বৈঠকের শুরুতে কমরেড বিনোদ মিশ্র এবং শঙ্কর মিত্রর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয় - যে দুজনের মৃত্যু বার্ষিকী পড়ে একই দিনে, ১৮ ডিসেম্বর। আরো যাঁদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয় তাঁরা হলেন—পাকিস্তানের মার্কসবাদী নারীবাদী কবি ফাহমিদা রিয়াজ, তামিলনাড়ুর গাজা ঘূর্ণিঝড়ের বলি মানুষজন, কাশ্মীরের পুলওয়ামায় গণহত্যার শিকার জনগণ, ঝাড়খন্ডে অনাহারে মৃত্যুর শিকার জনগণ, ঝাড়খন্ডে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া আন্দোলনরত মিড-ডে-মিল কর্মী এবং প্যারা টিচাররা, উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে সংঘ বাহিনীর গণপ্রহার স্কোয়াডের হাতে খুন হওয়া পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং এবং কমরেড ডি পি বক্সি, এ এম কোথানডারামন, অজিত সেনগুপ্ত, ভোলা সেন, উমেশ যাদব, রামধনি বৈঠা, অধ্যাপক কবিতা খুরানা (দিল্লী), ডঃ গৌতম নগেন্দ্র বৌধ (পাটনা), বীরেন্দ্র সিং এবং নাম সিং (পাঞ্জাব), রতন লাল মীনা (রাজস্থান), নান্দুলাল (উত্তরপ্রদেশ), কে এম ভট (উত্তরাখন্ড), পশ্চিমবাংলার এ আই এস এ নেতা স্বপ্রোভ ভক্ত। এবং রাঁচিতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর যাঁরা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করা হয়।
ক্রান্তি পার্ক :
ক্রান্তি পার্ক নির্মাণে সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ভোজপুর কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ক্রান্তি পার্ক তহবিলে মুক্তহস্তে অর্থ সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির আবেদনে যে সমস্ত সদস্য ও সমর্থক দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। পার্কের কাজ শেষ করার জন্য আরো অর্থের প্রয়োজন এবং আরো অর্থ দিয়ে পার্ক নির্মাণ কাজে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি সমস্ত কমরেডদের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন :
রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মিজোরাম - এই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের যে ফলাফল হয়েছে এবং ২০১৯ এর অতীব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে যা মোদী সরকার এবং সংঘ-বিজেপি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ধাক্কা দিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি সেই ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিজেপি সমস্ত ধরনের কৌশলেরই আশ্রয় নেয়—শহুরে নকশালবাদের জুজুকে তুলে ধরা এবং মুসলিম বিরোধী উন্মাদনাকে উস্কিয়ে তোলা থেকে সমস্ত ধরনের মিথ্যা প্রচার এবং নির্বাচনী বেনিয়ম ও কৌশলবাজির আশ্রয়ই সে নিয়েছিল। এই সমস্ত প্রচেষ্টাও বিজেপির পরাজয়কে আটকাতে পারেনি এবং রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে তার পরাজয় একেবারে নির্ধারক না হলেও ২০১৩/২০১৪-র উচ্চতম মাত্রার তুলনায় প্রাপ্ত ভোটের অংশ এবং আসন সংখ্যার হ্রাস যথেষ্ট মাত্রার বলেই দেখা গেছে। এটা মিডিয়ার মধ্যে এবং আশাপ্রদভাবে প্রশাসনিক মহলেও কিছুটা ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছে। ২০১৯-এর নির্বাচনে মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে জনগণের ধারণা এবং মনোভাবেও তা এক অনুকূল প্রভাব ফেলেছে।
আমরা রাজস্থানে পাঁচটি এবং তেলেঙ্গানায় দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। তেলেঙ্গানার দুটি আসন এবং রাজস্থানের একটি আসন ছাড়া অন্য আসনগুলোতে আমাদের ভোট অত্যন্ত কম হয়েছে, এক হাজারের নিচে থেকেছে। সি পি আই (এম) রাজস্থানে দুটি আসনে জয়লাভ করে এবং ভালো পরিমাণ ভোট পায়, এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
গণ কর্মসূচি ও সম্মেলন :
মানসা কংগ্রেসের পরবর্তী পর্যায়টি নিবিড় গণ কার্যকলাপ ও আন্দোলনের পর্যায় হয়ে থেকেছে। জন অধিকার যাত্রা এবং রাজ্য সম্মেলন থেকে শুরু করে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া আশা কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কালে বিহারে একের পর এক শক্তিশালী গণ উদ্যোগ দেখা গেছে। বিহারে ২০১৮ সালে জনগণের আত্মঘোষণার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর মধ্যে ছিল ২৭ সেপ্টেম্বরে বিজেপি হটাও মিছিল ও জনসমাবেশ। বিহার রাজ্য সারা ভারত কিসান মহাসভার রাজ্য সম্মেলন এবং আয়ারলার সর্বভারতীয় সম্মেলনও সফলভাবে অনুষ্ঠিত করে যে দুটি সম্মেলনেরই আগেই বড় মিছিল সংগঠিত হয়। শ্রমিকশ্রেণীর ফ্রন্টেও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল ডিটিসি শ্রমিকদের ধর্মঘট, দিল্লীতে সাফাই কর্মীদের জাতীয় কনভেনশন এবং পরিচালন কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধলিপ্সু পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রিকল শ্রমিকদের দীর্ঘস্থায়ী ধর্মঘট। ছাত্র ফ্রন্টের কমরেডরা জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নে তাদের নেতৃত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয় এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনেও আগের তুলনায় বেশি ভোট পায়। ছাত্র ও যুব সংগঠন কর্ম সংস্থানের ইস্যুতে একটি যৌথ কর্মসূচি শুরু করে এবং যুব সংগঠন দীর্ঘ ছয় বছর পর তারজাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত করে। আমরা নভেম্বর মাসে দিল্লীতে কিসান যাত্রাতেও অংশ নিই, তবে আগের তুলনায় আমাদের জনসমাবেশ দুর্বল ছিল। অক্টোবরে ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্তরের এক বৈঠকের মধ্যে দিয়ে এ আই পি এফ-কেও পুনরায় সক্রিয় করে তোলা হয়েছে।
আগামী দিনগুলোতে গণ উদ্যোগের সক্রিয়তার মাত্রাকে আরো উঁচুতে নিয়ে যেতে হবে। ৮-৯ জানুয়ারি সারা ভারত ধর্মঘটের যে ডাক দেওয়া হয়েছে, তার প্রচারে ও তাকে সফল করতে আমাদের সমস্ত গণ সংগঠনকে সার্বিকভাবে যুক্ত হতে হবে। আমাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে একটা সংসদ অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে শিক্ষা ও কাজ এই দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে। এআইপিএফ বেশ কয়েকটি রাজ্য কনভেনশন অনুষ্ঠিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার পর ২০১৯-র নির্বাচনের জন্য নাগরিকদের এক ঘোষণাপত্রকে ধরে এক জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচিগুলো যাতে যথাযথভাবে রূপায়িত হয় সমস্ত রাজ্যের পার্টি সংগঠনকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
২০১৯-এর নির্বাচনী প্রস্তুতি :
বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটি কয়েকটি সম্ভাবনাময় আসনকে চিহ্নিত করেছে যেগুলিতে ২০১৯-এর নির্বাচনে আমরা সম্ভবত প্রার্থী দিতে পারি। ২০১৯-এর নির্বাচনে মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজনীয়তা সামনে থাকায় আমরা নির্বাচনে আমাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকে কয়েকটি মাত্র আসনেই সীমিত রাখব যেগুলিতে আমরা আমাদের সবচেয়ে ভালো ফলাফল সুনিশ্চিত করতে পারব। অন্যান্য আসনে আমাদের বিজেপির বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রচার চালাতে এবং বিজেপি/এনডিএ প্রার্থীদের পরাজয় সুনিশ্চিত করতে আমাদের সমস্ত ভোটকে সমাবেশিত করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা বিধানসভার নির্বাচন। আমাদের প্রস্তুতিকে বুথস্তরের প্রচার ও সমাবেশের উপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। নির্বাচন। আমাদের প্রস্তুতিকে বুথস্তরের প্রচার ও সমাবেশের উপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। যে সমস্ত রাজ্যে আমরা কম করে দুটো লোকসভা নির্বাচন এবং/অথবা বিধানসভা নির্বাচনের ৫ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব, সেই সমস্ত রাজ্যে আমরা সাধারণ নির্বাচনী প্রতীককে (যেটা আশাজনকভাবে হতে পারে পতাকায় তিন তারার আমাদের পুরনো প্রতীক) কাজে লাগাতে পারি।
(ক) কেন্দ্রীয় কমিটি উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবাংলার রাজ্য সম্মেলনে স্বীকৃতি দিয়েছে।
(খ) কমরেড ডি পি বক্সির প্রয়াণে শূন্য হওয়া পদটি পূরণে কেন্দ্রীয় কমিটি উত্তরপ্রদেশের বরিষ্ঠ নেতা এবং আয়ারলার নতুন নির্বাচিত সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রীরাম চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে