এআইপিএফ ৫ সেপ্টেম্বর পাটনার আইএমএ প্রেক্ষাগৃহে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভার বিষয় ছিল '''ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রাম এবং বিকল্প রাজনীতির প্রশ্ন''। ঐ আলোচনা সভায় সিপিআই(এম এল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁর ভাষণে বলেন, বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য এক নতুন রাজনৈতিক উপলব্ধির প্রয়োজন। যে সমস্ত ছাত্রনেতা ১৯৭৪-র আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন তাদের অর্ধেক আজ বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আজকের স্বৈরতন্ত্রের চরিত্র এবং বিস্তৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ২০১৯ সালে তাদের কিভাবে পরাজিত করা সম্ভব তার জন্য আমাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। ২০১৫ সালে আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে একটা জোট গড়ে উঠতে দেখেছিলাম এবং সেই জোট বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু তারপর কি ঘটল? নীতীশ কুমার জোট ভেঙ্গে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলেন। সেদিনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, সুবিধাবাদী জোট বিজেপিকে কোন আঘাত দিতে পারে না। বিজেপিকে পিছনে হটিয়ে দেওয়ার জন্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করে এমন রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেই দরকার। লাল পতাকা নিয়ে যারা লড়াই করে তারাই বিজেপি-বিরোধী অভিযানের সর্বাপেক্ষা বলিষ্ঠ শক্তি, আর তারাই হল সংঘের হিংসার প্রধান নিশানা। আজ এক নতুন সমীকরণের প্রয়োজনীয়তা আমরা উপলব্ধি করছি। বিজেপির বিরুদ্ধে এক নতুন এবং বড় ধরনের ঐক্য দরকার। বামেরা এবং আর জে ডি ঐক্যবদ্ধ হলে বিহার রাজনীতিতে তা এক নতুন বিষয় হবে। কিন্তু সে ঐক্য কখনই একতরফা হতে পারে না। সম্মানজনক ঐক্য হতে গেলে অপর পক্ষকেও একই ধরনের আন্তরিক হতে হবে। কমরেড দীপঙ্কর আরো বলেন, ভগৎ সিং এবং আম্বেদকরের পথই দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে। সংবিধান হল সেই হাতিয়ার যা দিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ত শক্তিগুলোকে পরাস্ত করতে পারি।
আলোচনা সভায় প্রেম কুমার মানি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকের জরুরি অবস্থা অঘোষিত হলেও মোদীর জরুরী অবস্থা ইন্দিরার জরুরী অবস্থার চেয়ে আরো বিপদজনক। অর্থনীতিবিদ ডি এম দিবাকর জানালেন, এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে; বিমুদ্রাকরণ, জি এস টি এবং কর্পোরেট চালিত দুর্নীতি এই শতকের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি রূপে দেখা দিয়েছে।
আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় গৌরী লঙ্কেশের শহীদত্বের প্রথম বর্ষপূর্তিতে, আর তাই সভার শুরুতে নিহত লেখিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর শুরু করা 'শহুরে নকশাল' অভিযানে যে মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের মুক্তির দাবিতে এক পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে সেদিনের সভার কাজ শেষ হয়।
সেদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন ইনসাফ মঞ্চ নেতা রাজারাম এবং সভা সঞ্চালনা করেন এআইপিএফ-এর আহ্বায়ক সন্তোষ সাহার। সভায় উপস্থিত সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন সারা ভারত কিষাণ মহাসভার সাধারণ সম্পাদক রাজারাম সিং, লেখক সুমন্ত শরণ, সিপিআই(এম এল)-এর রাজ্য সম্পাদক কুণাল, আইএসসিইউএস-এর আহ্বায়ক অশোক কুমার, কবি রঞ্জিব ভার্মা, বিধায়ক মেহবুব আলম, সুদামা প্রসাদ ও অন্যান্যরা। বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার যে চেষ্টা বর্তমান পর্যায়ে চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভা নিয়ে জনগণের মধ্যে যথেষ্ট চর্চাও হয়।