ভারতের জনগণের দ্বারা নির্মিত সংবিধান এবং অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকার আজ ফ্যাসিস্ত শক্তির হামলার মুখে। আক্রমণ সংস্কৃতির পরিসরেও। এরকম এক পরিমণ্ডলে আগামী জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গ গণ সংস্কৃতি পরিষদের রাজ্য সম্মেলনকে সামনে রেখে গত ২৭ ডিসেম্বর মধ্যমগ্রাম রবীন্দ্র মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে সমগ্র শ্রোতৃমণ্ডলী এবং মধ্যমগ্রামবাসীকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গ গণ সংস্কৃতি পরিষদের এই অঞ্চলের আহ্বায়ক ডা: দেবাশীষ মুখার্জী। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন নাজিমা ও মেঘনা মজুমদার। এরপরই বারাসাত অন্যমত পরিবেশন করেন বৃন্দগান যার মধ্যে একটি ছিল বসিরহাটের দাঙ্গার চক্রান্ত এবং জনগণের প্রতিরোধের কথা স্মরণে রেখে ‘থাকিলে ডোবাখানা হবে কচুরি পানা ...’। আবৃত্তিকার মুকুলদেব ঠাকুরের ‘বোধন’ আবৃত্তি যেন সবাইকে নতুন সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে উদ্দীপিত করে তুললো। এরপর ছিল লোকশিল্পী প্রভাস দত্তের দুটি গান। অনুষ্ঠানের মাঝে পরিষদের কার্যকরি সভাপতি অধ্যাপক অমিত দাশগুপ্ত ভারতের বুকে ফ্যাসিবাদের উত্থানের এক সরল চিত্র উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, মানুষের কষ্ট সমস্যােক পুঁজি করে ফ্যাসিবাদ মাথা তোলে, বিকৃত ইতিহাস নির্মাণ করে। আমাদেরও তাই পাল্টা পথে নামতে হবে ইতিহাসের অবিকৃত সত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন প্রত্যক্ষ শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রী আনন্দ প্রসাদ রায়। আরও অনেকে কবিতা পাঠ করেন। বিপুল চক্রবর্তীর লেখা একক গান পরিবেশন করেন অনুপ মজুমদার (বাবুনী)। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার অন্যতম আনন্দ উদ্দীপক অনুষ্ঠান ছিল নব বারাকপুরের বাচিক শিল্পী সোমনাথ ঘোষের তিনখানি কবিতা। তাঁর মেঘগম্ভীর কন্ঠে প্রথম শোনালেন পল্লব কীর্তনিয়ার কবিতা, শেষ করলেন নজরুলের কাণ্ডারী হুঁশিয়ার দিয়ে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হল গণ সংস্কৃতি পরিষদের সম্পাদক নীতীশ রায়ের তিনখানি লালন গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর গান সমগ্র শ্রোতৃমণ্ডলী এবং মধ্যমগ্রামবাসীকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে আজ যখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা চলছে তখন লালনই হতে পারবে প্রতিরোধের হাতিয়ার। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শ্রীমতী সুনীতা নাথ।