বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হওয়ার পর মানবসম্পদ উন্নয় মন্ত্রক মিড-ডে মিলে-র বরাদ্দ বাড়ালো, কিন্তু কত জানেন? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে ২২ পয়সা আর উচ্চতর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্যে ৩৩ পয়সা!!! অর্থাৎ প্রাথমিকে শিশু পিছু বরাদ্দ ৪.১৩ টাকা থেকে বেড়ে হলো ৪.৩৫ টাকা, আর উচ্চতর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে হলো ৬.১৮ টাকা থেকে ৬.৫১ টাকা। ভবিষ্যতের ভারতবর্ষের জন্যে কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক সরকার দশমিক ভগ্নাংশের ওপরে উঠতে পারলো না ।
এই মিড-ডে মিল স্কীমে ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার স্কুল ও এডুকেশন গ্যারান্টি স্কিম সেন্টারগুলিতে ১২ কোটি শিশুদের পরিষেবা দেয়া হয়, শিশুদের ঠিক মতো পুষ্টি বিধান করা এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য এবং পুষ্টিবিধান প্রকল্প হিসেবে এটি বিশ্বের বৃহত্তম। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন ২০১৩, দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাঞ্চ স্কুল অ্যাক্ট-এর অনুরূপ প্রকল্প। ২০০১ সালের ২৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের মধ্যবর্তী অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতিটি শিশুকে বছরের অন্তত ২০০ দিন হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ ক্যালোরি, ৮-১২ গ্রাম প্রোটিন সমৃদ্ধ রান্না করা খাদ্য দিতেই হবে।
কোর্ট মানদণ্ড হিসেবে প্রতিদিনের যে খাদ্য তালিকা দিয়েছে তা হলো নিম্নরূপ :
খাদ্য পদ | প্রাথমিক (১ম শ্রেণী-৫ম শ্রেণী) | উচ্চতর প্রাথমিক (৬ষ্ঠ শ্রেণী-৮ম শ্রেণী) |
ক্যালোরি | ৪৫০ | ৭০০ |
প্রোটিন | ১২ গ্রাম | ২০ গ্রাম |
চাল বা গমে প্রস্তুত খাদ্য | ১০০ গ্রাম | ১৫০ গ্রাম |
ডাল | ২০ গ্রাম | ৩০ গ্রাম |
শাকসবজি | ৫০ গ্রাম | ৭৫ গ্রাম |
খাদ্যতেল ও ফ্যাট | ৫ গ্রাম | ৭.৫ গ্রাম |
ওপরে নির্ধারিত খাদ্য শিশুদের দিতে গেলে ছাত্র পিছু কি ২০ টাকার কম সম্ভব? আমরা ধরে নিচ্ছি এই মুহূর্তে এই খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব না, কিন্তু বছরে ২০০ দিন হিসেবে প্রতিদিন নূন্যতম ৩০০ ক্যালোরি আর ৮-১২ গ্রাম প্রোটিন? এটা তো দিতেই হবে, সেক্ষেত্রে ১২-১৩ টাকা শিক্ষার্থী পিছু খরচ করলেই সেটা সম্ভব হতো, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ৩০০০ কোটি টাকার ম্যামথ স্ট্যাচু গড়া হয়, শস্যবীমা যোজনার আড়ালে স্যাঙাতি পুঁজিপতিদের কোটি কোটি টাকা পাইয়ে দেয়া হয়, ১ শতাংশ মানুষের কারবারি সহযোগিতার জন্যে বুলেট ট্রেন তৈরির প্রকল্প হয়, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামান্য মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্যে ২২ পয়সা বা ৩৩ পয়সা বাড়িয়ে তাদের সঙ্গে ছলনা করা হয়।
রতিদিন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গল্প শুনছি আমরা, পাশাপাশি স্যাঙাতি পুঁজিপতিদের হেলতে দুলতে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়ে চলে যেতেও দেখছি (এখানে পালানো কথাটা ব্যবহার করছি না, কারণ এরা কেউ পালায়নি, এদের যেতে দেয়া হয়েছে), আবার শিশুর পাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি ছেলেভুলানো ছলনায় পর্যবসিত হতেও দেখছি, কখনও বা মানসী, পারো, সুখোদের বা সন্তোষীদের আধার সন্ত্রাসে অনাহারের হাত থেকে মরে বাঁচতে দেখছি।
একের পর এক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে দেশ লুটের অপারেশন চলছে, চারিদিক থেকে সমালোচনা ওঠার পরেও কিন্তু এই লুট চলছে, এই অন্যায় চলছে, কিন্তু অনেক লড়াইয়ের পর এই সরকার শিশুর পাতে এমন এক আণুবীক্ষণিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করলো যাতে একমুঠো ভাতও বাড়লো না, এভাবে শিশুদেরকে বঞ্চিত করার কথা কোনো কর্পোরেট সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী সরকারই ভাবতে পারে।