সেন্টার অব স্টিল ওয়ার্কার্স (এআইসিসিটিইউ), সিটু, গণতান্ত্রিক ইস্পাত এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কাস ইউনিয়ন, জনবাদী সাফাই কর্মচারী ইউনিয়ন (এআইসিসিটিইউ), হিন্দুস্তান ইস্পাত ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়ন, ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা সংহতি কমিটি এবং ভিলাই লোক শ্রীজন সমিতি নিয়মিত এবং ঠিকা শ্রমিকদের সমস্যাগুলির ন্যায়সঙ্গত মীমাংসার দাবিতে এবং শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধি প্রণোদিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শ্রম সম্পর্কিত বিভাগের সামনে যৌথভাবে একদিনের ধর্ণা সংগঠিত করে। ধর্ণা শেষে ভিলাই ইস্পাত কারখানার সিইও-র কাছে ১১ দফা দাবি সনদ পেশ করা হয়।
ধর্ণায় তাঁদের বক্তব্য শ্রমিক নেতারা সরকার ও প্রশাসনের শ্রমিক-বিরোধী নীতিগুলির তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, ‘আচ্ছে দিন’ আনা, জিনিসপত্রের দাম কমানো, প্রতি বছর ২ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু আজ তারা যা করছে তা এই প্রতিশ্রুতিগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকার কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে সুবিধা দিতে এবং জনগণকে নিষ্পেষিত করার লক্ষ্যেই কাজ করছে। এই সরকারের জনবিরোধী নীতির জন্য কৃষক, শ্রমিক, দলিত, সংখ্যালঘু, ছাত্র যুবক এবং নারীসহ সমাজের সমস্ত অংশই বিপর্যয়ের মুখে। ভিলাই ইস্পাত কারখানার সি ই ও-র কাছে পেশ করা দাবি সনদে উল্লেখিত দাবিগুলি হল—
(১) ঠিকা ব্যবস্থা আধুনিক ক্রীতদাস প্রথার এক রূপ; এর অবসান ঘটাতে হবে।
(২) শ্রম আইন এবং নিরাপত্তা বিধিকে কঠোরভাবে রূপায়িত করতে হবে।
(৩) শ্রমিক-বিরোধী সংগতিপরায়ণতার ধারাটির অবসান ঘটাতে হবে এবং দীর্ঘদিন বকেয়া থাকা শ্রমিকদের বেতন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
(৪) সমস্ত পেনশন প্রকল্প দ্রুত রূপায়িত করতে হবে এবং তাতে কোন ধরনের বৈষম্য করা চলবে না।
(৫) ঠিকা শ্রমিকদের পরিচিতি পত্র, হাজিরা কার্ড, বেতন স্লিপ, ইএসআই সুবিধা দিতে হবে এবং প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে তাদের বেতন মিটিয়ে দিতে হবে।
(৬) জলনিকাশী এবং নর্দমার ম্যানহোল পরিষ্কার করার জন্য যন্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৭) সাফাই কর্মীদের গ্যাস-মুখোশ, তোয়ালে, গামবুট, সাবান এবং তেলের মত নিরাপত্তার জিনিসপত্র দিতে হবে।
(৮) ঠিকা শ্রমিকদের ইউনিয়নে সংগঠিত হওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে এবং ইউনিয়ন অনুমোদিত নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
(৯) নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চালানো লিঙ্গ বৈষম্য এবং কর্মস্থলে যৌন হেনস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
(১০) অধিকার আদায় করতে গিয়ে শ্রমিকদের শাস্তির শিকার করে তোলার রীতির অবসান ঘটাতে হবে।
(১১) শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে শ্রমিকদের সমস্যাগুলির যথাযথ মীমাংসা করতে হবে।
১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে যৌথ বিক্ষোভ কর্মসূচী এআইসিসিটিইউ ভিলাই ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শ্যামলাল সাহূ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ৯ অক্টোবর ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টে কোক-ওভেন ১১ নং ব্যাটারিতে গ্যাসের পাইপ লাইন ফেটে যাওয়ায় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে এখনও পর্যন্ত খবর ১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং গুরুতর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক। এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিলাই টাউনশিপে সেক্টর-৬, এআইসিসিটিইউ কার্যালয়ে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মিটিং হয়। বৈঠকের শুরুতে মৃত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ও তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানান হয়। দুর্ঘটনার জন্য প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয় এবং প্ল্যান্টের সিইও-র বিরুদ্ধে এফ আই আর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ১০ অক্টোবর মুর্গা চক, সেক্টর-১, সিইও-র বরখাস্তের দাবিতে যৌথভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। বৈঠকে এআইসিসিটিইউ সহ এআইটিইউসি, হিন্দুস্থান ইস্পাত ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়ন, ভিলাই লোক সৃজন সমিতি এবং ছত্রিশগড় মুক্তি মোর্চা সমন্বয় সমিতি সহ অন্যান্য ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।