দীর্ঘ সংগ্রামের পরিণতিতে জারি হওয়া ন্যূনতম বেতনের বিজ্ঞপ্তিটি দিল্লী হাইকোর্ট সম্প্রতি বাতিল করে দেয়। এই দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত দিল্লীর লক্ষ লক্ষ কর্মীর জীবনে অনিশ্চয়তার কালো মেঘকে ঘনিয়ে তুলেছে। শ্রমিকরা এমনিতেই কারখানা মালিকদের খেয়ালখুশি এবং সরকারের অবহেলার শিকার, তার ওপর আদালতের এই রায় শ্রমিকদের চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
দিল্লী ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (ডিটিসি) দিল্লী সরকারের অধীন। কিন্তু ডিটিসি আদালতের রায়ের এক কাঠি ওপরে গিয়ে সমস্ত ঠিকা কর্মীদের বেতন হ্রাস করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আইনগতভাবে দেখলে, প্রদত্ত মজুরি ন্যূনতম মজুরির এক টাকাও কম হতে পারে না। ডিটিসি-র পরিচালকমণ্ডলী বলেছে যে, গত মাস পর্যন্ত যে বেতন দেওয়া হয়েছে সেই বেতন তারা হ্রাস করবে। হাইকোর্ট কিন্তু বর্তমান বেতনকে হ্রাস করার কোনো নির্দেশ দেয়নি। বেতন হ্রাস করার যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা আইনের এক্তিয়ারের বাইরে এবং তা শ্রমিকদের অধিকারের উপর আক্রমণ। সুপ্রিম কোর্ট পাঞ্জাব বনাম জগজিৎ সিং (২০১৭) মামলার রায়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছিল যে, 'সম কাজে সম বেতন' প্রতিটি শ্রমিকের অধিকার। কিন্তু ঐ রায় বেরোনোর দীর্ঘদিন পরও ডিটিসি-র মতো সরকারি বিভাগ। প্রতিষ্ঠানে সম কাজে সম বেতন নীতি রূপায়িত হয়নি।
এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত ডিটিসি শ্রমিকদের ঐক্য কেন্দ্র এই শ্রমিক-বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। সরকার এবং ডিটিসি পরিচালকমণ্ডলীর স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ডিটিসি-র কয়েকটি ডিপোর বাইরে ঐ সার্কুলারের কপিও শ্রমিকরা পোড়ায়। ঠিকা শ্রমিকরা ব্যাপক সংখ্যায় ঐ প্রতিবাদগুলিতে অংশ নেন। এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রায় ১০ হাজার ঠিকা শ্রমিক ২৬ আগস্ট গণছুটি নেন; এতদিনের মধ্যে এটাই ছিল ডিটিসি পরিচালকমণ্ডলী এবং দিল্লী সরকারের বিরুদ্ধে ডিটিসি শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিটিসি কর্তৃপক্ষ সকালের দুটি শিফটের সমস্ত স্থায়ী কর্মীদের কাজে ডাকে, এ সত্ত্বেও দিল্লীর রাস্তায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হয় না। প্রতিবাদকে জোরালো করে তুলতে ডিটিসি শ্রমিকরা ৫ সেপ্টেম্বর কালো ব্যজ পরে কাজে যোগ দেন এবং সেটিকে প্রতিবাদ দিবস হিসাবে উদযাপন করেন। তাঁদের দাবিগুলি তুলে ধরার পাশাপাশি ডিটিসি কর্মীরা হরিয়ানা রোডওয়েজ শ্রমিকদের ডাকা ৫ সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটে সমর্থন জানান।