প্রতিবেদন
পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বৃদ্ধি বনাম বেতন ও নিয়োগ নীতি

সারা দেশ জুড়েই কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-যুব- মহিলারা নিজেদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে নামছে। পশ্চিমবঙ্গেও সেই আন্দোলন দানা বাঁধছে। গত ৮-৯ জানুয়ারির সাধারণ ধর্মঘট সেদিকে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। যদিও ধর্মঘটের বর্ষামুখ ছিল কেন্দ্রের জনবিরোধী সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদি বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সরকারের বিরুদ্ধে, তবুও রাজ্যে ক্ষমতাসীন এক সময়ের জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী সেই ধর্মঘটকে বানচাল করতে দলীয় বাহিনী ও প্রশাসনকে দিয়ে প্রবল চেষ্টা করেছেন। এতদসত্বেও ধর্মঘট যথেষ্টই সফল হয়েছে এই রাজ্যে।

‌আর হবে নাই বা কেন? অন্য রাজ্যের তুলনায় আশা কর্মী, মিড-ডে মিল কর্মী, সর্ব শিক্ষা অভিযানের শিক্ষক সকলেরই ভাতা পশ্চিমবঙ্গে অনেক কম। এক দিকে সমস্ত রাজ্য সরকারি ক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কচ্ছপ গতি, অপরদিকে অতি অল্প বেতনে অস্থায়ী বা চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ রাজ্য সরকারের দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে, সম কাজে সম বেতনের নীতিকে অগ্রাহ্য করেই তা রমরমিয়ে চলছে। সেই দৃষ্টান্তকে শক্তিশালী করে তুলতেই স্কুল কলেজ পাশ করা ছাত্রদের ইন্টার্ণহিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হল। অপরদিকে সর্বশিক্ষা অভিযানের শিক্ষাবন্ধুদের বেতন বহুদিন বাদে বহু আন্দোলনের পরে বাড়ানো হল, কিন্তু তা বেড়ে দাঁড়াল মাসিক ৮৩৯২ টাকা মাত্র। মনে রাখা দরকার মাসিক ন্যুনতম ১৮ হাজার টাকা বেতনের দাবি ছিল গত ৮-৯ জানুয়ারি ধর্মঘটের অন্যতম মূল দাবি।

যে প্রক্রিয়াকে পশ্চিমবঙ্গে রপ্ত করা হচ্ছে তাতে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকুরি বা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের চাকুরি অনতিবিলম্বেই অসংগঠিত ক্ষেত্রে রূপান্তরিত হতে চলেছে। মনে রাখা দরকার, অস্থায়ী বা চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োজিত সিভিক ভলান্টিয়ার, আংশিক সময়ের শিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, আশা কর্মী, মিড-ডে মিলের কর্মীর মত কর্মীরা কোন প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অবসরকালীন সুবিধে পাওয়ারও যোগ্য নন।

এদিকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য গঠিত বেতন কমিশনের রিপোর্টের কোন দেখা মিলছে না। ফলে সরকারি কর্মচারীদের বেতনের ক্ষেত্রেও এক বিরাট ফারাক থেকে যাচ্ছে। কর্মী নিয়োগের ও বেতনের ক্ষেত্রে যখন বৈষম্য ও গড়িমসির প্রাবল্য ঠিক তখনই রাজ্য সরকার রাজ্যে কর্ম সংস্থানের বিষয়ে বিপুল সাফল্যের দাবি করছে।বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে তার কোন মিল নেই। রাজ্য সরকারের ২০১৭-১৮ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা (ইকোনোমিক রিভিউ) অনুযায়ী রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির হার ১১.৫ শতাংশ। কেবল তাই নয়, সরকার তার ফিসক্যাল ঘাটতিকেও নাকি ২০১০-১১ (বামফ্রন্ট আমল) সালের ৪.২৪ শতাংশ থেকে ২০১৭-১৮ সালে ২.৫৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এত বৃদ্ধি সত্বেও কেন নিয়োগের ক্ষেত্রে, বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে এত কার্পণ্য তা বোঝা দায়। তাহলে কী ওই ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্যে কোন অতিশয়োক্তি আছে? পোস্ট-ট্রুথের জমানা তো!

খণ্ড-26
সংখ্যা-4