বিবৃতি
ভিমা কোরেগাঁও কাণ্ডে গ্রেপ্তারির রায় সম্পর্কে

ভীমা কোরেগাঁও কাণ্ডে মহারাষ্ট্র পুলিশ যে পাঁচ মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি খানউইলকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তাঁদের রায়ে ঐ গ্রেপ্তারি নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দলকে (সিট) দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে অস্বীকার করেছেন। বিপরীতে তাঁরা পুণে পুলিশকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছেন এবং ঐ কর্মীদের গৃহ বন্দীত্বের মেয়াদ আরো চার সপ্তাহ বাড়িয়েছেন, যে সময়কালে ঐ কর্মীরা জামিনের জন্য নিম্ন আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন।

আমরা আনন্দের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ঐ কর্মীদের গৃহ বন্দীত্বের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য পুনে পুলিশকে তদন্ত ছাড়াই কর্মীদের গ্রেপ্তার করা থেকে প্রতিহত করেছে। তবে আমরা মনে করি, বিরোধী মত পোষণ করে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের দেওয়া সংখ্যালঘু রায়ে পুনে পুলিশের চালানো যে বেআইনি কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে কথা বিচার করলে ভোর্টের তত্ত্বাবধানে সিটকে দিয়ে তদন্ত করালেই ভালো হত।

বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের সংখ্যালঘু রায়ে সুপারিশ করা হয়েছে, ''এমন পরিস্থিতির দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যা বর্তমান মামলায় পুনে পুলিশের ন্যায্য ও নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে কাজ করা সম্পর্কে সন্দেহ জাগায়। আদালতের কাছে এমন যথেষ্ট নথি পেশ করা হয়েছে যা নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে।''

সংখ্যালঘু রায়ে যথার্থভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহারাষ্ট্র পুলিশ অভিযুক্তদের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার তথাকথিত এক ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কথা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করে। কিন্তু ''বর্তমান শুনানি চলাকালীন এএসজি-র দিক থেকে এমন কোন প্রয়াস দেখা যায়নি যাতে তিনি ঐ পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনো তদন্ত চলার কথা উত্থাপন করতে পারেন। এর বিপরীতে তিনি সুস্পষ্টরূপেই বলেন যে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঐ ধরনের তথাকথিত কোন চক্রান্তে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ ব্যক্তিকে জড়িত করার কোনো ভিত্তি নেই। পেশ করা পাল্টা হলফনামাও এই ব্যাপারে কোনো প্রমাণ হাজির করে না। এই সমস্ত কিছুই বুনিয়াদি এই প্রশ্নটাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে যে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চালানোর ব্যাপারে মহারাষ্ট্র পুলিশকে বিশ্বাস করা যাবে কিনা।''

বিরোধী মতের রায়ে আরো বলা হয়, ''তদন্তকারী সংস্থা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে, তার ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতার উপর যে ঘটনাটি যথেষ্ট ছাপ ফেলে তা হল গ্রেপ্তার করার সময় পুনে থেকে দুটি পঞ্চ সাক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। ... যে পুলিশ দল গ্রেপ্তারি চালায় তাদের সঙ্গেই যে ঐ সাক্ষীরা গিয়েছিল তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন এই আদালতের কাছে তোলা হয়নি।'' যে সাক্ষীদের পুনে পুলিশ তাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল, তারা কখনই নিরপেক্ষ সাক্ষী হতে পারে না। পুনে পুলিশ আইন এবং পদ্ধতির যে চরম লঙ্ঘন ঘটায় তাতে অভিযুক্ত মানবাধিকার কর্মীদের সংবাদ মাধ্যমে বিচারের এক রাজনৈতিক অভিসন্ধি পরিলক্ষিত হয় এবং তা এটা সম্পূর্ণরূপে অবহিত হয়েই যে, যথার্থ তদন্ত এবং ন্যায্য বিচারে তারা পুরোদস্তুর খালাস পাবে।

খণ্ড-25
সংখ্যা-31