সম্প্রতি প্রয়াত হলেন সত্তর দশকের এক বিপ্লবী কর্মী মধ্য কলকাতার তালতলা এলাকার কমরেড কানু সরকার। অন্তিম বিদায়কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭। নকশালবাড়ির ঝড়ের ডাক শুনে যে তরুণ প্রজন্ম সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বদলের সংগ্রামে উত্তাল হয়েছিল, কানু সরকার ছিলেন তাদেরই একজন। ১৯৭০ সালে তালতলা এলাকায় এক সাদা পোশাকের পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার এক অরাজনৈতিক বন্ধু সহ কানু সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কাশীপুরে গঙ্গার ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে ফেলে দিয়ে আসে। পরে আবার কি ভেবে গুলিবিদ্ধ অচৈতন্য দেহটা তুলে নিয়ে এসে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ফেলে দিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা প্রাণ আছে দেখে জরুরি চিকিৎসা করে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। পুলিশ খবর পেয়ে আবার নিয়ে যায় প্রথমে লালবাজার লক-আপে, তারপরে সেখান থেকে চালান করে প্রেসিডেন্সী জেলে। ১৯৭৪ সালে কানু মুক্তি পান। তাঁর যুবগুণ ছিল দূর্দান্ত, যেমন নির্ভীক, তেমনি মিশুকে। পরবর্তীতে তিনি সিপিআই(এমএল) সত্যনারায়ণ সিং সংগঠন, পিসিসি ইত্যাদির সাথে জড়িত ছিলেন। এলাকায় শহীদ বেদী নির্মাণ, লাইব্রেরী তৈরীর মতো কাজে তিনি ছিলেন অগ্রণী। কুখ্যাত সিদ্ধার্থ রায় যখন পরে চৌরঙ্গী কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিল তখন তার প্রচার গাড়ির সামনে গিয়ে ‘খুনী সিদ্ধার্থ নিপাত যাক’, ‘সিদ্ধার্থ গো-ব্যাক’ শ্লোগান দিয়েছিলেন। সেই কমরেড কানু সরকার অসুস্থতার শেষ ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারলেন না। তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে উত্তরকালের সংগ্রামী সাথীসব আর জনতা।